অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিইসি হাবিবুল আউয়াল: ‘উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না মন্ত্রী-এমপিরা’


বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের ৪৯৫ টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে,বুধবার (৮ মে) প্রথম ধাপে, ১৪০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২২টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।

সিইসি বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন কি না, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয়ভাবে তা তদারকি করবে। নির্বাচন কমিশন তাদের হস্তক্ষেপের প্রমাণ পেলে, সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে; জানান তিনি।

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, “এটা ইসির কোনো ইস্যু নয়। বরং এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছার উদাহরণ।”

সিইসি আরো জানান, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার রোধে কমিশন সফল হয়েছে। “মন্ত্রী-এমপিদের কয়েকজন এখনো নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করছেন। তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে বলেছে কমিশন;” যোগ করেন তিনি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এবারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কে কোন দল করেন; বা কে কোন দলের প্রার্থী, নির্বাচন কমিশন তা বিবেচনা করে না। নির্বাচন কমিশন তাদের কেবল প্রার্থী হিসেবে দেখছে। কে নির্বাচনে আসলো, আর কে আসলো না, সেটা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়।”

এবারের নির্বাচনে প্রতিটি উপজেলায় গড়ে চারজন করে প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন, তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর আগামীকালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখেন কি না; জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর, এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

উপজেলা নির্বাচন

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিলো ১৫ এপ্রিল (সোমবার)। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে।

দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে ১ এপ্রিল (সোমবার)। দ্বিতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো ২১ এপ্রিল। এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে।

তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ১৭ এপ্রিল (বুধবার)। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।

চতুর্থ ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৯ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১২ মে। আর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৩ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১৬ থেকে ১৮ মে।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ মে। ২০ মে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। ৫ জুন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হবে চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণ। চতুর্থ ধাপে ৫৪টি উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

বিএনপির সিদ্ধান্ত

এদিকে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। ১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

এতে বলা হয়, সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই বলেও উল্লেখ করে বিএনপি।

ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে উপজেলা নির্বাচন ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে, এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

ওবায়দুল কাদের উল্লেখ করেন যে বিএনপি মনে করেছিলো, তারা নির্বাচনে অংশ না নিলে সরকার বৈধতা পাবে না। “কিন্তু হয়েছে উল্টো। জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ২৩১ টি নির্বাচন হয়েছে। যেখানে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ;” তিনি আরো বলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিকে ছাড়াই দেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন এগিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে। এই নির্বাচনে বিএনপি'র কেউ অংশ নিলে, আওয়ামী লীগের কিছু বলার নেই। “এটা বিএনপির বিষয়, বিএনপি দেখবে;” তিনি যোগ করেন।

উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের হস্তক্ষেপ এবং সহিংসতার আশঙ্কা করছে নির্বাচন কমিশন; এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন,“ তারা সংঘাতের আশঙ্কা করতে পারেন। তবে সংঘাত যেন না হয়, সে বিষয়ে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত আছে।”

XS
SM
MD
LG