অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"শেষের দিকে কিছু জিনিস (ভারতে) আনতে পেরেছি কিন্তু প্রচুর জিনিস (ইসরাইলে) ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়েছে"


জেরুজালেমে স্ত্রী ও সন্তানসহ মানস শীল
জেরুজালেমে স্ত্রী ও সন্তানসহ মানস শীল

পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা মানস শীল ২০১৮ থেকে গত পাঁচ বছর ধরে ইসরাইল-এর রিহোভোট শহরের বাসিন্দা। সেখানে ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স-এ তিনি পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চ করছিলেন প্রোটিনের স্ট্রাকচার ডিটারমিনেশন নিয়ে। এই বছরই তার গবেষণা শেষ হয়। তিনি পুরোপুরি ভারতে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সঙ্গে তার স্ত্রী ও দু'বছরের শিশুপুত্র। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল-এ হামাস-এর হামলার পর যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে চেনা ছবিটা বদলে যায়। একের পর এক বিমান বাতিল হতে থাকে। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগে কিছু জটিলতা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা মসৃণ হয় ও ভারত সরকারের 'অপারেশন অজয়'-এর মাধ্যমে ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে ফেরেন তিনি গত ১৪ অক্টোবর। জরুরি পরিস্থিতিতে পাঁচ বছরের জীবনের বহু স্মৃতিবিজড়িত সামগ্রী ফেলে আসতে হয়েছে ইসরাইল-এ। এখনও যোগাযোগ রয়েছে বন্ধু, প্রতিবেশীদের সঙ্গে। ট্রমা আছে অবশ্যই। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে চেষ্টা করছেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। ভয়েস অফ আমেরিকা-র সঙ্গে তিনি দূরভাষে কথা বললেন।

মানস শীল
please wait
Embed

No media source currently available

0:00 0:19:37 0:00

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি কত বছর ইসরাইল-এ আছেন?

মানস শীল: আমি টোটাল প্রায় পাঁচ বছর আছি। ২০১৮ থেকে আমি ইসরাইল-এ আছি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ইসরাইল-এর কোন অংশে আপনি/ আপনারা থাকতেন? কী কাজ করতেন?

মানস শীল: এটা ইসরাইল-এর সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট এটার নাম রেহভোট (Rehovot)। একটা ছোট্ট সিটি, ওয়েল নউন ডিস্ট্রিক্ট। তেল আভিব থেকে এটা প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে। ওখানে আমি, আমার ওয়াইফ থাকতাম এবং আমাদের দু বছরের একটি ছেলে আছে । আমার ছেলের ওখানেই রেহভোট জন্ম হয়েছে।

ওখানে আমি পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চ করছি। ওখানে আমার ইনস্টিটিউটটির নাম হলো ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (Weizmann Institute of Science)। এটা রেহভোট-এ একটা রিসার্চ ইনস্টিটিউট। আমি মোস্টলি কাজ করছি প্রোটিনের স্ট্রাকচার ডিটারমিনেশনের ওপরে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: যেখানে হামলা হয় সেখান থেকে আপনি যেখানে ছিলেন সে জায়গার দূরত্ব কতটা?

মানস শীল: যেখান থেকে মেইন রকেট অ্যাটাকগুলো হচ্ছে সেটা হচ্ছে গাজা থেকে এবং গাজা বর্ডার থেকে আমাদের সিটি-টা ওটা প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার ডিসটেন্সে। ওটা যদি আমি বাই রোড সেটা সেরকম ডিসটেন্স এর মধ্যে পড়ে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার এলাকাতে কি কোনরকম হামলা ইত্যাদি হয়েছে মানে আপনি যেখানে থাকছেন?

