অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইরান এবং ইসরাইলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মোড়, এখন কী হবে?  


তেহরানের রাস্তায় ইরানি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রর বিলবোর্ড-এর সামনে পথচারী। ফটোঃ ১৫ এপ্রিল, ২০২৪।
তেহরানের রাস্তায় ইরানি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রর বিলবোর্ড-এর সামনে পথচারী। ফটোঃ ১৫ এপ্রিল, ২০২৪।

রবিবার ভোরে ইসরাইলের উপর ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সবার দৃষ্টি এখন ইসরাইলের উপরঃ তারা কি আরও সামরিক পদক্ষেপ নিবে, যখন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতির মাধ্যমে আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে?

ইরান বলেছে, এ’মাসের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে তাদের কূটনৈতিক ভবনে হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে তারা ইসরাইলে আক্রমণ করেছে।

দামেস্কে যে হামলায় ইরানের আধা-সামরিক রেভলুশনারি গার্ড বাহিনীর দু’জন জেনেরাল নিহত হয়, সেটা ইসরাইলি বিমান থেকে করা হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়।

ইসরাইল বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সাহায্যে ইরানের নিক্ষেপ করা ৩০০’র বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রর প্রায় সবগুলিকেই ভূপাতিত করেছে।

একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের একটি বিমান ঘাঁটিতে আঘাত করে তবে তাতে খুব বেশি ক্ষতি হয় নি, ইসরাইল বলছে।

তারপরও, রেভলুশনারি গার্ড বাহিনীর প্রধান তাদের অভিযানকে সফল বলে বর্ণনা করেন।

গবেষণা কেন্দ্র ইউএস ইন্সটিটিউট অফ পিস-এর মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা স্টাডিজ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোনা ইয়াকুবিয়ান বলছেন, ইরান দামেস্কে হামলার প্রতিশোধ নেয়া এবং ইসরাইলকে আরও হামলার জন্য উস্কে দেয়ার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সক্ষম হয়েছে।

“এই মুহূর্তে দুজনের (ইরান এবং ইসরাইল) পক্ষেই সম্ভব বিজয় দাবী করা এবং খাদের কিনারা থেকে সরে আসা। বিশেষ করে যেহেতু ইসরাইলে কোনও বেসামরিক লোক মারা যায় নি,” ইয়াকুবিয়ান বলেন।

ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ।
ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ।

আরবদের সাথে জোট

ইসরাইলে কট্টরপন্থিরা পাল্টা জবাব দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু অন্যান্যরা সংযত হবার পক্ষে মতামত দিয়েছে। তারা বলছে, ইসরাইলের উচিত আরব দেশগুলির সাথে তার সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়া।

“আমরা একটা আঞ্চলিক জোট গঠন করবো এবং ইরানের কাছ থেকে একটি মূল্য আদায় করবো, যার সময় এবং পদ্ধতি আমাদের সুবিধা অনুযায়ী হবে,” ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন।

বিশ্লেষণকারীরা বলছেন, ইরান একটি বার্তা দিয়েছে যে, প্রয়োজনে তারা সংঘাত আরও বিস্তৃত করতে প্রস্তুত, এবং ইসরাইলের সাথে ‘ছায়া যুদ্ধের’ নিয়মাবলী তারা বদলে দিয়েছে।

“এটা ছিল একটা সাবধানতা বার্তা, যার সারমর্ম ছিল ইসরাইল যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে তার পরিণতি থাকবে,” বলছেন সুইডিশ ডিফেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাটেজিক উপদেষ্টা ম্যাগনুস র‍্যানস্টরপ।

গাজার যুদ্ধ যে গোটা অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারে, ইরানের আক্রমণ সেই শঙ্কা আবার সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু ইরান বলছে যে তারা সমগ্র অঞ্চলে পুরদমে যুদ্ধ চাইছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরআব্দোল্লাহিয়ান সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (প্রাক্তন টুইটার)এক বার্তায় বলেছেন, আক্রান্ত না হলে এই সময়ে ইরানের “আত্মরক্ষামূলক অভিযান চালিয়ে যাবার কোনও ইচ্ছা নেই।”

'ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি'

ইরান জোর দিয়ে বলেছে তারা ইসরাইলের সেইসব স্থাপনা লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছে যেগুলো দামেস্ক হামলায় জড়িত ছিল। কোনও বেসামরিক বা অর্থনৈতিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়ে নাই।

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল অভিযান শুরু করার পর থেকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো সামরিক কার্যকলাপে জড়িত ছিল, আর তেহরান দূরত্ব বজায় রাখছিল।

লেবাননের হেযবল্লাহ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট নিক্ষেপ করে। ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ করে। ইরাকে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট ইরাক এবং সিরিয়ায় আমেরিকান সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

এখন, ইরান তার সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর উপর নির্ভর না করে “ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি” করতে প্রস্তুত, বলছেন কারনেজি মিডল ইস্ট সেন্টার-এর পরিচালক মাহা ইয়াহিয়া।

কিন্তু তারপরও, ইরান শুধু অল্প কিছুটা ঝুঁকি নিয়েছে।

“তারা যথেষ্ট সতর্কবাণী দিয়েছে যে এই আক্রমণটি আসছে, এবং আমার মনে হয় তারা জানতো যে তাদের ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইল পৌঁছানোর আগেই ভূপাতিত করা হবে,” ইয়াহিয়া বলেন।

তিনি আরও বলেন যে, গাজায় তার যুদ্ধের ধরন নিয়ে ইসরাইল সম্প্রতি যে চাপের মুখে ছিল, সেটা এখন বদলে আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানোর দিকে চলে গেছে।

ইয়াকুবিয়ান বলছেন নতুন করে সংঘাত বিস্তার রোধ করতে ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ইসরাইলি গবেষণা কেন্দ্র ইসরাইল-ইউএস রিসার্চ প্রোগ্রাম-এর প্রধান এলদাদ শাভিট বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সহ ইসরাইলের মিত্ররা চায় না যে ইসরাইল আর কোনও সামরিক পদক্ষেপ নিক।

হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি মুখপাত্র জন কারবি টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসিকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চান না যে আঞ্চলিক সংঘাত বিস্তৃত হোক বা ইরানের সাথে যুদ্ধ বাধুক। “তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে কাজ করছেন,” কারবি বলেন।

XS
SM
MD
LG