অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কুলেবার নয়াদিল্লি সফর: ভারত কি ইউক্রেনে শান্তি আনতে সাহায্য করতে পারবে?


ফা্ইল- ক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্যমিত্রো কুলেবা ইউক্রেনের কিয়েভে মলদোভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিহাই পপসোইয়ের সাথে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। ১৩ মার্চ, ২০২৪
ফা্ইল- ক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্যমিত্রো কুলেবা ইউক্রেনের কিয়েভে মলদোভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিহাই পপসোইয়ের সাথে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। ১৩ মার্চ, ২০২৪

ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তারা ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছেন পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য, এবং একই সাথে এশিয়ার এই বিশাল শক্তিধর রাষ্ট্রটিকে তাদের শক্রপক্ষ রাশিয়ার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে আনার আশা করছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক ভাবেই ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দ্যমিত্রো কুলেবা ২৮-২৯ মার্চ ভারত সফর করেন। এটি সাত বছরের মধ্যে কোনও ইউক্রেনীয় কূটনীতিকের ঐ দেশটিতে প্রথম সফর। এর কয়েকদিন আগে দু'দেশের প্রেসিডেন্ট ফোনে কথা বলেন।

ভারতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্ডার পলিশশুক ভিওএ-এর সাথে একটি সাক্ষাত্কারে বলেন — কুলেবার সফরের প্রাথমিক কাজ ছিল উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সহযোগিতা পুনঃস্থাপন করা।

দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে যে একজন উচ্চপদস্থ ভারতীয় কর্মকর্তা ইউক্রেনকে সমর্থন করার লক্ষ্যে এই গ্রীষ্মে সুইজারল্যান্ডে একটি বৈশ্বিক শান্তি সম্মেলনে অংশ নিবেন।

তিনি বলেন, ভারত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্ভাব্য ইউক্রেন সফরের বিষয় নিয়েও কাজ করবে এবং অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের পারস্পরিক সফরের আয়োজন করবে। দেশ দু’টি ২০১৮ সাল থেকে নিষ্ক্রিয় ভারত-ইউক্রেন আন্তঃসরকারি কমিশনের কাজ পুনরায় শুরু করতেও সম্মত হয়।

কুলেবা সামাজিক মাধ্যম, এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, দেশ দুইটি “আমাদের দেশগুলির মধ্যে রাশিয়ার দ্বারা শুরু করা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আগে যে সহযোগিতার মাত্রা বিদ্যমান ছিল তা ফিরিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে,"।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) এর সাথে একটি সাক্ষাত্কারে, কুলেবা বলেন যে, ভারত ইউক্রেনের সাথে বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনে অংশগ্রহণ করে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার সাথে একটি সাক্ষাত্কারে, কুলেবা ভারতের রাশিয়ার তেল আমদানির প্রতি ইউক্রেনের অবস্থানকেও নমনীয় করেন। তিনি বলেন যে, ইউক্রেন এতে আপত্তি করে না কারণ চুক্তিটি এমনভাবে গঠন করা হয়েছিল যাতে রাশিয়া “ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অস্ত্র উৎপাদনে" তাদের লভ্যাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে না।

ভারত-ইউক্রেন সম্পর্কের অসঙ্গতি

ইউক্রেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ কিইভ-মোহেলার একজন ভারতীয় প্রভাষক মৃদুলা ঘোষ দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে দুটি প্যারাডক্সের দিকে ইঙ্গিত করেন৷

তিনি ভিওএ-কে বলেন, প্রথমত, ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা অনুমোদন করতে পারছে না এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনের প্রতি সহায়তাকে নির্বাচনী রাজনীতিতে দরকষাকষির মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ভারতে পররাষ্ট্রনীতি নির্বাচনী বিতর্কের অংশ নয় কারণ এটি নিয়ে ভোটাররা খুব কমই আগ্রহী।

দ্বিতীয়ত, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যখন রাশিয়া ভারতীয় সমাজে তার প্রচার ও প্রভাব বাড়িয়ে দেয়।

রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী?

নয়াদিল্লিতে, কুলেবা ভারতকে শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

তবে পর্যবেক্ষকরা সংশয় প্রকাশ করেন যে ভারত আসলেই ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতা করতে পারবে কিনা বা যুদ্ধ শেষ করতে মস্কোকে প্রভাবিত করতে পারবে কিনা।

ভারতের হায়দ্রাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন কনসাল জেনারেল, ক্যাথরিন হাড্ডা সংশয় প্রকাশ করেন যে ভারত একটি শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করবে কিনা যেখানে এক পক্ষ অনুপস্থিত কারণ রাশিয়া ইউক্রেনের প্রস্তাবিত শান্তি সূত্রের ভিত্তির উপর অনুষ্ঠিত কোনও শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে না।

একই লেখায় হাড্ডা বলেন, "ভারত জোর দিয়ে বলেছে যে দেশটি উভয় পক্ষের অনুরোধেই [কেবলমাত্র] মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করবে,"

পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনের শুরু থেকে, ভারত রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের প্রতি কোনও নিন্দা জানায়নি, জাতিসংঘে ইউক্রেন-সম্পর্কিত প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাযগুলোতে যোগ দেয়নি।

XS
SM
MD
LG