মানস শীল: হ্যাঁ, হ্যাঁ। বেশ কয়েকবার। প্রথম দিন যখন হামলা শুরু হয় সেদিন সকালবেলা আমরা তো বুঝতে পারিনি। মানে আগের দিন তো কোনো রকম কোনো অ্যালার্ট ছিল না বা ইসরাইল ডিফেন্স-এর পক্ষ থেকে কোনরকম কোন আপডেট ছিল না। জেনারেলি ওরা অ্যালার্ট থাকে এবং আগে থেকে আপডেট দিয়ে রাখে যে এরকম হামলা হতে পারে। কিন্তু এইবার সেটা কোন রকম ভাবে কোন অ্যালার্ট ছিল না। সকালবেলা সাড়ে ছ'টার সময় টানা দু'ঘণ্টা আমাদের শেল্টারে থাকতে হয়েছে এবং সেই টানা দু'ঘণ্টা মানে ৫ মিনিট ১০ মিনিট ছাড়া ছাড়াই হিউজ নাম্বার অফ রকেট এক সঙ্গে ছোড়া হয়েছে। মেইনলি সেন্ট্রাল রিজিওন-এর উপর এবং তেল আবিবকে টার্গেট করে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: হামাস-এর সাম্প্রতিক হামলার সময় সেখানে কী ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বা হতে চলেছে বলে আপনি আপনার অন্যান্য যে পরিচিতজন তাদের কাছ থেকে জানতে পারছেন?

মানস শীল: দেখুন, এরকম হামলা ইসরাইল-এর হিস্ট্রিতে গত ৫০ বছরে হয়নি। লাস্ট যে বড় ওয়ারটা হয়েছিল ইয়ম কিপুর ওয়ার (Yom Kippur War) বলে, সেটাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল কিন্তু সেখানেও ছিল বিটুইন আর্মি। সেখানে সিভিলিয়ানদের উপরে এরকম অ্যাটাক দেখা যায়নি। এখানে মেইন যেটা, আমি আগের রকেট অ্যাটাকও এক্সপেরিয়েন্স করেছি, ২০২১-এ যেটা হয়েছিল। সেটাও বেশ বড় রকম হয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল-এর যে ডিফেন্স সিস্টেম আছে আয়রন ডোম ডিফেন্স সিস্টেম। অ্যান্টি মিসাইল সিস্টেম। সেটা মোস্টলি যে সিভিলিয়ান বা সিটি এরিয়াতে যে রকেটগুলো আসে সেগুলোকে ইন্টারসেপ্ট করতে পারে। তো সেইগুলো থেকে ৪/৫ জন বা ম্যাক্সিমাম ১০জন মারা গেছে এরকম ঘটনা এসেছে এবং ১০০ জন হয়তো ইনজ্যুরড। কিন্তু এবার যেটা হয়েছে রকেট অ্যাটাকের পাশাপাশি টেররিস্ট ইনফিলট্রেশন হয়েছে। সুতরাং এটা একটা অনেক বড় এফেক্ট আমি বলব। এর আগে সচরাচর এই জিনিসগুলো দেখা যায়নি এবং এই টেরোরিস্ট অ্যাটাক(?) মোস্টলি সাউথের দিকে সেন্ট্রালে ছিল এবং ওরা চেষ্টা করছিল যাতে নর্থের দিকে মানে আরেকটু সিটির দিকে মোস্টলি তেল আবিব-এর দিকে ঢোকা যায়। যার জন্য আমরাও খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বারবার খবর দেখছিলাম যে ওখান থেকে টেরোরিস্টের হামলাগুলো দেখা যাচ্ছে বা নিয়ার বাই সিটিতে আসছে কিনা। লাস্ট আমরা যেটা দেখেছিলাম আশকেলান বলে একটা সিটি আছে, যেটা আমাদের জায়গা থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে। সেখানে পর্যন্ত আমি লাস্ট দেখেছিলাম যে টেররিস্ট-এর একটা ইনফরমেশন এসেছিল যেখানে পুলিশ ট্র্যাক করে টেরোরিস্টদেরকে মেরে ফেলেছে। তো সেই পর্যন্ত দেখে আমরা খুব ভয়ে ছিলাম যে কুড়ি কিলোমিটার দূরে জাস্ট এই ঘটনা ঘটেছে, আমাদের সিটিতেও যে কোন টাইমে হয়তো আসতে পারে। এজন্য আমরা মোস্টলি বাইরে বের হতাম না খুব একটা খুব দরকারী কাজে না পড়লে, এবং শহরটা মোটামুটি শুনশান হয়ে গিয়েছিল। যেটা জেনারেলি আমি দেখিনি। আগেরবার রকেট অ্যাটাকের সময়ও পাব বা রেস্টুরেন্টগুলো সবগুলি খোলা ছিল। মানুষের সেখানে দিব্যি খাওয়া-দাওয়া করছিল, গল্পগুজব করছিল এবং রকেট অ্যাটাক হলে তারা শেল্টারে ঢুকে যেত। কিন্তু এইবার পুরো সিটিটায় সন্ধ্যা নামার পর থেকে আর সচরাচর কাউকে দেখা যেত না। খুব দরকার হলে লোকজন গ্রসারির সামনে দাঁড়িয়ে কিছু কিনে হয়তো তাড়াতাড়ি বাড়িতে ঢুকে যেত। আমরা মোস্টলি বাড়িতে ছিলাম। খুব কিছুর দরকার না করলে বাড়ির বাইরে বেরতাম না। এবং ইসরাইল ডিফেন্স থেকে ওরা আপডেট দিয়ে দিত যে উইদিন এইট্টি কিলোমিটার মানে যেটা আমরা লাস্ট পেয়েছিলাম যে গাজা বর্ডার থেকে এইট্টি কিলোমিটার দূরে সবাইকে অ্যালার্ট থাকার জন্য যাতে কেউ খুব একটা না বাইরে বেরোয়। এ ধরনের কিছু আমরা আপডেট নিয়ে সারাক্ষণই ছিলাম।

