মালয়েশিয়ায় যাবার পথে আটকা পরা অবৈধ অভিবাসীদের নৌকা খোঁজার প্রক্রিয়া চালু রাখতে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ব্যাংককে ভয়েস অফ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিউরো থেকে বিস্তারিত জানিয়েছেন স্টিভ হারম্যান। ওদিকে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর দা রাইটস অফ বাংলাদেশী এমিগ্র্যান্টস, ওয়ারবির, চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক, শাগুফতা নাসরিন কুইনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অভিবাসীদের সঙ্কট সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করলেন।
উদবাস্তুদের জন্য জাতিসংঘ হাইকমিশনের ঊর্ধ্ব্বতন কর্মকর্তা টম ভার্গাসের মতে, এখনও প্রায় ২০০০ অভিবাসী সমুদ্রে আটকা পরে আছে। তাঁদের অর্ধেকই মিয়ানমার আর বাংলাদেশের উপকূলের কাছে। তিনি বলেন, “অভিবাসীদের অর্ধেক বঙ্গোপসাগরে, বাকি অর্ধেক মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ার কাছে। তবে তাঁদের সঠিক অবস্থান আমরা এখনও জানি না।”
উপকূলের কাছ থেকে উদ্ধার করা প্রায় সাতশ অভিবাসীকে ঘরে ফেরানোর কাজ শুরু করেছে মিয়ানমার। দেশটির পশ্চিম সীমান্তের মংদাও শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোত্তর জনেরও বেশি নারী ও ৪০ শিশুকে তংপাওয়ের অভিবাসন কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এই অভিবাসীদের নাগরিক হিসেবে দেখা হবে কি না বা তাঁদের ব্যপারে কি পদক্ষেপ নেয়া হবে সে প্রক্রিয়া শেষ হতে তিন দিন সময় লাগবে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেয় না, তাদের বাঙালী হিসেবে দেখে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জনসংখ্যা, উদ্বাস্তু ও অভিবাসী বিষয়ক সহকারী সচিব অ্যান রিচার্ডের মতে “রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিত্ব দেয়া উচিত।” মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যকে তিনি তাঁর দেখা সবচেয়ে নির্যাতিত অঞ্চল হিসেবে অ্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, “আশপাশের সবাই আপনার সাথে কথা বলতে পর্যন্ত ভয় পায় এমন জায়গায় থাকাটা খুব কঠিন, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য।”
ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে মিয়ানমারে অভিবাসন প্রত্যাসীরা সমুদ্রে তিন মাস আটক অবস্থায় খাকার তাদের কষ্টের কথা জানায়।
বেশির ভাগ পুরুষরা জানিয়েছে তাদের কক্সবাজার ও বাংলাদেশের অন্যান্য বন্দর থেকে অপহরন করে আদম ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
৫৪ বছর বয়সী ইসমাইল জানান, কাজের খোঁজে কক্সবাজার যান তিনি। “কক্সবাজারে এক দালালের খপ্পরে পরে যাই। আমার কখনই মালয়েশিয়া যাবার কোন ইচ্ছা ছিলো না।”
উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের মধ্যে মোটে একজন স্বেচ্ছায় এই আদমব্যাপারীদের নৌকায় উঠলেও, এক তৃতীয়াংশ জানায় সুযোগ পেলে তারাও ভাল চাকরীর জন্য বিদেশ যেতে আগ্রহী।
ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময়ে তিনজন জেল পরিদর্শক নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করেন।
মে’র একুশ তারিখ উদ্ধার হবার পর, প্রায় দু সপ্তাহ ধরে এই অভিবাসীরা আটকশিবিরে আছে। আটক লোকজনের মতে শিবিরের থাকা-খাবার অবস্থা ভাল নয়। দিনে দুবেলা ভাত খেতে দেয়া হয়, খাবার পানিও দেয়া হয় মেপে। আরও খাবার বা পানি চাইলে মার খেতে হয়।
মিয়ানমার কর্মকর্তারা জানান, পঁচিশ মে বাংলাদেশ থেকে কর্মকর্তারা এসে উদ্বাস্তু শিবির ঘুরে গেছেন। এই অভিবাসীদের নাগরিত্বের দাবী প্রমাণিত হলে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেবার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ।
মাহমুদ নামের একজন অভিবাসী বাংলাদেশ সরকারের কাছে দেশে ফেরার আকুতি করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
“এক দালালের পাল্লায় পরে তিন মাস ধরে আমরা সমুদ্রে অত্যাচার সহ্য করেছি, কোন সাহায্য পাইনি। মিয়ানমারের নেভি আমাদের না বাঁচালে আমরা মাঝ সমুদ্রে ক্ষুধায় মারা যেতাম।”
নয়জন কর্মীসহ থাই জাহাজের মালিক হিসেবে যাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে তাকে মিয়ানমারে আটক রাখা হয়েছে। তাদের নিয়ে তদন্ত শুরু হবে। তবে, মিডিয়ার সাথে তাদের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না।
সৈয়দ সাইফুল হক হচ্ছেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর দা রাইটস অফ বাংলাদেশী এমিগ্র্যান্টস, ওয়ারবির, চেয়ারম্যান। তাকে এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করি যে জাতিসংঘের হিসেব অুযায়ী যে প্রায় ২০০০ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অভিবাসী এখনও সমুদ্রে আটকা পড়ে আছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই সংখ্যা এত বেড়ে গেল কেন। তিনি সে বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করলেন।