অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সংঘাত সহিংসতার কারনে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত বিশ্বের ২ কোটি ৪০ লক্ষ শিশু


সেলিম হোসেন

ইউনিসেফের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বের ২ কোটি ৪০ লক্ষ শিশু সংঘাত সহিংসতার কারনে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এর ফলে ঐসব শিশু এবং তারা যেসব দেশের সেই দেশগুলোর ভবিষ্যত রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। জোডি কাপুয়ার রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন ও রোকেয়া হায়দার।

সংঘাত বিক্ষুব্ধ ২২টি দেশের শিশুদের অবস্থা নিয়ে গবেষণা করেছে ইউনিসেফ। শিক্ষা ও জরুরী অবস্থা বিশেষজ্ঞ লিসা বেন্ডার জানালেন ওই গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে।

“মূল বার্তা হচ্ছে সংঘাতের কারনে দিন দিন শিশুরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আর এ ক্ষতির স্থায়ীত্ব বাড়ছে। শিশুরা দীর্ঘ সময় স্কুলে যেতে পারছে না। স্কুলে না যাওয়া শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। স্কুলে থাকা অবস্থায়ও সহিংসতার কারনে তারা বিপদের মুখে পড়ছে। এই অবস্থায় আমরা উদ্বিগ্ন”।

গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে সংঘাত বিক্ষুব্ধ অঞ্চলসমূহের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০ কোটি ৯০ লক্ষ শিশুর মধ্যে প্রতি চারজনের একজন শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

“প্রাথমিকভাবে আমরা ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে গবেষণা করেছি। এর মধ্যে শিক্ষা জীবনের শুরু পর্যায়ের শিশুরা নেই”।

বেন্ডার বলেন ইউনিসেফের এই গবেষণায় সংঘাত বিক্ষুব্ধ দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে আফ্রিকার নতুন দেশগুলো।

“শিশুরা স্কুলে না যেতে পারা দেশের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে দক্ষিন সুদান। ওই দেশের অর্ধেকেরও বেশী শিশু স্কুলের বাইরে থাকে। নিজার রয়েছে এর দ্বিতীয় অবস্থানে যেখানে ৪৭ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না। সুদানে স্কুলে যেতে পারে না ৪১ শতাংশ শিশু। আফগানিস্তানে অবস্থার অনেক উন্নতি হলেও এখনো পর্যন্ত আফগানিস্তানে ৪০ শতাংশ শিশু স্কুলের বাইরে”।

সিরিয়ার প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয়; ইউরোপের অভিবাসন ও শরনার্থী সংকটের মূল কারন এই দেশটি। বেন্ডার বলেন এক সময় সিরিয়ার প্রায় সব শিমুই স্কুলে যেতো, এখন আর সে অবস্থা নেই।

“এখন সংঘাতের কারনে আমরা দেখছি সিরিয়ায় অনেক শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংঘাত বিক্ষুব্ধ এই দেশটি ছেড়ে নিরাপদ অশ্রয়ের উদ্দেশ্য চলে যাচ্ছে বহু মানুষ। ইউরোপের অভিবাসন সংকটের কথা আমরা জানি, সেখানকার লক্ষ লক্ষ অভিবাসি ও শরনার্থী শিশুদের কত অংশ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে যারা যৌথভাবে কাজ করছে সেইসব সংগঠনের মাধ্যেম আমরা ওইসব শিশুদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে তাদের সঠিক সংখ্যা নিরূপন করা কঠিন”।

ইউনিসেফের এই গবেষণায় দেখা গেছে শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া এই শিশুদের ভবিষ্যৎ ভীষণ ঝুঁকির মুখে।

“আমরা বলতে চাচ্ছি চাকরী পাওয়ার জন্যে যে যোগ্যতা প্রয়োজন তা তাদের অর্জিত হ্চ্ছে না। তাদের জীবন চালনার জন্যে দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে না”

একটি প্রজন্ম যদি এই দক্ষতা অর্জন ছাড়া বেড়ে ওঠে, বেন্ডার বলেন তবে তারা যে দেশের সেই দেশগুলোও দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যায় থাকবে। ওইসব দেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মেয়েরা যৌন নির্যাতনের শিকার হবে। সংঘাতের কারনে স্কুল ভবনেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

“আমরা দেখেছি বহু স্কুল ভবন ধ্বংস হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে। বহু স্কুল ভবন দখল করে রয়েছে সেনা বাহিনী অথবা শশস্ত্র জঙ্গী গোষ্ঠী। স্কুলের কাছেই অনেক সময় জঙ্গী বা সেনা ঘাঁটি হচ্ছে। তাতে স্কুলের বাচ্চাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছ”।

সংঘাত প্রবন অঞ্চলে শিক্ষার মান উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ন মানবিক প্রয়াস হিসাবে ধরে ইউনিসেফ ও তার অংশীদার সংস্থাসমূহ সাহায্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছে।

“অবস্থা ভালো হলে বাচ্চাদেরকে স্কুলে পাঠানো যাবে, এই ধরনের চিন্তা না করে, বাচ্চাদেরকে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে দেয়া যাবে না এই দর্শন নিয়ে কাজ করতে হবে”।

আর তা করতে হলে ইউনিসেফ বলেছে তারা একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছে যেখানে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা ও খেলাধুলার পরিবেশ পায় এবং স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বেড়ে ওঠে।

please wait
Embed

No media source currently available

0:00 0:04:09 0:00

XS
SM
MD
LG