ভয়েস অফ আমেরিকা: হামাসের হামলার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?

মানস শীল: হ্যাঁ, সে সময় সে সময় আমরা সকালবেলা ঘুমোচ্ছিলাম ৬:৩০ টার দিকে। হঠাৎ করে আনএক্সপেটেড সাইরেন বাজে মানে রকেট অ্যাটাক হলে প্রত্যেকটা সিটিতে সাইরেন বাজে, মানে যে এরিয়ায় রকেটটা আসতে পারে সে প্রজেক্টাইল্লটাকে ওরা চেক করে সাইরেন দেয়। আমার সিটিতে সাইরেন বাজলে তখন থেকে ৯০ সেকেন্ড হচ্ছে আমার টাইম থাকে শেল্টারে যাওয়ার জন্য। আমরা লাকিলি যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকি সেখানে একটা রুম ছিল, শেল্টার রুম । আমাদেরকে জাস্ট নেক্সট রুমে মুভ হয়ে যেতে হয়েছিল। যাদের এই শেল্টার রুম থাকে না তাদের সিঁড়িঘরে দৌড়ে যেতে হয়।

বেশিরভাগ অ্যাপার্টমেন্টে সিঁড়িটাকেই শেল্টার হিসেবে ইউজ হয় । ইনকেস যাদের সিঁড়ি থাকে না তাদের নিচে আন্ডারগ্রাউন্ডে শেল্টার রুম থাকে। সেখানে ছুটে চলে যেতে হয়। প্রচুর প্যানিক অ্যাটাক হয় এ সময়। লোকজন অনেকে পড়ে যায় এবং সেই জায়গাগুলো থেকে অনেকে ইনজুরড হয়। স্পেশালি বাচ্চা এবং প্রেগন্যান্ট উওমেন যদি থাকে তাদের জন্য এটা খুব ভয়ের কারণ।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার পরিচিত কেউ কি সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন? কোন খবর পেয়েছেন কি?

