বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’ র এক নেতা, সরকারকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গত মাসে ঢাকায় একজন ইতালীয় ত্রাণকর্মীকে হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী ছিলেন—সরকারের এক সিনিয়র মন্ত্রীর এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে বিএনপি। ভয়েস অফ আমেরিকার সংবাদদাতা শেখ আজিজুর রহমান এর প্রতিবেদন শোনাচ্ছেন তাওহীদুল ইসলাম।
২৮ সেপ্টেম্বরের সেজারে ট্যাভেলা হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ তিনজন সহ মোট চারজনকে গ্রেফতারের দুই দিন পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পুলিশের কাছে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে, বিএনপি’র মধ্যম সারীর নেতা এম এ কাইয়ুম ঐ অপরাধ ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। এবং কাইয়ুম ঐ ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী।
কিন্তু বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ ভয়েস অফ অ্যামেরিকাকে বলেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে কেউ ঐ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ- বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
ঢাকায় বন্দুক হামলায় ট্যাভেলা নিহত হবার পাঁচ দিনের মাথায় তিন অক্টোবর ঢাকা থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দূরে রংপুরে জাপানী কৃষি বিশেষজ্ঞ হোসে কুনিও কে তাঁর খামারের কাছাকাছি অজ্ঞাত হামলাকারী হত্যা করে। ইসলামিক ষ্টেট খুব দ্রুত ঐ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। তবে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঐ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ঐ গ্রুপটির বাংলাদেশে পা রাখারই সুযোগ নেই। বরং তারা ঐ দুই হত্যাকান্ডের জন্য স্থানীয় ইসলাম পন্থী জঙ্গীদের দায়ি করছেন।
গত সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, ট্যাভেলা মামলায় গ্রেপ্তার চারজনের তিনজন বলেছে- তারা এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে ঐ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ঢাকার সাবেক কাউন্সিলর বড় ভাই কাইয়ুম এখন মালয়েশিয়ায় বসবাস করেন। আর স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংবাদ পত্র পুলিশের বরাত দিয়ে খবর ছাপায়, বিএনপি নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ভাড়াটে খুনি দিয়ে জাপানী নাগরিককে হত্যার পর ভারতে পালিয়ে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন—শিগগিরি তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এদিকে, জাপানী নাগরিক হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ঐ হত্যাকান্ডের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দায়ি করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিষয়টিকে দেখছেন তার দলকে কলঙ্কিত করার মিশন হিসাবে। আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাধারণ মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন, নতুন ষড়যন্ত্র।
ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আলি রিয়াজ মনে করেন, অপরাধী যেই হোক না কেন তার শাস্তি নিশ্চিত হতে হবে।তিনি বলেন--
"রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের দিকে ইশারা করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি করবে, তা নিয়ে তারা বিভ্রান্ত। এসব কারনে এমন একটি পরিবেশ তৈরী হয়েছে যাতে ধর্মীয় মতাদর্শ দ্বারা চালিত ঐ ধরনের গ্রুপ অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। ফলে দিন শেষে তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে।“