অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আফগানিস্তানে সহিংসতা বৃদ্ধি বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আস্কারীর মূল্যায়ন


আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সপ্তার গোড়ার দিকেই একটি মিনি বাসের ওপর আক্রমণে ১২ জন নিহত হয় আফগানিস্তানে । সেখানকার একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠি হেজবে ইসলামি এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে । কেবল তাই-ই নয় খোদ আফগান বাহিনীর ভেতর থেকেও এই ধরণের হামলার ঘটনা হরদম ঘটছে। এ সব বিষয় নিয়েই পাকিস্তান থেকে একজন রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক হাসান আস্কারীর সঙ্গে কথা বলেছেন, সহকর্মি আনিস আহমেদ। এখন শুনুন সেই সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন:
সাক্ষাৎকার ভিত্তিক রিপোর্ট
please wait

No media source currently available

0:00 0:04:27 0:00
সরাসরি লিংক

আফগানিস্তানে সম্প্রতি সহিংসতার মাত্রা এবং এর ভয়াবহতা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে পাকিস্তানের ভাষ্যকার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আস্কারির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন “মনে হচ্ছে আফগানিস্তানের তালিবান তাদের ভূমিকা এবং অবস্থান সুদৃঢ় করতে চাইছে এমন এক সময়ে যখ্ন আমেরিকান ও নেটো সৈন্যরা বিভিন্ন জেলায় ক্রমশই তাদের দায়িত্ব আফগান সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত করছে। আর এই পরিবর্তনের সময়ে তারা তাদের কর্তৃত্ব প্রদর্শন করতে চাইছে, নেটো আর আমেরিকানদের এ কথা বোঝাতে যে তালিবান আসলেই একটি শক্তি। তা ছাড়া আফগান সেনাবাহিনী , যারা সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে তাদেরকেও এ কথা বোঝানো যে তাদের আরও কঠিন পরিস্থিতির মোকবিলা করতে হবে। আফগান সেনাবাহিনীর আস্থা ও মনোবল কমিয়ে দেবে এবং তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। । তারা এমনিতেই পেশাগত দক্ষতার দিক দিয়ে দূর্বল । সুতরাং তালিবান মনে করে এই ভাবে তারা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে । ”
তবে হাসান আস্কারী যা বলছেন সেটা যেন একটা ধাঁধার মতোই কারণ এ ধরণের আক্রমণের যৌক্তিকতাই বা কি , যখন বিশেষত ২০১৪ সাল নাগাদ সেখান থেকে নেটো এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে ঘোষণাই দিয়েছে ?
হাসান আস্কারি মনে করেন যে তারা এই সব আক্রমণ চালাচ্ছে আফগান সরকারকে প্রধানত আফগান সরকারকে এবং সেনাবাহিনীকে তাদের শক্তিশালী অবস্থান ও অস্তিত্ব সম্পর্কে জানাতে চাইছে এবং এটাও জানাতে যে আফগান সেনাবাহিনীকে অনেকগুলো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
এই পর্যায়ে তারা নতুন করে তাদের কর্তৃত্বের কথা ঘোষণা করতে চায় বলে আস্কারি মনে করেন।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে যে তালিবান ছাড়া অন্যান্যরাও তো হামলা চালাচ্ছে , যেমন কয়েকদিন আগে হেজবে ইসলামি বলে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আক্রমণ চালানোর দায় স্বীকার করেছে। তা ছাড়া খোদ আফগান বাহিনীর অভ্যন্তর থেকে ও জোট বাহিনীর সৈন্যদের ওপর এক ধরণের অন্তর্ঘাতী আক্রমণ চালিয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লিওন পানেটা নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই অভ্যন্তরীণ আক্রমণ সম্পর্কে বিশ্লেষক হাসান আস্কারীর মন্তব্য হলো যে “দেখুন নানান রকম গোষ্ঠি সেখানে প্রবেশ করেছে যেমন ধরুন , হেজবে ইসলামি এবং আরো বেশ কয়েকটা। হেজবে ইসলামির একটা অংশ সংসদে বসেছে আবার অন্য অংশটা কারজাই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচেছ এবং হাক্কানি গোষ্ঠি ও আছে। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশ্লেষন যে শুধু মাত্র হাক্কানি গ্রুপই সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে , সেটা অংশত ত্রুটিপূর্ণ । কারণ এখন তো আমরা জানি যে হাক্কানি গ্রুপ ছাড়াও অন্যান্য গোষ্ঠিও এই সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আর এটাও সন্দেহ করা হয় যে এদের প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু লোক আফগান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে থাকতে পারে এবং মাঝে মাঝে তারা ভেতর থেকেই বিদ্রোহ করে। ”
সম্প্রতি ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানায় যে তারা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান কমিয়ে দিচ্ছে । তা হলে এর ফলে আফগান সৈন্যদের মধ্যে থেকে এই যে অভ্যন্তরীণ আক্রমণ সেটা কি বৃদ্ধি পাবে ? হাসান আস্কারির জবাব ছিল যে তিনি মনে করেন যে যারা আফগান সেনাবাহিনীতে আছে , তারা বেশ কিছু দিন ধরে তাদের ইচ্ছে মতো কর্মকান্ড করতে পারে। তবে যৌথ অভিযান কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো সৈন্যদের হতাহতের সংখ্যা কমবে । তবে এর ফলে অাফগান বাহিনী তালিবানের বিরুদ্ধে স্বার্থক ভাবে লড়াই করতে হয়ত পারবে না। তিনি বলেন আফগান সেনাবাহিনী দুটি প্রধান সমস্যায় জর্জিত। প্রথমত , এটি অত্যন্ত মাথভারি সেনাবাহিনী। মাত্র দু বছরের পুরোনো এই সেনাবাহিনীতে হিসেব করে দেখুন ক জন পূর্ণ জেনারেল আছেন , ক ‘জন লেফট্যানেন্ট জেনারেল আছেন। আর দ্বিতীয়ত পেশাগত মান অত্যন্ত নিম্ন। সুতরাং ভেবে দেখার বিষয় যে আমেরিকানরা আফগানিস্তান থেকে চলে গেলে কি হবে ?
তা হলে কি আস্কারী মনে করেন যে শেষ পর্যন্ত আমেরিকান ও নেটো সৈন্যরা চলে আসার পর তালিবানরা সেখানকার ক্ষমতা দখল করবে ?
তিনি বলেন যে সেটা যে হবেই এমন কোন কথা নেই। তারা ক্ষমতা দখলে সফল না ও হতে পারে কিন্তু তারা সেখানকার জীবনকে অত্যন্ত দূর্বিসহ করে তুলতে পারে। তারা হয়ত কোন কোন প্রদেশে শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে পারে। হাসান আস্কারী বলছেন যে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ও হতে পারে যেখানে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে শাসন করবে। তারা হয়ত কাবুল দখল করতে পারবে না কিন্তু তারা কাবুল সরকারের জন্যে জীবন দূর্বিসহ করে তুলবে।
XS
SM
MD
LG