অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জঙ্গীবাদ নিরসনে বিশ্বাসীকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান প্রেসিডেন্ট ওবামার


হোয়াইট হাউজে বুধবার শুরু হয়েছে জঙ্গীবাদ বিরোধী সম্মেলন। কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম শিরোনামে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বুধবারের প্রধান বক্তা ছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। জঙ্গীবাদ নিরসনে বিশ্বাসীকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানালেন তিনি। সম্মেলনের খবর সংগ্রহ করতে হোয়াইট হাউজে ছিলেন সেলিম হোসেন। শোনা যাক তার কাছে।

মিনিয়েপোলিস মুসলিম কমিউনিটি নেতা ইমাম বারলে’র কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম শিরোনামে জঙ্গীবাদ বিরোধী সম্মেলন। প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন ‘শুধু শক্তি প্রয়োগ করে জঙ্গীবাদ সমুলে নির্মূল সম্ভব নয়, এর বিরুদ্ধে সামাজিক ও ধর্মীয় সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে’। তিনি বলেন জঙ্গীরা ধর্মের নামে মিথ্যা আশা দিয়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণদেরকে জঙ্গীবাদে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন “মূলত তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। আর এজন্যই আইএসআইএল নিজেদেরকে ইসলামিক স্টেট নাম দিয়েছে। তারা প্রচার চালাচ্ছে যে যুক্তরাস্ট্র এবং পশ্চিমারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। একথা বলে তারা তরুণদেরকে তাদের দলে ভেড়াচ্ছে। আসলে তারা ধর্মীয় নেতা নয়, তারা সন্ত্রাসী, জঙ্গী”।

প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন ইসলামকে তারা খারাপ ভাবে ব্যাবহার করছে। বুঝতে হবে যে আমাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছি যারা ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে।

সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গী গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেট বা আইসিস যখন অস্ট্রেলিয়া ফ্রান্স ডেনমার্ক কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখন হোয়াইট হাউজের তরফে এই সন্ত্রাস বিরোধী সম্মেলনের আয়োজন করা হলো। ইসলামকে শান্তির ধর্ম আখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসলামের নামে যারা জঙ্গীবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে তাদের দমনে সকলের সমন্বিত সহয়তা কামনা করেন।

তিনি বলেন “ইসলাম কি বলে সে সম্পর্কে ইসলামী নেতৃবৃন্দ আজ এই সম্মেলনে এসে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন ইসলাম শান্তির কথা বলে, ন্যায় বিচার ও পরমত সহিষ্ণুতার কথা বলে। সন্ত্রাস সেখানে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরান বলে নিষ্পাপ মানুষ হত্যা মানে হচ্ছে মানবতাকেই হত্যা”।

প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন জঙ্গীরা কোনো ধর্মেরই নয়। তারা পাগলের মতো। পাগল যেমন নিস্পপ মানুষ খুন করতে পারে দতমনি তারাও মুসলমান নয়, খ্রীষ্টান নয় ইহুদী নয় বৌদ্ধ নয় হিন্দুও নয়। কোনো ধর্মই জঙ্গীবাদের জন্য দায়ী নয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মানুষেরই সৃষ্ট। তিনি বিশ্বাস করেন জঙ্গীবাদ রুখতে বিশ্ব সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ।

প্রেসিডেন্ট বলেন “আমার বিশ্বাস ২ শতাব্দী ধরে আমরা এই দেশে যেমন করে টিকে আছি তেমনিই থাকবো। আর জঙ্গীবাদ নিরসণে বিশ্ব সম্প্রদায় শুধু মত দেয়া নয় তা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে তারা অঙ্গীকার করেছে”।

সম্মেলনে সন্ত্রাস দমনে নেয়া মিনিয়েপলিস, লস এঞ্জেলেস, বস্টনসহ বেশ কয়েকটি শহরের পাইলট প্রোগ্রাম সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন প্রতিনিধিরা। মিনিয়াপেলিসের একজন মুসলিম কাউন্সিলম্যান বলেন মুসলমানদেরকে বুঝতে হবে যুক্তরাস্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব তাদের পক্ষেই রয়েছে।

“সন্ত্রাসীরা তরুনদেরকে বোঝায় যে যুক্তরাস্ট্র ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তা যে মিথ্যা সেটা সবাইকে বুঝতে হবে। অন্যদেরকে বোঝাতে হবে”।

সম্মেলনের প্রথমদিনে জঙ্গীবাদ নিরসণে তরুণদেরকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে বিষয়ে এক দলীয় বৈঠকে যুক্তরাস্ট্র, নর্দান আইল্যান্ড, সোমালিয়া ও পাকিস্তানের ৪ তরুণ তুলে ধরেণ তাদের বক্তব্য। সোমালী তরুণী ইলাওয়াদ এলমান, এলমান পিস নামের সংগঠনের মাধ্যমে কিভাবে বিপথগামী তরুণদেরকে পুনর্বাসন করছেন সেকথা ব্যাখ্যা করেন।

“সোমালিয়ায় যেসব তরুণ জঙ্গী গোষ্ঠি থেকে বিতাড়িত বা স্বেচ্ছসেবীর ন্যায় ত্যাগ করে চলে আসে বা আত্মসমর্পন করে তাদেরকে ধর্মের প্রকৃত অর্থ বুঝিয়ে ঠিক পথে আনি আমরা আর এতে বেশ ভালো কাজ হচ্ছে।

পাকিস্তানের জনপ্রিয় তরুন শিল্পী হরুন রশীদ বলেন তার অভিজ্ঞতার কথা।

“পাকিস্তানে আমরা সন্ত্রাসের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছি। জঙ্গীবাদ দমনে প্রাইভেট খাতকে এগিয়ে আসা উচিৎ। পাকিস্তানে তারা আসছেও। সম্প্রতি লাল মসজিদে প্রতিবাদ করতে আসে অনেকেই। জনপ্রিয় শিল্পিরা আসেন। টিভি শো বা গান এবং সিনেমার মাধ্যমেও সন্ত্রাস বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব”।

জঙ্গীবাদের সৃষ্টি কেনো হয় তার সামাজিক রাজনৈতিক পারিবারিক ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেন বিশেষজ্ঞরা। বেকারত্ব নিরসন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা, দুর্নীতি নিরসণ ও শুশাষন কায়েম করাসহ নানা পরামর্শ দেয়া হয় সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে।

আজ বৃস্পতিবার যুক্তরাস্ট্রের পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ে জঙ্গীবাদ বিরোধী সম্মেলনে যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাস্ট্রমন্ত্রী জন কেরী বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের পররাস্ট্র মন্ত্রীসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সরাসরি লিংক

XS
SM
MD
LG