অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের ইসলামিক রাজনীতির পরিবর্তিত ভূমিকা’- শীর্ষক এই আলোচনায় আমেরিকান ইউনিভার্সিটির দুই অধ্যাপক


যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের উড্রো উইলসন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় আমেরিকান ইউনিভার্সিটির দুই অধ্যাপক অ্যান্ডার্স হারডিগ এবং তাজরিনা সাজ্জাদ বলেন-- দক্ষিন এশিয়াতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে যখন আইসিস ও আলকায়দার দ্বন্দ চলছে, তখন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনা বিশ্ব প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। কিছু কিছু সংগঠনের আন্ত:দেশীয় যোগাযোগ রয়েছে। অনেক জায়গা থেকে তাদের অস্ত্র আসছে। আর তাদের কাছে যত অস্ত্র থাকবে, রাষ্ট্র তত দুর্বল হবে। সেখানে ছিলেন তাওহীদুল ইসলাম।

‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ভক্তির মধ্যে: বাংলাদেশের ইসলামিক রাজনীতির পরিবর্তিত ভূমিকা’- শীর্ষক এই আলোচনার শুরুতে, আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞ তাজরিনা সাজ্জাদ এবং অ্যান্ডার্স হারডিগ তাদের গবেষনায় পাওয়া নানা তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় অধ্যাপক তাজরিনা সাজ্জাদ বলেন, সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনীতির অংশ। তবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে দেখতে হবে বৃহত্তর পরিসরে। তিনি বলেন—

“সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা আর্ন্তজাতিক দৃষ্টি আকর্ষন করে দুটি কারনে- প্রথমত, হেফাজত মুফমেন্টের উত্থান। যা সরাসরি শাহবাগ মোবিলাইজেশনকে চ্যালেঞ্জ করে। দ্বিতীয়ত ২০১৫ সালে ব্লগার হত্যা এবং তিন বিদেশী নাগরিক ও দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা। এসব বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এটা বৃহত্তর পরিসরে ঘটেছে।”

বাংলাদেশের ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক অ্যান্ডার্স হারডিগ, পরিস্থিতির উন্নয়নে আলিয়া মাদ্রাসাকে সহায়ক মনে করলেও, কওমী মাদ্রাসা নিয়ে তার ছিল ভিন্ন মত। হারডিগ বলেন-

“সবাই জানে যে, অনেক কওমী মাদ্রাসার অর্থ সাহায্য আসে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে। সব মাদ্রাসার অর্থায়নের বিষয়ে জানা প্রায় অসম্ভব। যে কেউ হাতে টাকা নিয়ে কওমী মাদ্রাসা শুরু করতে পারেন। আপনি দুই-তৃতীয়াংশ অর্থের সন্ধান পেলেও, এক ভাগের কোন খোঁজই পাবেন না। এক ভাগ অর্থ আসে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে। এক ভাগ উপসাগরীয় অঞ্চলের মানুষ ও এনজিও’র কাছ থেকে আসে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কোন ধরনের মতাদর্শ সেখানে শেখানো হয়?”

এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর। এসময় সন্ত্রাসবাদ ও দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা – জঙ্গীবাদ ও বাংলাদেশের ইসলামি রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। জামায়াত ইসলামিকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যান্ডার্স হারডিগ বলেন—

“ যখন এটা ইস্যু হয়ে উঠেছে, তখন তা বাংলাদেশের সরকারের ওপর নির্ভর করে। রাজনৈতিক দল যদি আইন অনুযায়ী পরিচালিত না হয়, তবে তা সর্বত্রই নিষিদ্ধ হয়। তাই আমি বলছি না- নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ অথবা উচিৎ নয়। তবে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হওয়া অগনতান্ত্রিক নয়।”

আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সঙ্গে স্থানীয় সংগঠনগুলোর যোগাযোগ মূলত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে মত দেন এই দুই অধ্যাপক। ভয়েস অফ আমেরিকাকে তাজরিনা সাজ্জাদ বলেন—