মানস শীল: এবারের ঘটনায় নয়। কারণ আমাদের সিটিতে রকেট অ্যাটাক এবং টেরোরিস্ট অ্যাটাক সেরকমভাবে ডিরেক্ট হিট হয়নি রকেট থেকে। যেটা শুনেছি মানে কিছু বিল্ডিং এর পাশে পড়েছে এবং তাতে কোন হিউম্যান বা কারো কোন ইনজুরড হওয়ার ঘটনা ফর্ম রকেট অ্যাটাক আমি শুনিনি। কিন্তু ওই যে সাইরেন বাজলে পরে চট করে যে প্যানিকটা হয় এবং প্রত্যেকে ছুটে যেতে হয় শেল্টারে, সেখান থেকে বহু লোক ইনজুরড হয়ে যায় এবং রকেট অ্যাটাকের পরেই অ্যাম্বুলেন্সের প্রচুর সাউন্ড পাওয়া যায়। সিটিতে ঘোরাঘুরি করছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজনকে নিয়ে যাচ্ছে, যারা পড়ে গেছে বা যারা ইনজুরড হয়েছে কিন্তু আমার চেনা-জানা সেরকম কারো কথা আমি শুনিনি যারা ইনজুরড হয়েছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: খবর পাওয়ার পর আপনি ইসরাইল-এ কোন বন্ধু বা আত্মীয়র সাথে যোগাযোগ করেছেন কি? তারা কি অবস্থায় আছে বলে আপনি খবর পেয়েছেন?

মানস শীল: হ্যাঁ আমাদের যারা ইন্ডিয়ান বা বাঙালি গ্রুপ আছে, আমরা যাদেরকে চিনি বা আমরা প্রত্যেকের কাছ থেকে আপডেট নিতাম যে ওখানে সিটিতে যদি রকেট অ্যাটাক হতো, ওরা কেমন আছে বা কী রকম কাটাচ্ছে মানে ওভার ফোন এবং মেসেজ করে আমরা খোঁজ নিতাম।

ভয়েস অফ আমেরিকা: তাদের সাথে কি এখনও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন? কিভাবে রাখছেন... ফোন, ইমেইল?

মানস শীল: হ্যাঁ, তবে আমার জানাশোনা ম্যাক্সিমাম, আমার এক বন্ধু যে জেরুজালেম রয়ে গেছে তার বাদে বেশিরভাগ ইন্ডিয়ান বা আমার পরিচিত সার্কেলের যারা আছে যাদেরকে আমি জানি আইদার evacuation flight অথবা তারা পার্সোনালি ফ্লাইটের টিকেট কেটে ইসরাইল থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে এখনো বেশ কিছু ইন্ডিয়ান রয়ে গেছে। মোস্টলি ইমেইল-এ ও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি বললেন ভারতীয় ছাড়া অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন…

মানস শীল: হ্যাঁ, হিউজ নাম্বার অফ সিটিজেন রয়েছে বিভিন্ন দেশের। কারণ আমি যখন evacuation flight নিয়ে এয়ারপোর্টে আসছিলাম দেখছিলাম যে এয়ারপোর্ট-এ সমস্ত দেশে ছোট ছোট কাউন্টার করে ওরা হেল্প করার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। আইদার ইভাকুয়েশন ফ্লাইট অথবা অন্য যে কোন রকম ফ্লাইট অ্যারেঞ্জ করতে পারছে প্রত্যেকটা দেশের সিটিজেনকে ওরা অ্যালার্ট করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ইসরাইল-এ অবস্থানকালে আপনার প্রতিবেশীরা কোন দেশের ছিলেন?

মানস শীল: আমি যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম তাতে যেহেতু ওটা আমাদের ইনস্টিটিউটের অনেকটা শেয়ার ছিল ওই অ্যাপার্টমেন্টে অনেক ইন্টারন্যাশনাল লোকজন থাকতো। যেমন আমি চিনি - রাশিয়ার লোকজন ছিল, ইথিওপিয়ার লোকজন ছিল, ইউ কে-র বেশ কিছু লোকজন ছিল এবং ইন্ডিয়ান তো প্রচুর ছিল, চায়নার লোকজন ছিল।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার যারা বন্ধু বা পরিচিত ছিলেন তাদের সাথে কি আপনার যোগাযোগ আছে এখন?

