অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে দেখে: আইপিএস বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সওয়েল


যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য’ নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ম্যাক্সওয়েল মার্টিন।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য’ নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ম্যাক্সওয়েল মার্টিন।

ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি—আইপিএস) বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল এবং সাধারণভাবে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে দেখে।

তিনি বলেন, “আমরা অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে অন্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখি না। গণমাধ্যম ও কিছু লোকজনের মন্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমরা মাঝে মাঝে শুনি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে দেখে। আমি মনে করি এটি সত্য নয়।”

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক আমাদের দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দ্বারা চালিত। এটি ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত হয় না।”

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য’ নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে অভিন্ন স্বার্থ ও দ্বিপক্ষীয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখেন।

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ এ অঞ্চলে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হয়ে উঠুক এবং তার ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্য ইস্যুতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে সক্ষম হোক।

তিনি বলেন, “কয়েক বছরে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে এবং সেই প্রচেষ্টার অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ সরকার আইপিএস–কে বাংলাদেশের নিরাপত্তা উদ্বেগ সমাধানে সহায়তা করতে আমাদের এবং আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করার একটি সুযোগ হিসেবে দেখবে।”

তিনি বলেন, একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা তাদের বিস্তৃত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি দিক মাত্র।

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বর্ধিত ও নবায়নযোগ্য সম্পৃক্ততা অবশ্যই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ।

ইউএনবির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ ও উন্মুক্ত অঞ্চল নিশ্চিত করতে, সমৃদ্ধ করতে, সংযোগ তৈরি ও আগাম নির্ভরতা বাড়ানোসহ নিরাপত্তা জোরদার করতে চায়।

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, “আমরা এই সমস্ত বিষয় ঠিক করে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জড়িত থাকব এবং পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অংশীদারত্বের সুস্পষ্ট সুযোগ তৈরি করব।”

তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল একটি “ইতিবাচক ও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি। এটি পাঁচটি সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তঃসংযুক্ত স্তম্ভ নিয়ে গঠিত।”

একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো প্যাসিফিকের প্রচারের জন্য নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত এবং বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা এই সমস্ত সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখছেন।

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, আইপিএস চীনকে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে নয়, এটি কেবল একটি দৃষ্টিভঙ্গি। সেই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে এই অঞ্চল কেমন হওয়া উচিত, অঞ্চলটি কীভাবে অবাধ, উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ, সংযুক্ত ও সহনশীল হওয়া উচিত এবং কীভাবে এটি ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের জনগণ ও দেশগুলোকে উপকৃত করতে পারে তারা সেটি উপলদ্ধি করেন।

তিনি বলেন, “অবশ্যই আমাদের চীনবিষয়ক নীতি আছে। এটি ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি থেকে পৃথক এবং বিনিয়োগ, সারিবদ্ধকরণ ও প্রতিযোগিতার সঙ্গে সম্পর্কিত। চীন এই অঞ্চলে একটি প্রধান নেতৃত্বদানকারী দেশ।”

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, তারা মানুষকে ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল কী তা বুঝতে চান, কারণ কখনো কখনো এটি সম্পর্কে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে চাই। আমরা সব সময় বলে আসছি, বাংলাদেশ সরকার যত দ্রুত এগোচ্ছে আমরা তত দ্রুত অগ্রসর হতে প্রস্তুত এবং এই আলোচনা অব্যাহত রাখব।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোয়াড কোনো জোট নয়। “আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, কোয়াড কোনো জোট নয়। এটা কোনো সামরিক জোট নয়। এটি এই অঞ্চলে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এমন দেশগুলোর একটি নমনীয় গ্রুপিং। তারা একত্রিত হয়ে পরিবর্তনশীল উপায়ে অভিন্ন সমস্যা এবং সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার উপায়গুলো নিয়ে ভাবতে পারে। কোয়াড আসলে এমনই।”

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, তিনি মনে করেন না কোয়াড এমন কিছু, যা নিয়ে বাংলাদেশের ভয় পাওয়া উচিত। আমরা বুঝতে পারি, বাংলাদেশ আমাদের এবং এই অঞ্চলের অন্যদের সঙ্গে তার সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সুশাসন মানে সমৃদ্ধি, এই ধারণার ওপর তারা খুবই মনোযোগী। “বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য এটি।”

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, তারা এমন একটি অঞ্চল দেখতে চান যেখানে কোনো দেশ আধিপত্য বিস্তার করবে না ও কোনো দেশই আধিপত্যের কবলে পড়বে না এবং এই নীতি সর্বত্র প্রযোজ্য।

তিনি তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল ও দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চল হিসেবে ইন্দো-প্যাসিফিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি শীর্ষস্থানীয় অগ্রাধিকার এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি ভাগ করে নেওয়ার জন্য অপরিহার্য।

২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি বলেন, “আমাদের অনেক অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে ও একবিংশ শতাব্দীর বহুমুখী হুমকির মুখে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পরিবেশগত ও সামাজিক সহনশীলতা তৈরিতে আমাদের সম্পৃক্ততার প্রত্যাশায় রয়েছি।”

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি কোনো সামরিক জোট নয় এবং এটি কোনো সামরিক জোট হতে চায় না।”

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য কোনো অংশীদারের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে দেশগুলোকে বাধ্য করা আমাদের লক্ষ্য নয়। বরং এটি আমাদের নিশ্চিত করার বিষয় যে অঞ্চলটি অবাধ এবং উন্মুক্ত যেখানে দেশগুলো অবাধে তাদের নিজস্ব পছন্দ করতে পারে।”

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য একটি প্রতিশ্রুতি এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা অবাধ, উন্মুক্ত ও আরও সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, সুরক্ষিত ও সহনশীল হয়ে উঠবে।

তিনি বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিকের অনেক দেশ এবং জনগণ এই অঞ্চলের জন্য এই দৃষ্টিভঙ্গির দিকগুলো ভাগ করে নিয়েছে। আমরা যখন একসঙ্গে কাজ করব, তখন আমরা একসঙ্গে আরও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব।”

এ অঞ্চলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের চীনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বা জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে যা তারা সংরক্ষণ করতে চায়।

তিনি বলেন, “প্রতিটি দেশ তার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও স্বার্থকে ভিন্নভাবে পরিচালনা করবে।” ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, “আমরা আশা করি না যে প্রতিটি দেশ চীনের প্রতি আমাদের মতো একই মূল্যায়ন করবে।”

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন জলবায়ু পরিবর্তন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক সহনশীলতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও খাদ্য সুরক্ষার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং করা উচিত।

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা দায়িত্বের সঙ্গে পরিচালনা করতে চাই এবং সংঘাত বা বিরোধ এড়াতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”

তবে, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আগ্রহী দল প্রয়োজন হয়। তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগিতার মধ্যেও তাদের অবশ্যই যোগাযোগ উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং তা মেনে নেওয়ার কৌশলগত পরিপক্কতা প্রয়োজন।

ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল অবাধ, উন্মুক্ত ও প্রবেশযোগ্য রাখতে, এর ভেতরে ও বাইরে সংযোগ স্থাপন, আঞ্চলিক সমৃদ্ধি অর্জনে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং একবিংশ শতাব্দীর আন্তঃদেশীয় হুমকি মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহনশীলতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ও পুরো অঞ্চলে এই কাজের অনেক সুনির্দিষ্ট উদাহরণ রয়েছে।”

XS
SM
MD
LG