অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নাগরিক অধিকার আন্দোলন ও নারী সক্রিয়কর্মীদের অবদান


আজ থেকে ৫০ বছর আগে নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিংএর ওয়াশিংটন মিছিলে সারা দেশ থেকে যোগ দিয়েছিলেন আনুমানিক ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে অনেক মহিলা ছিলেন। তারা রাজধানী শহরে এসেছিলেন বর্ণবৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে, সাম্যের দাবী জানাতে। তারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন নিজেদের অজান্তেই।

ওয়াশিংটন সমাবেশের অন্যতম আয়োজক রাজধানী শহরের বাসিন্দা ইলিওনর হোমস নরটন। বর্তমানে তিনি কংগ্রেস সদস্য এবং সেই ১৯৬৩ সালে নিউইয়র্ক শহরে ডঃ কিংএর ওয়াশিংটন মিছিলের প্রচার কাজ আর মিছিলারীদের ওয়াশিংটনে যাওয়ার জন্য যানবাহানের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিপুল সংখ্যায় মানুষজন ওয়াশিংটনে যাওয়ার জন্য সমবেত হন, আর সেই ভীড় দেখেই আমি উপলব্ধি করেছিলাম ওয়াশিংটন মার্চ অবশ্যই সফল হবে। আমরা অবাক বিস্ময়ে তা দেখেছি’।

থেলমা ডেলি - নাগরিক অধিকার সংগঠন এন এ এ সি পির বর্তমান চেয়ারপার্সন। ১৯৬৩ সালের ২৮শে আগস্ট কোথায় ছিলেন? তিনি তার বান্ধবী, ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নিগ্রো ওমেনর প্রেসিডেন্ট ডরোথি হাইটের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেন। থেলমা বলেন, ‘আমরা অবাক হয়ে দেখছিলাম কারণ আমরা সামনের সারিতেই ছিলাম। আমরা দেখলাম মানুষের ঢল নেমেছে। চারিদিকে জনসমুদ্র আর আমরা তারই অংশ। তখন অবশ্য হয়তো কেউই বুঝতে পারিনি আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছি। সেদিনের নারী কণ্ঠে সুরমূর্ছনা ছিল – ছিল না কোন বক্তব্য’।
অথচ মহিলারাই সেই আন্দোলনে সাহায্য করেছেন। তারা সেই ইতিহাসের অংশীদার। ১৯৬০ সালে নিউঅর্লিন্সে বর্ণবৈষম্য ভেদ করে স্কুলে যোগ দেয় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রী রুবি ব্রিজেস। তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে শিল্পী নরম্যান রকওয়েল তার অবিস্মরণীয় ছবি এঁকেছেন – যাতে দেখা যায় এক বালিকা, চুলে তার রিবন বাঁধা, হাতে কিছু বই-খাতা নিয়ে, কেন্দ্রীয় পুলিশের পাহারায় স্কুলে যাচ্ছে।

২০১১ সালে রুবি ব্রিজেস হল হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তার সেই অবিস্মরণীয় ছবিটির প্রদর্শনী ছিল সেখানে। রুবি বলেন, ‘ছবিতে আঁকা সেই ৬ বছরের বালিকা বর্ণবৈষম্যের বিষয়ে কিছুই জানতো না। আমি সেদিন কেবল স্কুলে যাচ্ছিলাম’।
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে আর এক ঘটনা। নাগরিক অধিকারের সঙ্গে যে নামটি যেন মিশে গেছে -রোসা পার্ক। ১৯৫৫ সালের কথা, এ্যালাবামায় দিনের শেষে ক্লান্ত রোসা বাসে চড়ে ঘরে ফিরছিলেন। বাসের পিছনে তাদের বসার নির্ধারিত জায়গা কিন্তু রোসা পার্ক সালনের দিকে বসেছিলেন, সেই আসন ছেড়ে সরে যেতে অস্বীকার করেন। তারপর থেকে একটি বছর কৃষ্ণাঙ্গ বাসিন্দারা বাস বয়কট করলেন।

এ বছর রাজধানী শহরে রোসা পার্কের মূর্তি উন্মোচন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘রোসা পার্কস আন্দোলন করে সম্মানের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করেন। তার একটি মূহুর্তের অবদান, আমেরিকাকে পরিবর্তন করেছে, এবং গোটা বিশ্বে পরিবর্তন এনে দিল’।

আজ ইতিহাস কথা বলে।
XS
SM
MD
LG