অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে ১৪ দিনে হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন ১৫ জন


বাংলাদেশে আট বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বাংলাদেশে আট বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বৃষ্টিপাতের পর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা সহনীয় হয়ে উঠেছে। তবে, গরমের অনুভুতি রয়ে গেছে। আবাহাওয়া বিভাগ বলছে যে মে মাস জুড়ে বৃষ্টির সঙ্গে গরম থাকবে। এদিকে, আবার বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ওদিকে, হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরম জনিত রোগীর সংখ্যা। হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, রবিবার (৫ মে) পর্যন্ত ১৪ দিনে, হিট স্ট্রোকে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল থেকে হিট স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুর রেকর্ড রাখা শুরু করে এই কন্ট্রোল রুম। চলমান তাপপ্রবাহে, সোমবার (৬ মে) সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে হিট স্ট্রোকে আরো একজনের মৃত্যু এবং তিনজন অসুস্থ হয়েছেন জানিয়েছে কনট্রোল রুম।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি হওয়ার পর, তাপমাত্রা কমতে শুরু করে।

হাসপাতালে রোগীর চাপ

দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অতিরিক্ত রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে, হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। রোগীদের অধিকাংশই হিট স্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এবং এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি।

দীর্ঘ তাপপ্রবাহে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
দীর্ঘ তাপপ্রবাহে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

গত কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে লোডশেডিং সমস্যা। এ কারণে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে গরমজনিত সমস্যায় অসুস্থ রোগীর চাপ।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অসুস্থ হয়ে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগী আসছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। হাসপাতালে এসেও, অতিরিক্ত গরমে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা।ওয়ার্ডে বা মেঝেতে থাকা প্রায় সবাই হাতপাখা কিংবা ছোট টেবিল ফ্যান কিনে ব্যবহার করছেন।

ঢাকার নদ্দা থেকে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন আবুল মালেক। তার ছেলে নাদিম জানান, “হাসপাতালে সিট খালি না থাকায় আমার বাবাকে ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এই গরমে খুবই খারাপ অবস্থা।”

হাসপাতালের অধিকাংশ ফ্যান নষ্ট বলে অভিযোগ রোগীর অভিভাবকদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “কর্মীদের বলেছি নষ্ট ফ্যান পরিবর্তন করে দিতে। যেখানে নতুন করে ফ্যান লাগানো যায়, সেখানে ফ্যান সংযুক্ত করতে বলেছি।”

“এখানে অনেক রোগী আসেন, অনেক বেশি ভিড়। তাই অনেকেই নিজের লাইট-ফ্যান ব্যবহার করেন। তাই আমি টেকনিশিয়ানদের বলে দিয়েছি, যাতে আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করা হয়, সেখান থেকে তারা লাইন নিয়ে ফ্যান, লাইট যেন জ্বালাতে পারেন;” যোগ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। বিছানা না পাওয়ায় মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে শিশুদের। জরুরি বিভাগ ও আউটডোরের মেডিসিন বিভাগে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি।

রাজধানী ঢাকায়, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল, আইসিডিডিআর,বি ও ঢাকা শিশু হাসপাতালেও একই পরিস্থিতি। চলমান তাপপ্রবাহের সময়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালগুলোতে। যাদের বেশিরভাগ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের জেনারেল পেডিয়াট্রিকস বিভাগের প্রধান ও একাডেমিক পরিচালক অধ্যাপক (ডা.) ফরিদ আহমেদ জানান, তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালে এখন সিট সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে জানান তিনি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক রোগ নিয়ন্ত্রণ পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ জানান, এখনো অসহনীয় গরম। তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে শিশুর স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়তে পারে। পাশাপাশি হাসপাতালে বাড়বে রোগীর সংখ্যা।

বৃষ্টির পূর্বাভাস

বাংলাদেশের আট বিভাগে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। সোমবার (৬ মে) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এতে আরো বলা হয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু'এক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে শিলাবৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অধিকাংশ জায়গায় এই তাপপ্রবাহ কমতে পারে।

রবিবার (৫ মে) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর, সোমবার (৬ মে) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে ১৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

XS
SM
MD
LG