মানস শীল: হ্যাঁ আমার বেশ যোগাযোগ আছে এবং ওদের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে। ওরাও যথেষ্ট মেন্টাল স্ট্রেসে আছে। আমরাও সে অবস্থায় আছি। জাস্ট একটু কথা বলা মানে সেম জায়গা থেকে আমরা এসেছি, কতটা রিলিফ আমরা ফিল করছি, কতটা সেফ এখন লাগছে। বেশ কথাবার্তা হচ্ছে আমাদের মধ্যে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি ভারতে ফিরলেন কবে, কোন পরিস্থিতিতে ও কীভাবে? ভারতীয় দূতাবাসের সাথে কিভাবে এটা arrange করলেন?

মানস শীল: একচুয়ালি আমার আসার কথা ছিল ১২ তারিখে। এ ঘটনা তো বেশ কিছুদিন ধরে ঘটছে। আমার ১২ তারিখে একটা ফ্লাইট-এর টিকিট কাটা ছিল যেটা আমি পার্সোনালি কেটেছিলাম ফিরে আসার জন্য। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সমস্ত এয়ারলাইন্সগুলো তাদের ফ্লাইটগুলোকে ক্যান্সেল করে দিচ্ছে। কারণ এই গাজা থেকে যে রকেটগুলো যাচ্ছে সেগুলো এয়ারপোর্টটাকে অ্যাটাক করছে । কারণ আমি যখন দেখতে পাচ্ছি যে ম্যাপে যে আপডেট পাচ্ছি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেল আভিবের পাশাপাশি ওরা এয়ারপোর্টে অ্যাটাক করছে। সেইজন্য সমস্ত ফ্লাইট যা ছিল সেগুলো ক্যানসেল করে দিয়েছিল। একমাত্র ইসরাইলি এয়ারলাইন্স, ওরা ফ্লাইটগুলো চালু রাখছিল। আমার ক্ষেত্রে যেটা, যতগুলো ফ্লাইট ছিল খুব একটা বেশি অপশন পাচ্ছিলাম না। চলে আসার জন্য যখনই ফ্লাইট পাবো ভাবছিলাম আমি বেরিয়ে ফিরে আসবো কিন্তু সেই অপশন খুব একটা ছিল না আর আমাদের ক্ষেত্রে আর একটা অসুবিধা ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট । অন্য ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলোতে ঢুকে আমি বেশিক্ষণের জন্য থাকতেও পারবো না যে আমি ঢুকে অন্য কোথাও যাব বা অন্য দিক দিয়ে যাব। ফলে শুধু ট্রানজিটের জন্য যা অপশন আমাকে সে অপশনই দেখতে হতো। আমাদের ক্ষেত্রে বেস্ট অপশন ছিল দুবাই হয়ে ফিরে আসা। সেগুলো যখন হচ্ছিল না তখন কন্টিনিউ আমরা এমব্যাসিতে যোগাযোগ করছিলাম কিভাবে কোন ফ্লাইট, কোন কিছু আছে কিনা। এমব্যাসি থেকে প্রথম দিকে ওরা খুব একটা সিরিয়াসলি নেয়নি। পরের দিকে প্রত্যেক নাম্বার অফ স্টুডেন্টস আমরা প্রত্যেকে যে ফর্ম ইউজ করে এমব্যাসিকে পাঠাই যে আমরা এত নাম্বার অফ স্টুডেন্ট। প্রত্যেকটা ইউনিভার্সিটির থেকে তারা ফিলাপ করে পাঠায় যে আমরা এখান থেকে ইভ্যাকুয়েটেড হতে চাই। আমরা বের হতে চাই। আমি আশা করি মানে অন্যান্য যারা ওয়ার্কার আছে যারা অন্যান্য সেক্টরে আছে তারাও সেম জিনিস করেছে। তারপরে এমব্যাসি সেই evacuation flight চালু করেছে এবং প্রথম থেকে যখন হচ্ছিল কোন ফর্মটা ইউজ করতে হবে। আমরা বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে অ্যাডেড।

