অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পোশাক শিল্পের জন্য আইএলও এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ কর্মসূচী


বাংলাদেশের ৪০ লক্ষ পোষাক শ্রমিকের কাজের পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও এবং বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। দেশটিরে পোষাক শিল্পে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এগারো শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার ৬ মাস পর এই প্রয়াস নেয়া হলো। নয়াদিল্লতে থেকে আঞ্জনা পাচরিচার করা রিপোর্ট থেকে শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন:

এই প্রয়াসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পোষাক শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অনুমতি মেলে এমন শ্রম আইন করার চেষ্টা, বললেন আইএলও’র মাঠ কর্ম বিভাগের উপ মহা পরিচালক গিলবার্ট হুঅংবো। সাড়ে তিন বছর চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় শুরু হয় এই কর্মসূচী। হুঅংবো ভয়েস অব আমেরিকাকে জানান বাংলাদেশের পোষাক শ্রমিকদের ভালো কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রমিক ইউনিয়ন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

“তিনি বলছিলেন, নতুন শ্রম আইানে ইউনিয়ন করার জন্য শ্রমিকদের পক্ষ্যে অনেক কিছু রয়েছে। রাখা হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার স্বাধীনতা। অতীতে যা ছিল না। ঐক্যবদ্ধভাবে দাবী আদায়ের দৃষ্টিকোন থেকে এটি অবশ্যই একটি অগ্রগতি”।

এখনো পর্যন্ত ইউনিয়ন গঠন করার জন্য কারখানা মালিকের অনুমতি নিতে হয়, যা সাধারণত উৎসাহিত করা হয় না। এবং শ্রমিক নেতাদের কাছে হয়রানীর শিকার হওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে।

এই কর্মসূচী নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেবে। শত সহস্র পোষাক কারখানায় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ও কাঠামোগত অবস্থা কেমন তা দেখা হবে। অনিরাপদ কারখানা সমূহ স্থানান্তরিত করা হবে। তবে আইএলও’র পক্ষ থেকে তদন্ত করার ব্যবস্থা রাখার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

গত বছর বাংলাদেশের দুটি পোষাক কারখানায় দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর কারখানার অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোরওপর চাপ আসতে থাকে এবং বিশ্বের নেতৃতত্বস্থাণীয় পোষাক প্রতিষ্ঠান সমূহ হুমকী দেয়। গত নভেম্বরে একটি কারখানায় আগুন লেগে ১১০ দশ মারা যায়। গত এপ্রিলে ৮তলা একটি ভবন ধ্বসে সেখানে থাকা পোষাক কারখানার ১১ শতাধিক শ্রমিক মারা যায়। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো অনেক দুর্ঘটনার প্রমান রয়েছে।

নতুন কর্মসূচীতে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহতদের পুনর্বাসন এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। গিলবার্ট হুঅংবো বলেন যদি এই পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন করা হয় পোষাক শিল্পের অবস্থার উন্নতি ঘটবে। তবে তিনি কুশলী হওয়ার ব্যপারে গুরুত্বারোপ করে বলেন:

তিনি বলছিলেন, ‍"তবে আমি যেভাবে বলেছি সবকিছুতেই ভালো খারাপ রয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় এনে ভালো করে পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ষুধুমাত্র সহায়তা করতে পারে। আসল প্রয়াস হতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে, স্থানীয় চাকুরীদাতাদের পক্ষ থেকে এবং শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের সাধারন মানুষের পক্ষ থেকে”।

বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য কাজ করছে ইউরোপ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্লিন ক্লোদস ক্যাম্পেইন। সোমবার এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ও আরেকটি এশিয়ান দেশের পোষাকশ্রমিকদেরপক্ষে ‘বেচে থাকার মত বেতন’ নামে একটি প্রচারণা শুরু করে।

বাংলাদেশের সর্বনিম্ন বেতন পুরো এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন, ঘন্টায় ৩৮ ডলার।

নেদারল্যান্ডের ক্লিনক্লোদস ক্যাম্পেইনের প্রতিনিধি এমা হারবর বললেন, পোষাক কারখানায় ভালো ইউনিয়ন প্রতিনিধিত্ব থাকলে কর্মীদের বেতন নিয়ে দরকষাকষি সহজ হয়। তিনি বলেন তারা পশ্চিমা ক্রেতাদের মধ্যেও এবিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এমা বললেন, “ইউরোপে ক্রেতাদের এবং তাদের সরকারের কাছে আমরা তুলে ধরছি যে নিম্ন মজুরী গ্রহনযোগ্য নয়। পোষাকের ব্র্যান্ড প্রতিষ্টান থেকে আমরা একটি অজুহাত শুনে থাকি যে ক্রেতারা বেশী দামে পন্য কিনতে চায় না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ২০ ইউরোর একটি টি শার্টের দাম মাত্র এক ইউরো বাড়ালেই বাংলাদেশের পোষাক শ্রমিকদেরকে বেচে থাকার মত মজুরী দিতে পারে কারখানা মালিকরা”।

পোষাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন বৃদ্ধির একটি ঘোষনা আগামী মাসে দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সরকার। ঢাকায় শিল্প বিশ্লেষকরা বলছেন বাংলাদেশ সরকার জানেন যে এই শিল্পের ব্যবসা যেনো চলে না যায় সেজন্য দেশের পোষাক শিল্পে সংস্কার প্রয়োজন। কারন পোষাক শিল্পই দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প যা বছরে ২০০০ কোটি ডলার আয় করে।
XS
SM
MD
LG