অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বেনজীর ভুট্টো হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পারভেজ মোশারফের বিরুদ্ধে


পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাস বিরোধী আদালত দেশটির সাবেক সেনা প্রধান পারভেজ মোশারফের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দুইবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রিয় রাজনীতিক বেনজীর ভুট্টো হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। ইসলামাবাদ থেকে আয়াজ গুলের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে লিখেছেন সেলিম হোসেন।

পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর রাওয়ালপিন্ডির গ্যারিসন শহরে শক্ত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে মঙ্গলবার আদালতের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র কুড়ি মিনিটের এই শুনানীতে আদালত কক্ষে সাংবাদিকদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।

অভিশংসক চৌধুরী মোহাম্মদ আজহার বলেছেন বিচারপতি যখন অভিযোগ পড়ছিলেন তখন সাবেক প্রেসিডেন্ট মুশাররফ ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ভয়েস অব আমেরিকাকে তিনি জানান তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার ষড়যন্ত্র এবং অপরাধ সংঘঠনে সহায়তার অভিযোগ করা হয়েছে।

চৌধুরী মোহাম্মদ আজহার বলেন “হ্যা, তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন এবং দোষ প্রমান করতে পারলে তার বিরুদ্ধে বিচার চলুক এমন সম্মতি দেন”।

পাকিস্তানে এই প্রথম কোনো সাবেক সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ করা হল, যেখানে এখনো পর্যন্ত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদেরকে আদালত কর্তৃক প্রশ্ন তোলার উর্ধে বলে বিবেচনা করা হয়।

দেশটির ৬৬ বছরের ইতিহাসে অর্ধেকটা সময়ই শাষিত হয়েছে সেনা বাহিনী দ্বারা, এবং হরহামেশাই ক্যু সংঘঠিত হয়েছে। ২০০৮ সালে ইমপিচমেন্ট এর হুমকীর মুখে প্রেসিডেন্ট মুশাররফ পদত্যাগ করার পর দেশটিতে গনতান্ত্রিক আইনের অব্যহত স্থিতি পরিলক্ষিত হলেও পররাষ্ট্র নীতিতে সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ অব্যহত রেখেছে।

সরকারী কৌশুলী আজহার বলেছেন মঙ্গলবার মিষ্টার পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে অনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল এই বিচার প্রক্রিয়া এবং মামলার পরবর্তী কার্য দিবস ধার্য হল ২৭শে আগষ্ট। ঐদিন আদালত তার বিরুদ্ধে প্রমানিদি রেকর্ড করবে।

মঙ্গলবারের শুনানীর পর মুশাররফের আইনজীবি আফশান আদিল আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে তার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে সেগুলোকে সাজানো আখ্যা দেন।

আফশান আদিল বলেন “সাবেক প্রেসিডেন্ট সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি কোনভাবেই ঐ মামালার সাথে সম্পৃক্ত নন। আমি মনে করি তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার একটিও তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়। আমি জানিনা এগুলো কিভাবে তার বিরুদ্ধে আনা হলো”।

১৯৯৯ সালে পারভেজ মুশাররফ সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন এবং সেনা শাষক হিসাবে প্রায় এক দশক দেশটি শাষন করেন। অনাস্থা প্রস্তাব আসার হুমকীর মুখে ২০০৮ সালে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেন এবং তার কিছুদিন পরেই অণুষ্ঠিত দেশের জাতীয় নির্বাচনে তার সমর্থকদের ভরাডুবির পর দেশ ছেড়ে চলে যান।

২০০৭ সালের ডিসেম্বরে যখন বেনজীর ভুট্টোকে হত্যা করা হয়, পারভেজ মুশাররফ তখন পাকিস্তানের শাষনকর্তা ছিলেন। কয়েক বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর বেনজীর ভুট্টো পাকিস্তান ফিরে রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করার সময় গুলী ও বোমা মেরে তাকেঁ হত্যা করা হয়।

তখন পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ বলেছিল তালেবান জঙ্গীরা তাকে হত্যা করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর জন্য সরকারের তরফ থেকে দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার কারনেই তাঁকে প্রান দিতে হয়, এমন অভিযোগের জবাবে মিষ্টার মুশাররফ দাবী করেন তিনি ভুট্টোকে বিপদ সম্পর্কে আগেই সাবধান করেছিলেন।

গত মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নিতে, এ বছর গোড়ার দিকে পারভেজ মুশাররফ স্বেচ্ছা নির্বাসন ছেড়ে পাকিস্তান ফিরে গেলেও তার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি। মিষ্টার মুশাররফের বিরুদ্ধে মামলাসমুহ প্রস্তুতকালে রাজধানী ইসলামাবাদে তার খামার বাড়ীতে তাকে বন্দী রাখা হয়।
XS
SM
MD
LG