যেমন আমাদের ইনস্টিটিউট এর একটা গ্রুপ আছে প্লাস ইন্ডিয়ান স্টুডেন্ট এর ইসরাইলে একটা গ্রুপ আছে এবং প্রত্যেকটা ইনস্টিটিউটের এক একটা গ্রুপ আছে এবং বিভিন্ন ছোটখাটো গ্রুপ আছে যার মধ্যে থেকে নানারকম ভাবে নানান ফরম আসছিলো যেগুলো ফিলাপ করতে হবে আমাদেরকে। এই ফরমটা ফিলাপ করলে পরে আধঘন্টা, দু ঘন্টা পরে আরো একটা ফরম আসছে। এবং আমরা যে কটা ফরম পাচ্ছিলাম পাগলের মত ফিলাপ করে যাচ্ছিলাম। কারণ আমরা জানতাম না কোন ফরমটা আল্টিমেটলি অ্যাম্বাসির কাছে গিয়ে পৌঁছবে। তারপরে যখন আমাদের প্রথম কেউ একজন কল পেতে শুরু করলো এ্যাম্বেসি থেকে যে আমরা evacuation flight চালু করছি এবং আমরা কল করব তখন আমরা আস্বস্ত হলাম যে কিছু প্রসিডিউর হচ্ছে এবং এম্বাসি থেকে যেটা করতে শুরু করল যে কিছুজনকে জানালো যে আজকের ফ্লাইট বা নেক্সট ডের ফ্লাইটে আপনি যেতে পারবেন। কিন্তু তারপরও ওরা যেটা করল যে কল করে কনফার্ম করতো এবং সেই সময় ওরা কলের টাইমটাও ছিল রাত বারোটার পরে । যেহেতু এটা একটা ইমারজেন্সি, বুঝতে পারছি কিন্তু ওই টাইমে অনেকে হয়তো শুয়ে পড়েছে যারা কল মিস করতো এবং কল মিস করা মানে ফ্লাইট মিস করা। যেহেতু কনফার্ম করত না। সেগুলো নিয়েও আমরা প্রচন্ড টেনশনে ছিলাম যে এম্বাসি থেকে কল কখন আসবে এবং শেষের দিকে দু-তিন দিন পর থেকে এসিউর করতে শুরু করল এম্বাসি যে আমরা যে কয়জনের রেজিস্ট্রেশন করেছি আমরা সবাইকে ইভ্যাকুয়েট করব বাট স্লোলি। ওয়ান বাই ওয়ান হবে। সে ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে টাইম লেগেছে। আমি যেমন তৃতীয় দিনে আমার ফ্লাইটটাকে পেয়েছি এবং তার আগে অলরেডি দুটো দিন ফ্লাইট চলে গেছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: তারপরে আপনি কল পেলেন এবং এসে পৌঁছালেন দিল্লিতে?

মানস শীল: রাইট

ভয়েস অফ আমেরিকা: এবার দিল্লি থেকে কলকাতা আসার ব্যাপারটা যদি একটু বলেন।

মানস শীল: দিল্লি থেকে আমি নিজেই একটা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট বুক করে রেখেছিলাম। যেহেতু জানতাম যে তেল আভিব থেকে ফ্লাইটটা রাত নটা দশটার দিকে ছাড়ে। সেই অনুযায়ী এখানে দিল্লিতে সকালে পৌঁছানোর কথা, আমি দুপুরের দিকে একটা ফ্লাইট বুক করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমাদের ফ্লাইটটা তেল আভিব থেকে অনেকটা আর্লি ছেড়েছিল, সাড়ে পাঁচটার দিকে ছেড়েছিল। তো এখানে আমরা রাতে দেড়টা দুটোর দিকে এসে পৌঁছেছিলাম। সেখানে আমি যেটা দেখেছিলাম এবং যেটা খুব ভালো লাগলো, বিভিন্ন স্টেট থেকে ওরা হেল্প করার জন্য ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রত্যেকটা স্টেটে রিপ্রেজেনটিভ যারা ফ্লাইটে নামছে তাদের প্রত্যেককে সেই স্টেট-এর যে হাউজিং বা যেটা আমাদের স্টেটে আছে, যেমন পশ্চিমবঙ্গের বঙ্গভবন বা ওয়েস্ট বেঙ্গল গভমেন্টের যে ডিপার্টমেন্ট আছে ওরা সেখানে নিয়ে গিয়েছিল এবং রাতে থাকার ব্যবস্থা খাওয়ার ব্যবস্থা সেগুলো করে দিয়েছিল। নেক্সট দিন বা পরে যার যে ফ্লাইট আছে সে অনুযায়ী ওরা গাড়ি দিয়ে এয়ারপোর্টে যাওয়া-আসার জন্য হেল্প করেছিল। তো সেটা নো ডাউট একটা বেশ বড় হেল্প।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার সাথে আর ক'জন ভারতীয় ফিরে এসেছে?

