অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আফগানিস্তানে সমান্তরাল সরকারের হুমকীতে যুক্তরাষ্ট্রের হুশিয়ারী


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের যে কোনো প্রচেষ্টার অর্থ হচ্ছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া। ফিরতি দফার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল আসার পর কারচুপির অভিযোগ ওঠার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দেয়া বিবৃতির ভিত্তিতে ভয়েস অব আমেরিকার ভিক্টর বিটির রিপোর্ট।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী বলেছেন তিনি লক্ষ করেছেন আফগানিস্তানে বিক্ষোভ হয়েছে এবং সেখানে একটি সমান্তরাল সরকার গঠনের পরামর্শ উঠেছে যা ভীষণ উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র আশা করে আফগান নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্বাচন নিয়ে ওঠা সকল অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ভালো করে পরীক্ষা করবেন।

জন কেরী হুশিয়ার করেন যে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের যে কোনো পদক্ষেপ আফগানিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে দেয়া অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহায়তার ক্ষেত্রে বিরাট মূল্য দিতে হবে।

সোমবার আফগান কতৃপক্ষ ১৪ই জুনের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করে যাতে দেখা যায় সাবেক বিশ্বব্যাংক অর্থনীতিবিদ আশরাফ ঘানি তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক পররাস্ট্রমন্ত্রী আব্বুল্লাহ আব্দুল্লাহর চেয়ে ৫৬ থেকে ৪৪ শতাংশ ভোটে এগিয়ে থাকেন। দেশের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সন্দেহ করে ২৪শে জুলাই চুড়ান্ত ফল প্রকাশের পর ঝামেলা হতে পারে।

আব্দুল্লাহ ও তার প্রচারণা কতৃপক্ষ ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাস্ট্র বিভাগের মুথপাত্র জেনিফার সাকি সোমবার বলেন প্রতারনার অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে নেয়া দরকার এবং তা তদন্ত প্রয়োজন।

৭ হাজার ব্যালট বক্সে থাকা ৩০ লক্ষ ভোট নিয়ে যে প্রশ্ন উটেছে তা তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।

“আমাদের বক্তব্য হচ্ছে অভিযোগ ওঠা সকল অনিয়নের পরিপূর্ন পর্যালোচনা। আমরা মনে করি নির্বাচনের প্রতি আফগানিস্তানের মানুষের বিশ্বাস অক্ষুন্ন রাখতে তা করা প্রয়োজন। জাতিসংঘও এ নিয়ে নানা প্রকার পরামর্শ দিয়েছে”।

তিনি উভয় পক্ষকে এইসব পরীক্ষা ও পর্যালোচনায় সহায়তা করার আহবান জানিয়েছেন এবং কোনো প্রকার উস্কানীমূলক বিবৃতি বা কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকারও আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন ওয়াশিংটন আাশা করে ২রা আগষ্টে নতুন প্রেসিডেন্ট অভিষেকের আগেই সময়মত এসব পরীক্ষা নীরিক্ষা আলোচনা পর্যালোচনা শেষ হবে।

আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, তার প্রাদেশিক গভর্নর ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ভোট কারচুরিতে সহায়তা করেছেন। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাজিফ শাহরানী বলেন দুই পক্ষের এই দ্বন্দ্ব হামিদ কারজাইকে ক্ষমতায় রাখতে সহায়তা করবে।

“এই দুই দল সম্মত না হলে এবং নির্বাচন নিয়ে দু পক্ষের দ্বন্দ্বের অবসান না ঘটালে চরম সমস্যা হতে পারে; যা সংঘাতে রূপ নিতে পারে, ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা দেশে এবং তাতে মিষ্টার কারজাই হয়ত জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন এবং ক্ষমতায় অব্যহত থাকতে পারেন”।

তিনি বলেন আন্তর্জাতিক পর্যালোচকরা দুই প্রার্থীর সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

“ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদা্য়তক এগিয়ে আসতে হবে, হতে পারে ইউরোপয়িন ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, আরব লীগ অথবা ইসলামিক কনফারেন্স, তাদেরকে পক্ষপাতহীন স্বাধীন কোনো সমঝোতাকারীর মাধ্যমে ঐক্যমত্যে পৌছাতে হবে”।

তিনি বলেন আব্দুল্লার পক্ষ থেকে সমান্তরাল সরকার গঠনের হুমকী দেশের উত্তর ও দক্ষিনের দুই অংশে তাদের তাজিক সমর্থক এবং ঘানির পাস্তু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলনের দিকে মোড় নিতে পারে। আর সেটিই হবে ৩৬ বছর ধরে যুদ্ববিগ্রহ লেগে থাকা এই দেশটির জন্য চরম মর্মান্তিক ঘটনা।

নির্বাচন পর্যালোচনার পর হয়তো কোনো একক প্রার্থী একচ্ছত্রভাবে বিজয়ী হবেন না; তবে সর্বশেষ উপায় হিসাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতায়, ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির মাধ্যমে ঐক্যমত্যের সরকার গঠিত হতে পারে, যাতে সংঘাত সহিংসতা এড়িয়ে শান্তি স্থাপন সম্ভব হয়।

XS
SM
MD
LG