এ মাসের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বের দশ জন নারীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ এ্যাওয়ার্ড বা আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকতা পুরস্কার প্রদান করেছে। শান্তি, মানবাধিকার, লিঙ্গ সমতা, এবং সামাজিক অগ্রগতি’র ক্ষেত্রে তাঁদের অসামান্য অবদানের জন্যে সম্মানিত করা হয়েছে। এই নারীরা সমাজের অবিচার, অসমতা এবং নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন,রুখে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের সমাজ,সম্প্রদায়ের উন্নয়নের লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করেছেন। অন্যদের জন্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরী করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, যারা নারী’র বিরুদ্ধে অপরাধ’কে তুলে ধরেছেন; তুলে ধরেছেন জঙ্গীবাদী গোষ্ঠি ও স্থানীয় সংগঠণের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়; মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করেছেন এবং চেষ্টা করেছেন সংঘাত নিরসণে শান্তিপূর্ন উপায় বের করতে; রয়েছেন নারীর ক্ষমতায়নে সহায়তার লক্ষ্যে এনজিও’র প্রতিষ্ঠাতা, এবং রয়েছেন তাঁরা, যাঁরা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে নারীদেরকে সংগঠিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন একজন সেবিকা যিনি মরণব্যাধী ইবোলা রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে করতে নিজেই ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এবং সুস্থ্য হয়ে আবারো কাজে যোগ দেন; রয়েছেন আফগানিস্তানবিমান বাহিনীর প্রথম নারী পাইলট।
নাদিয়া শারমিন বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক এবং নারী অধিকার কর্মী। দুই বছর আগে তিনি যখন ঢাকায় একটি টেলিভিশন ষ্টেশনে কাজ করতেন, তখন তাঁর ওপর এক চরমপন্থী সংগঠণের ধর্মীয় বিক্ষোভ সমাবেশ কভার করার দায়িত্ব পড়ে। তখন ঐ সমাবেশের কিছু অংশগ্রহণকারীর সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে তাঁর ওপর আক্রমণ করা হয়, তাঁকে চরমভাবে মারধোর করা হয় এবং ভয়ানক আহত হন তিনি। যেখানে তিনি কাজ করতে তখন তাঁর সেই টিভি কতৃপক্ষ তাঁকে এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া থেকে বিরত রাখে, তার চিকিৎসা ব্যায় বহনে অস্বীকৃতি জানায় এবং তাকে চাকরী ছাড়ার জন্যে চাপ দেয়। অবশেষে নাদিয়া শারমিন অন্য একটি টেলিভিশনে চাকরী নেন।
“নির্যাতন, বৈষম্য সমাধান হতে পারে না, কারণ ভয় পেলে সমাস্যার কোনো সমাধান আসবে না”, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে নাদিয়া শারমিন একথা বলেন।
“এটা সত্য যে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বা সংগ্রাম যে শুরু করে, সেই বেশী ভুক্তভোগী হয়, ফলে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী নারী হিসাবে সমস্যার ভুক্তভোগি হতে হয়। তবে আমরা জানি আমরা যদি হঠে যাই, যারা আমাদেরকে অনুসরণ করছে, তারা নিরাশ হয়ে পড়বে, এবং সেটি কোনো ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে না, আমরা তাদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে পানরি না”।
“চরম সমালোচনা সত্বেও, অব্যহত হুমকী এবং বিপদের সম্ভাবনার মধ্যেও আমাদেরকে সত্য, ন্যায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জয়ী হতে হবে”, বলেছেন নাদিয়া শারমিন। “আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালি হয়ে ন্যাবিচার প্রতিষ্ঠা, সংঘাত ও নির্যাতন প্রতিরোধ এবং বিশ্বকে বদলে দেয়ার সংগ্রাম করতে পারি। তাই আসুন ঐক্যবদ্ধ হই, সামনে এগিয়ে যাই এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ি”।