মানস শীল: আমরা যে ফ্লাইটটা এলাম সেটায় অলমোস্ট ২২০ জন হবে মানে আমি অ্যাপ্রক্সিমেটলি বলছি। সেটা প্লাস মাইনাস টুয়েন্টি হতে পারে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার পরিবার আপনার সঙ্গে ফিরে এসেছে?

মানস শীল: হ্যাঁ ওরা দুজনে একসঙ্গে ফিরে এসেছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনাকে যাবার আর কোন সম্ভাবনা রয়েছে নাকি পুরোপুরি চলে এলেন এখানে?

মানস শীল: আমার ক্ষেত্রে আমি কমপ্লিট করে পুরোপুরি চলে এলাম। কারন আমার পাঁচ বছর কমপ্লিট হয়ে গেছে ওখানে। তো এটা আমার ফাইনাল ডিপার্চার ছিল। কিন্তু আমি আমার বন্ধুবান্ধব যারা এসেছে এবং যাদেরকে আমি চিনি তারা প্রত্যেকে আবার ওখানে হয়তো ব্যাক করবে এবং প্রত্যেকেই ওয়েট করছে কখন একটু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটার উপর ডিপেন্ড করে ওরাও হয়তো ব্যাক করবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এই যে এরকম জরুরি পরিস্থিতিতে ফিরে আসতে হল আপনার কি আপনাদের সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যা আপনাদের আনার ছিল আনতে পেরেছেন সঙ্গে করে?

মানস শীল: না না সেটা একদমই না। কিছু জিনিসপত্র আমি শিফটিং করে পাঠিয়েছি আসার সময়। আমাদের পাঁচ বছরের ওখানে সংসার। পাঁচ বছরের জিনিসপত্র, সেগুলো নিয়ে যথেষ্ট ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট থাকে। সেই জিনিসগুলো জাস্ট আসার সময় আমরা জানতামও না যে কতটা কি লাগেজ পাব evacuation flight-এ কিংবা কোন ফ্লাইটে আমরা যেতে পারবো। শেষের দিকে কিছু জিনিস আমরা আনতে পেরেছি কিন্তু প্রচুর জিনিস আমাদেরকে ধরে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়েছে। কিছু জিনিস আমরা নেইবারদেরকে দিতে পেরেছি, যারা ওখানে ছিল তাদেরকে বলেছি নিয়ে নেয়ার জন্য। বা অন্য যারা বিভিন্ন রকম গ্রুপ আছে ফেসবুকে তাদেরকে সেখানে পোস্ট করেছিলাম যে কেউ কিছু যদি নিতে চায় জাস্ট দিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু শেষের দিকে এত কিছু জিনিস ছিল যেগুলো না আনতে পেরেছি। ভেবেছিলাম নিয়ে আসবো। সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসতে হয়েছে বা বাসার সামনে রেখে দিয়ে এসেছি কিছু জিনিস। ওখানে সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস খুব ইউজ করে। রাস্তায় রেখে দেয় যদি কেউ ব্যবহার করতে চায়। তো আমরা সেরকম রাস্তায় রেখে দিয়েছি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এরকম জরুরি পরিস্থিতিতে ফিরে আসার পর আপনি কি সরকার বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন ট্রমা সাপোর্ট নিচ্ছেন?

