বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কিনা সে বিষযে, বৃহস্পতিবার গণভোটের আগে, দু পক্ষ, তাদের যুক্তি তুলে ধরছে। চার কোটি ৫০ লক্ষের বেশি ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রিভুক্ত আছেন। শুক্রবার ভোরে ফলাফল জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত ইউরোপের বাদবাকি দেশগুলোর সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর প্রভাব রাখবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষপাতি।
শুধু বৃটেনের প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষ নন, বলতে গেলে গোটা বিশ্বই আগামীকাল বৃহস্পতিবারের ‘ব্রেক্সিট’ গণভোট নামের এক ব্যতিক্রমী গণতান্ত্রিক উৎসবের ফলাফল জানতে উৎসুক থাকবেন। মনে করা হচ্ছে ইইউতে দেশটির থাকা না থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ বনাম ৫০ ভাগ। এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দিনটি হবে বছরের সবচাইতে উত্তপ্ত। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন দেশবাসীকে বলেন, আপনার জন্য, আপনার পরিবারের জন্য, সর্বোপরি দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন। দশম শতাব্দীতে গড়ে উঠা কিংডম অব ইংল্যান্ড ১৭০৭ সালে যুক্তরাজ্যে রূপান্তরিত হওয়া পরবর্তী ৩০৯ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব জড়িত আছে এমন একটি গণভোটে অংশ নিচ্ছে।
৩০ হাজার ভোটারের ওপর পরিচালিত একটি সমীক্ষার বরাতে চ্যাটম হাউজ বলেছে, যাদের ইইউ অপছন্দ তাদের বড় অংশ হয় ১৭ বছর বয়সের আগে স্কুল ছেড়েছে এবং বর্তমান চাকরিতে সন্তুষ্ট নয়, যাদের বয়স ৫৫-এর বেশি।
অপরদিকে যাদের ইইউ পছন্দ তারা উচ্চ শিক্ষিত এবং তাদের উপার্জনও অনেক বেশি। মঙ্গলবার রাতে বিবিসি আয়োজিত এক ধুন্ধুমার বিতর্কে যথারীতি অভিবাসন, উদ্বাস্তু, চাকরি-বাকরি ও অর্থনীতির বিষয়-আশয় প্রাধান্য পেয়েছে। তবে ইইউ ত্যাগের প্রবক্তা সাবেক লন্ডন মেয়র বরিস জনসন ৬ হাজার উপস্থিত জনতার অভিবাদনে সিক্ত হলেনÑ যখন তিনি বলেন যে, ‘ব্রেক্সিট’ হতে পারে বৃটেনের স্বাধীনতা দিবস। এই বিতর্কে বর্তমান মেয়র সাদিক খান বলেন, ইমিগ্রেশন প্রশ্নে যে প্রচারণা তা ভয়ের নয়, ঘৃনার। লন্ডন থেকে মতিউর রহমান চৌধুরী এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবারে গণভোটে বৃটেনের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁর ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন (ই ইউ)-এ থেকে যাবেন, না, ছেড়ে আসবেন। ভোটের ফল যদি বেরিয়ে আসবার পক্ষেই হয়, কি প্রভাব পড়তে পারে? বিশেষত, ভারতীয় শিল্প ও সাধারণ ভাবে ভারতীয়দের ওপর? এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন ভারত সরকার ও শিল্প পরিচালকেরাও। একটা মত হল, বৃটেনকে কেন্দ্র করে গোটা ইওরোপে ব্যবসা করা, বা, বৃটেনে নিজেদের উতপাদন কারখানা থেকে সারা ইওরোপে সামগ্রী বণ্টন করেন যে সব ভারতীয় শিল্পপতি, তাঁরা ভবিষ্যতে গোটা ইওরোপে অবাধ বাণিজ্যের সুবিধে আর পাবেন না। বসতে পারে নতুন মাশুল। অন্য ধারণা হল, বৃটেন ই ইউ ছাড়লে এখনকার মত ইওরোপীয় শ্রমিকেরা অবাধে বৃটেনে কাজ করতে পারবেন না। উল্টে কমনওয়েলথ-ভুক্ত দেশগুলি থেকে বেশি শ্রমিক বৃটেনে কাজ পাবেন। উপকৃত হবেন এই উপ-মহাদেশের লোকেরা। তবে এরও বিপরীত মত হল, বৃটেন ক্রমেই কমিয়ে আনবে ভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে আসা। আরেকটি দুশ্চিন্তা হল, বৃটেন ই ইউ ছাড়লে, আরও ই ইউ-ভুক্ত অন্যান্য দেশও বেরিয়ে যাওয়া শুরু করতে পারে। সেটা ভারতীয় বাণিজ্যের পক্ষে সমস্যাসঙ্কুল হয়ে উঠবে বলেই আশঙ্কা। বিস্তারিত জানিয়েছেন কলকাতা থেকে গৌতম গুপ্ত।