অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আরব বিশ্বের দুই বিকল্প: আসাদের ব্যারেল বোমা অথবা আইসিসের শিরোচ্ছেদ


আল কায়েদা আইসিস ও বোকো হারামের ন্যায় জঙ্গী গোষ্ঠির ছড়িয়ে দেয়া চরমপন্থী জঙ্গীবাদ নিরসনে কি কি বিষয় বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ, কিভাবে তা করা দরকার এসব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসির ইনস্টিটিউট অব পিসে বৃহস্পতিবার।

আলোচনার শুরুতে ইনস্টিটিউট অব পিসের নির্বাহী সহ সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম টেইলর স্বাগত বক্তব্যে বলেন সংঘাতের কারনে বিশ্বের ৬ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ গৃহহারা। বাড়ীঘর রাস্তায় ক্যাফে স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসী হামলায় সারা বিশ্ব লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়। আজকের আলোচনায় প্রেক্ষিতে এর কারন বের করতে হবে, এবং তা বন্ধে পরবর্তীতে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সংঘর্ষ ও জঙ্গীবাদে আক্রান্তদের কিভাবে সহায়তা করা যায়, কিভাবে তা বন্ধ করা যায় তা ভাবতে হবে, শুধু ভাবনা নয়, কাজে লাগাতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে বিশ্বব্যাপী।

“আমরা বিশ্বাস করি জঙ্গীবাদ নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমেই তা রোধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় বের করা সম্ভব। শান্তি প্রতিষ্ঠা করা দরকার সারা বিশ্বের জন্য। আপনারা চিন্তা করুন কিভাবে সংঘাত নিরসণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়”।

পিস ইনস্টিটিউটের রিজলভ নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় “ব্যারেল বোমা ও শিরোচ্ছেদ: চরমপন্থী জঙ্গীবাদের মূল উৎস” বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাভাল পোষ্ট গ্রাজুয়েট স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাফেজ।

তিনি বলেন “আরব বিশ্বের মানুষের সামনে এখন মাত্র দুটি পথ। বাশার আল আসাদের ব্যারেল বোমা মোকাবেলা অথবা আইসিসের শিরোচ্ছেদের আশংকায় থাকা, যা তারা সারা বিশ্বের মানুষদের ভিডিও করে দেখায়”।

তিনি বলেন এই সংকটের পেছনে দায়ী আরব বিশ্বের শুশাষন ও সরকারের প্রতি জনগনের আস্থা নিভর্রশীলতা ও বিশ্বাসের অভাব। সরকারসমূহ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্যে দু:শাষন ও দমননীতি জিইয়ে রাখে। আর এই দমননীতি ও জঙ্গীবাদ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।

তিনি বলেন, “আপাতদৃষ্টে এই বিরোধীশক্তি একে অন্যের ওপর ভর করেই টিকে আছে। ব্যাক্তি সমাজ সংসারের ওপর অরাজকতা সৃষ্টি কে টিকে রয়েছে তারা। আর সেই কারনেই উদ্ভব ঘটেছে আন্ত:প্রজন্মগত চরমপন্থী জঙ্গীবাদ”।

আরব বিশ্বে সৃষ্ট এই চরমপন্থী জঙ্গীবাদ এখন সমগ্র বিশ্বের বড় হুমকী যা নিরসন একক ব্যাখ্যায় দেয়া সম্ভব নয়।

“জঙ্গীবাদের মুলোৎপাটনে আমাদেরকে শ্রম মেধা নিয়োগ করে ভবিষ্যৎ বিকল্প পথ বের করতে হবে। ইসলামপন্থি মতবাদের দ্বারা যারা জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে তাদেরকে শক্ত হাতে দমাতে হবে ঐক্যবদ্ধ ভাবে। ব্যারেল বোমা আর শিরোচ্ছেদের হাত থেকে বাচাতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে”।

বক্তারা তুলে ধরেন মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গীবাদের উদ্ভব হয়ে কিভাবে তা সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করে এবং বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কিভাবে সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মকে জঙ্গীবাদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে।

ব্যাক্তিগতভাবে বা দলীয়ভাবে কেনো মানুষ চরমপন্থী জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে তার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক কারন ও দিকগুলো কি কিভাবে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব এসব উঠে আসে আলোচনায়।

আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে শুশাষন ও জঙ্গীবাদ নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসেডেন্ট হুমায়ুন কবীর। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশে জঙ্গীবাদী কার্যক্রম সহ নানা উদাহরণ তুলে ধরে এর কারন ও তা নিরসনের উপায় ব্যাখ্যা করেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর

“বাংলাদেশের প্রতি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে ভুল কারনে। বাংলাদেশ যদিও আমাদের বহু ইতিবাচক ভাল বিষয় রয়েছে। রয়েছে টেকসই উন্নয়নের পক্ষে উল্লেখযোগ্য হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নারীর উন্নয়ন, শিক্ষার উন্নয়ন, নাগরিক সমাজের উন্মেষ, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান ইত্যাদি। তবে এটা স্বীকার করতে হয় গত দেড় বছরের কিছু অনাকাংখিত ঘটনা আমাদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। বাংলাদেশ চরমপন্থী জঙ্গীবাদের সামনের সারিতে এসেছে”।

হুমায়ুন কবীর বলেন গত ৫ বছর বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় সফর করেছি এবং দেখেছি শুশাষনের অভাব, তরুন প্রজন্মের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সেটি আমাদেরকে বেশী দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তরুন প্রজন্মই যদি চলমমান প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে তবে তা বড় সংকটের দিকে নিয়ে যাবে।

তারা সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক সংঘাত উদ্বেগে ফেলেছে। এই সংকট থেকে উৎপত্তি ঘটছে জঙ্গীবাদের। শুশাষন ছাড়া সমাজে ন্যায় বিচারের অভাব, দুর্নিতী তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। ফলে জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে।

“আমরা দেখছি গত দেড় বছরে প্রাথমিতকভাবে টার্গেট করে খুন করা হতো। গত পহেলা জুলাই হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী ঘটনায় বিদেশিসহ কয়েক বাংলাদেশূ খুন হল। প্রশাসনের দুর্বলতায় এমন ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষ দুর্বল হলে মানুষ বিকল্প খোঁজে। বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে”।

দুই পর্বের প্যানেল আলোচনায় প্রথম পর্বে শুশাসন ও চরমপন্থী জঙ্গীবাদ বিষয়ে প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন এর চরমপন্থী জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ বিভাগের পরিচালক জর্জিয়া হোলমার, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইইসিস গ্রুপের নিউইয়র্ক অফিসের পরিচালক রিচার্ড এ্যাটউড, সংঘাত ও শান্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ শেরিল ফ্রাংক, Mercy Corps এর বেজা তেসফায়া।

জঙ্গীবাদ ও ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে পরের পর্বে আলোচনায় অংশ নেন এলিজা উরউইন, তাহির আব্বাস, ইমতিয়াজ গুল, এবং হাওদা এবাদী।

XS
SM
MD
LG