“কিছু কিছু সংগঠন এখানে আন্ত:দেশীয় ও আন্ত:অঞ্চলীয়। যাদের যোগাযোগ আছে বাইরের সঙ্গে। তাদের কাছে অনেক জায়গা থেকে অস্ত্র আসছে। গবেষনায় যতটা দেখা গেছে, অস্ত্রের উৎস কিন্তু আর্ন্তজাতিক। যাদেরই পয়সা আছে তারা কিন্তু কিনতে পারবে। বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্ত দেখতে পারেন, বাংলাদেশ-পাকিস্থান, বাংলাদেশ-ভারত এবং আসামের দিকে দেখতে পারে। আরো বড় বড় বাজার রয়েছে। মধ্য প্রাচ্য ও চীন দেখতে পারেন। অস্ত্র কিন্তু খুব সহজ। এবং তাদের হাতে যত অস্ত্র থাকবে, রাষ্ট্র তত দুর্বল হয়ে যাবে। এ বিষয়ে কেবল সরকার নয়, আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় সহ সবাই যদি আগ্রহী না হয়, তাহলে সমস্যাটার সমাধান তো হবে না, সীমাবদ্ধ করাটাও কঠিন হয়ে যাবে।“

অ্যান্ডার্স হারডিগ বলেন-“ স্থানীয় রাজনৈতিক সহিংসতা বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, যখন দক্ষিন এশিয়াতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে আইসিস ও আল-কায়দার দ্বন্দ্ব রয়েছে। আইসিস দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার নমুনা দেখাচ্ছে। যে কারনে স্থানীয় গ্রুপ গুলো তাদের নামের সঙ্গে যুক্ত হবার ইচ্ছা প্রকাশ করছে।”

সমস্যা থেকে উত্তরনের উপায় কি —এমন প্রশ্নে দুই আলোচকই দীর্ঘ মেয়াদী পথ অনুসরনের কথা বলেছেন।

তাজরিনা সাজ্জাদ বলেন-“ মানুষের কোন আস্থা নেই। তারা রাষ্ট্র ও পুলিশের কাছে নিরাপত্তার জন্য যেতে পারছে না। পুলিশ দিতে পারছে না- কারন হয়তো তাদের সামর্থ নেই অথবা রাজনৈতিক অবস্থা এমন যে তারা নিরাপত্তা দিতে পারছে না বা দিতে চাচ্ছে না। পরিস্থিতি খুবই জটিল। কোন সিলভার বুলেট নেই যে সরকার যদি এই এক, দুই, তিন করে তাহলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এর কারন হলো এর অতীতটা অনেক দিন ধরে তৈরী হয়েছে। একটা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে অথবা জঙ্গী সংগঠনগুলোকে টার্গেট করলে সমস্যার সমাধান হযে যাবে এটা কিন্তু সত্য নয়। যেহেতু সরকার হলো নির্বাচিত এবং আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় ও অন্তত:পক্ষে একটি গ্রুপের কাছে আইনত বৈধ। অনেকে হয়তো নির্বাচন নিয়ে খুশী প্রকাশ করেননি। কিন্তু এই সরকারের তো দায়িত্ব আছে সব নাগরিকের প্রতি।”

অ্যান্ডার্স হারডিগ বলেন-“ সরকারকে অবশ্যই ইসলামি জঙ্গীবাদ দমনে শক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে সব ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার ব্যাপারেও। মনে রাখা প্রয়োজন- রাজনীতির এটা একটা বড় সমস্যা। দীর্ঘ মেয়াদে প্রয়োজন সালাফী মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত উদীয়মান ইসলামিক রাজনীতির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া। সেক্ষেত্রে আলিয়া মাদ্রাসা উপকারে আসতে পারে। কারন এটা গুরুত্বপূর্ন স্থান, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গনতন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া সম্ভব।”

ইসলামী রাজনীতি ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান স্থানীয় কোন সমস্যা নয়, তাই এর সমাধানে সরকারের পাশাপাশি প্রয়োজন আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক সহযোগিতাও—এমনটা মনে করেন অধ্যাপক তাজরিনা সাজ্জাত ও অ্যান্ডার্স হারডিগ ।

XS
SM
MD
LG