মানস শীল: এখনো পর্যন্ত সেরকম কোনো সাপোর্ট পাইনি বা আমরা এখনো নেইনি। আমরা জাস্ট এখন চেষ্টা করছি বেশিরভাগ সময় ফ্যামিলির সঙ্গে বাড়িতে একটু সময় কাটানোর জন্য পুরো এই পরিস্থিতি থেকে আলাদা হয়ে। সেটা অবশ্যই যদি যেই সাপোর্ট বা কোন কিছু হয় কারণ আমি জানি হয়তো আমার ক্ষেত্রে নয় বা আমার ক্ষেত্রে কিছুটা কিন্তু আমার বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধবদের জানি যারা বেশ ভাল রকমভাবে ট্রমাটাইজ ছিল। ইসরাইল থেকে জাস্ট বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পিঠে শুধু একটা ব্যাগ নিয়ে ওরা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য রেডি ছিল। কারণ এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটা মানুষ মারাত্মক রকম ভাবে বিচলিত হয়ে যায় এবং কে কতটা বিচলিত হয়ে যায় সেটা ইন্ডিভিজুয়াল লেভেল-এর উপর ডিপেন্ড করে। আমি দেখেছি বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব যারা মারাত্মক রকম ভাবে ট্রমাটাইজ হয়ে গেছে। তারা নিজেরাও এখন ফ্যামিলির মধ্যে থাকছে আমি এক্সাক্টলি জানিনা তারাও হেল্প নিচ্ছে কিনা কারো কাছ থেকে। কিন্তু গভর্নমেন্টের পক্ষ থেকে বা অন্য কারো পক্ষ থেকে সেই হেল্প আমরা কিছু পাইনি। কিন্তু আমাদের ইনস্টিটিউট আমি যেটা ছিলাম সেখান থেকে ওরা ফুল সাপোর্ট দিচ্ছিল। ওদের সোশ্যাল ওয়ার্কার যারা এবং সাইকিয়াট্রিস্ট প্রত্যেকে ছিল ওনারা ফ্রি ছিলেন যে আমরা যেকোনো সময়ে ওনাদের সঙ্গে সাপোর্ট নেওয়ার জন্য কথা বলতে পারি। সেটা ইনস্টিটিউট-০ এর পক্ষ থেকে আমাদের খুব সাপোর্ট ছিল ।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ইসরাইল ফেরত অন্য ভারতীয়দের/বাঙ্গালীদের সাথে আপনি কি যোগাযোগ রাখছেন?

মানস শীল: হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু জন আমি যাদেরকে চিনি তাদের সঙ্গে আমি কানেক্টেড এবং তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে যে ওরা কেমন আছে। এই পরিস্থিতির ভেতর থেকে বের হয়ে এসে কতটা রিলিফ লাগছে সেগুলো নিয়ে আমাদের কথা হয়। এখনো পর্যন্ত আমি সবাইকে কল করে উঠতে পারিনি। আমিও জাস্ট এসেছি একদিন হয়েছে। আমার দুই-তিনজন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আরো প্রচুর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু যারা আমার খোঁজ নিয়েছে অনেকজনকে আমি কল করতে পারেনি। আস্তে আস্তে সবার সঙ্গে কথা বলবো। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমি অনেকের সাথে কথা বলতে পারিনি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ইসরাইল থেকে যারা ফিরেছেন সেরকম বাঙালি বা ভারতীয় তাদের সঙ্গে একই রকম যোগাযোগ রয়েছে আপনার?

মানস শীল: হ্যাঁ, প্রত্যেকের সঙ্গেই আমার হোয়াটসঅ্যাপে অল্প একটু টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু ইন ডিটেইলস কথাবার্তা বলার মত আমিও চাইছি না তাদের সঙ্গে এখনই ডিরেক্টলি কথাবার্তা বা ডিসকাশন করতে। আমিও চাইছি ওরা এখন কয়েকদিন পিসফুলি কাটাক তারপর হয়তো আমরা একসঙ্গে মিট করব কোথাও বা কথাবার্তা বলব, সেগুলো আমাদের প্ল্যান আছে।

XS
SM
MD
LG