শতাব্দীর সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আলীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে, তাঁর জানাযায় শরীক হয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা তাঁর হাজার হাজার ভক্ত শুভানুধ্যায়ী।
শিয়া সুন্নী কিংবা সালাফি বা সুফি; বিভিন্ন নামে বিভক্ত, ইসলামের বিভিন্ন মতাদর্শী গোষ্ঠিসমূহকে, এবং তাদের প্রতিনিধিদেরকে কেনতাকিতে একত্রিত করেছেন যে মানুষটি তাঁর নাম মুহাম্মাদ আলী। কিংবদন্তী এই মানুষটির নিজের শহর লুইভিলে গিয়ে তাঁর জানাযায় অংশ নিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর প্রতি তাঁর ভক্ত অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ীরা।
জানাযায় অংশ নেন কাউন্সিল অব আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্সের প্রতিনিধি রৌলা এ্যাল্লোক। মুহাম্মাদ আলী সম্পর্কে তার মন্তব্য: “আমার ধারণা, শুধুমাত্র তাঁর জন্যে, আমরা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি, তিনি আমাদেরকে গর্বিত করেছেন; কারন তিনি ইসলামের এমন একজন শক্তিশালি কর্মী ছিলেন, যিনি আমেরিকান মুসলমানদের জন্যে গর্ব করার মত”।
ক্যালিফোর্নিয়ার নাদিয়া হাসান, মুহাম্মাদ আলীর জানাযায় অংশ নেন, তার প্রয়াত চাচা এবং বাবার পক্ষে। কারন মুহাম্মাদ আলীর ঘনিষ্ঠ পরিচিত ছিলেন তাঁরা। নাদিয়া বলেন, আলী তাঁর আদর্শ নিয়ে বেঁচে ছিলেন এবং আদর্শ নিয়েই তিনি মৃত্যুকে বরণ করেন।
মুসলমান বা অমুসলিম, মুহাম্মাদ আলীর কর্ম ও জীবনের দ্বারা যারা প্রভাবিত হয়েছেন তাঁরা সবাই শোক ও শ্রদ্ধা জানাতে আসেন জানাযায়। তেমনই একজন আলী ভক্ত, সুদানী আমেরিকান ইমাম- মোহামেদ মাজিদ। আলী সম্পর্কে তিনি বলেন, “জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা মুহাম্মাদ আলীর নাম শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। কেউ খুব দৃড়প্রত্যয়ী বা সাহসী হলে, লোকে বলতো কি ব্যাপার তুমি কি মুহাম্মাদ আলী হয়ে গেছো নাকি? সুদানে তরুন যুবকদের কাছে মুহাম্মাদ আলী দৃঢ়তার প্রতীক হিসাবে পরিচিত”।
মাজিদ বলেন ১৯৮৮ সালে মুহাম্মাদ আলী সুদান সফরে গিয়েছিলেন; সেটিই তার জীবনের সবচেয়ে সেরা স্মৃতি।
জানাযায় এনসেছিলেন নাগরিক অধিকার নেতা জেসি জ্যাকসন। তিনি বলেন, দেশের প্রতি আলীর বিসর্জন, আমেরিকানদের জীবনোন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।
“ধর্মীয় বিষয় সমগ্র বিশ্বের বহু মানুষের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই আলীর প্রতি ভালবাসা, তাঁর ধর্মের প্রতি ভালবাসা”।
এখানে বৃহত্তর ওয়াশিংটনে, ম্যারিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ার বিভিন্ন মসজিদে, ইসলামিক সেন্টারে আজ জুম্মার নামাজের সময় মুহাম্মাদ আলীর গায়েবী জানাযা হচ্ছে। ভার্জিনিয়ার এ্যাডাম সেন্টারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ গোলাম মোক্তাদির বললেন, আলী ছিলেন ইসলামের একজন শক্তিশালী কর্মী।
ওদিকে ম্যারিল্যান্ড ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টার অব পোটোম্যাকের প্রেসিডেন্ট সুলতান চৌধূরী মু: আলীকে আমেরিকার সর্বকালের সেরা এক মুসলমান হিসেবে উল্লেখ করেন।
বর্ণবাদ ও ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, আমেরিকান মুসলসমানেরা মুহাম্মাদ আলীকে পেয়েছিলেন সোচ্চার শক্তিশালী সহযোদ্ধা হিসাবে; যার সুফল ভোগ করছেন মুসলমান সম্প্রদায়। তাঁর গল্প, ন্যায়ের পক্ষ্যে তাঁর কর্ম, তাঁর জীবন; হয়ে রইবে ভবিষ্যতের জন্যে শক্তি ও সাহসের প্রেরণা।