অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে উগ্রবাদ : উত্থান ও কারণ : প্রথম পর্ব


বাংলাদেশে উগ্রবাদ : উত্থান ও কারণ : প্রথম পর্ব
বাংলাদেশে উগ্রবাদ : উত্থান ও কারণ : প্রথম পর্ব

বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই জঙ্গি তৎপরতা পরিচালিত হয়ে এসেছে। বছর কয়েক আগে রাজশাহির কথিত বাংলা ভাই এবং তাদের সমর্থক উত্তরাঞ্চলের ঔ সব এলাকায় এক তান্ডব সৃষ্টি করে রেখেছিল। জীবন্ত মানুষকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে তার গায়ের চামড়া তুলে নেয়ার মতো নৃশংস ও অমানবিক ঘটনা ও ঘটেছে। এই কথিত বাংলা ভাই ছাড়াও সেখানে হারকাতুল জ্বিহাদ আল ইসলামি বা সংক্ষেপে হুজি, জাগ্রত মুসলিম জনতা, বাংলাদেশ বা জে এম বি এবং জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ, জে এম বি’র মতো উগ্রপন্থি দল গুলো সক্রিয় থেকেছে বরাবর। তারা কথিত শারিয়ার শাসন স্থাপনের জন্যে জিহাদ করছে বলেও দাবি করে থাকে।

এই সাম্প্রতিক কালে যখন বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচারের কাজ শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই উগ্রবাদী একটি গোষ্ঠি জে এম বি তৎপর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে উগ্রপন্থিদের উত্থান কতখানি বিপজ্জনক সে নিয়ে কথা হচ্ছিল টেরিসিটা শেফারের সঙ্গে। তিনি সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক। জে এম বি কে যথেষ্ট বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে মিসেস শেফার বলেন যে এমন সময় তো গেছেই বাংলাদেশের ইতিহাসে যে তারা বিপজ্জনক ভাবে আবির্ভূত হয়ে ছিল। গোটা দেশে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত ছিল বলে অভিযোগ আছে। এবং সেই সময়ে তাদের অনেক নেতাকেই আটক করা হয়।

বস্তুত পক্ষে ১৭ই অগাস্ট তারা গোটা দেশে উপর্যুপরি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, তার দাবি তারা নিজেরই করেছিল। বাংলা ও আরবীতে ছাপানো তাদের প্রচার পুস্তিকা তারা দাবি করে যে তারা, তাদের কথায় আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে লড়াই করছে। ইসলাম সম্পর্কে তাদের মতবাদ এতই উগ্র এবং চরম যে তারা যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এনজিও, সিনেমা থিয়েটার এমন কী মাজার জিয়ারতের ও কঠোর বিরোধী। জে এম বি ও অন্য অনেক দল ও গোষ্ঠির মত তাদের কথায় ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। টেরেসিটা শেফার মৌলবাদি রক্ষণশীল মুসলমানদের সঙ্গে জে এম বি সদস্যদের একটা পার্থক্যের দিক ও ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, “আমি অবশ্য, যে সব লোক খুব প্রথাগত মুসলমান কিংবা ধরুন রক্ষনশীল মুসলমান এবং যে সব লোক এ সবের জন্যে সহিংস পথ বেছে নিতে প্রস্তুত তাদের মধ্যে একটা পার্থক্য নির্ণয় করতে চাই। আর সে জন্যেই আমার মনে হয় জে এম বি ঐ বিভাজন রেখার ভুল দিকে রয়েছে”।

জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা গ্রেফতার
জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা গ্রেফতার

জে এম বি যে সন্ত্রাস ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ইসলামি অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেই কথাটি তারা তাদের পুস্তিাকা ও প্রচারপত্রে পরিস্কার ভাবেই বলেছে। এখানেই ধর্ম প্রাণ সনাতনপন্থি মুসলমানের সঙ্গে জে এম বি ‘র মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর পার্থক্য। তবে প্রায়শই অনেকে এই প্রশ্নটা তোলেন যে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এই সব উগ্রপন্থি দলের যে আদর্শিক মিল আছে, তাতে বাংলাদেশে জামায়াতের ও কি জঙ্গি তৎপরতায় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ যুক্ত থেকেছে?

জবাবে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত টেরিসিটি শেফার বলেন, “এটা তো ঠিকই যে ইসলামের সনাতন বিশ্লেষণের ব্যাপারে এদের মধ্যে এটা মিল রয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামি বরাবরই এ কথা অস্বীকার করে এসছে যে তারা সহিংস উপায় অবলম্বন করতে চায়। সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে মনে হয় না যে তারা জঙ্গি তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যখন সহানুভূতি লক্ষ্য করা যায়, তখন এটির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আরো কঠিন হয়ে পড়ে”।

জে এম বি ‘র মতো সংগঠনগুলো কেবল যে বাংলাদেশে সংঘাতের মধ্য দিয়ে তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাই নয়, তারা যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমি বিশ্বের প্রতি ও তীব্র ঘৃণার অভিব্যক্তি ঘটিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে এই উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার সম্ভাবনার গুরুত্ব ও তুলে ধরেন টেরেসিটা শেফার। তিনি বলেন যে যুক্তরাস্ট্রের জন্যে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে সেই সব গোষ্ঠি যারা সহিংস উপায় অবলম্বন করতে চায় বিশেষত যারা আন্তর্জাতিক ভাবে সহিংসতা অবলম্বন করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিয়ে ও উদ্বিগ্ন যারা হয়ত অন্যদেশে, যেমন ধরুন ভারতে সহিংস এবং উগ্রবাদি কার্যক্রোম ইন্ধন যোগায়।

বাংলাদেশের ভু-রাজনৈতিক গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার অভিযোগে তার প্রতিবেশিদের কাছ থেকে কোন পাল্টা ব্যবস্থার সম্মুখীন হয়নি। তবে আমার মনে হয় যে বাংলাদেশের মাটি থেকে, বাংলাদেশের সীমান্তের অপর পারে সক্রিয় সহিংসতা চালানোর যদি সমর্থন পাওয়া যায়, সেটি বাংলাদেশের জন্যে বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি করে, দু ভাবে। প্রথমত বাংলাদেশের প্রতিবেশিরা ক্ষুব্ধ হবে এবং সেটা বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী, আর দ্বিতীয়ত যে সব গোষ্ঠি ভারতে সক্রিয় সহিংস আক্রমণ চালিয়ে থাকে তারা তো বাংলাদেশেও এ রকম আক্রমণ চালাতে সমান ভাবে সক্ষম। বস্তুত বাংলাদেশ সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে এবং নিশ্চয়ই বাংলাদেশ সে পথে যেতে চায় না।

টেরিসিটা শেফারের এই বিশ্লেষণের আলোকে এ কথা বলাই বাহুল্য যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ শান্তিকামি এবং তারা যে কোন ধরণের উগ্রবাদ বিরোধী। এই ধারাবাহিকের আগামি অনুষ্ঠানে শুনবেন বাংলাদেশে উগ্রবাদ সম্পর্কে আরো কিছু কথা, কিছু বিশ্লেষণ।

XS
SM
MD
LG