ভয়েস অফ আমেরিকা এবং ইউএসএআইডি’র উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য ও জেন্ডার বিষয়ক প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গত ৭ ও ৮ ডিসেম্বর বগুড়া এবং রাজশাহীতে প্রতিরোধযোগ্য মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পৃথক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় দুই বিভাগের প্রায় ৬০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা জানান, ইউএসএআইডি এবং ডিএফআইডি এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট (এনএইচএসডিপি) বাংলাদেশে ‘সূর্যের হাসি’ ক্লিনিকের মাধ্যমে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। গত বছর (২০১৪) থেকে প্রকল্পটি গর্ভবতী মায়েদের ক্ষমতায়নে ‘মায়ের ব্যাংক’, ‘রেড ফ্লাগ’ ও ‘তিনদিনের পাহারা’ নামে ব্যতিক্রমধর্মী তিনটি সেবা কর্মসূচী সারাদেশে বাস্তবায়ন করছে। অভিনব এই প্রকল্পগুলো কিভাবে মা ও শিশুর জীবন বাচাঁতে সহায়তা করছে তা সাংবাদিকরা পৌছেঁ দেবেন সাধারণ মানুষের কাছে এমন আশা প্রকাশ করেন এনএইচএসডিপি’র চিফ অব পার্টি ডা. হালিদা হানুম আখতার।
প্রতিরোধযোগ্য কারণে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে কর্মশালাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণের একটি মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিরোধযোগ্য মাতৃমৃত্যুর অবসান করা। সাংবাদিকদের বোঝানো, যেসব কারণে মাতৃমৃত্যু হচ্ছে এর ৯৯ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য। আমরা যদি ঠিকমতো সেবা পৌছেঁ দিতে পারি, সচেনতা আনতে পারি যারা সেবা নিবে তাদের মাধ্যমে এবং কম্যুনিটি ও পরিবারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারি তাহলে আমরা মাতৃমৃত্যু রোধ করতে পারবো। এ ব্যাপারে কিভাবে তারা লিখবেন, কিভাবে জনসাধারণকে সচেতন করবেন এরই একটা প্রচেষ্টা আমরা নিয়েছি।
প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সাংবাদিকরা স্থানীয় ক্লিনিক পরিদর্শণ করেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এই প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সাংবাদিকরা ক্লিনিক পরিদর্শণ করে সেখানে যারা সেবা নিতে এসেছেন, সেই মায়েদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা নিয়েছেন। তারা আমাকে বলেছিল, আপনি যেখানে রেড ফ্লাগ দিয়েছেন, যেখানে মায়ের ব্যাংক করেছেন এবং যেখানে তিনদিনের পাহারা করেছেন, আমরা সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে আরো স্টোরি করবো। এটা একটা বড় ইমপ্যাক্ট।
দুই বিভাগে সদ্যসমাপ্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি সমন্বয় ও সঞ্চালনা করেন ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের টেলিভিশন ও রেডিও ব্রডকাস্টার আহসানুল হক। কর্মশালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বগুড়া ও রাজশাহীর প্রানবন্ত কর্মশালা থেকে যেটি বেরিয়ে আসলো তা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ শিশুর জন্ম হয়। আর এই জন্ম দিতে গিয়ে প্রায় ৫ হাজার মা মারা যাচ্ছেন যা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন মৃত্যু। এই বিষয়টাই কর্মশালায় তুলে ধরা হয়েছে। ডু উই কেয়ার বা আমাদের কি কিছু যায় আসে? আমাদের এখানে কি করণীয়? এই ব্যাপারটিই আমরা তুলে ধরেছি আর সাংবাদিকরা তা মিডিয়ার মাধ্যমে তা মানুষের কাছে পৌছেঁ দিচ্ছেন।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় উঠে এসেছে, প্রসবকালীন সময়ের ৩ দিন আগে ও তিন দিন পরে মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। অথচ গর্ভবতী মা নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গেলে ও দক্ষ ধাত্রী সেবা নিলে নিরাপদ প্রসব এবং শিশুটিকে সুস্থভাবে পৃথিবীতে আনা সম্ভব হবে। এই তথ্যগুলো কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা সাধারণ মানুষকে সহজ ও বোধগম্যভাবে জানাবেন এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজকদের।
আঙ্গুর নাহার মন্টি, ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায় - ইউএসএআইডি ও ভয়েস অফ আমেরিকা