অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে: ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা


ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক নতুন প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। যে কারনে অপুষ্ট ও স্থুলতায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই সংস্থা দুটি, জ্যাঙ্ক ফুড ও চিনি যুক্ত খাবারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রনের আহবান জানিয়েছে। ভয়েস অফ আমেরিকার রন কর্বেন এর প্রতিবেদন শোনাচ্ছেন রোকেয়া হায়দার ও তাওহীদুল ইসলাম।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুদের অপুষ্টি ও স্থুলতার কারনে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া প্রচন্ড স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখোমুখি। যা ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, ফিলিপাইনস এবং থাইল্যান্ডের মত মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য দ্বিগুন বোঝা হিসাবে দেখা দিয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিশুর অপুষ্টি ,ইন্দোনেশিয়াতে শিশুর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। যার বাৎসরিক ব্যয় ভার প্রায় ২ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার।

ইউনিসেফ ‌এর আঞ্চলিক পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডরোথি ফুট, সমস্যাটিকে উঠতি সংকট বলে অভিহিত করেছেন। যা শিশুর পুষ্টি এবং সাধারন পুষ্টি মান- উভয়কেই প্রভাবিত করে। ভয়েস অফ আমেরিকাকে ডরোথি ফুট বলেন-

“ইউনিসেফে আমরা বিশেষভাবে শিশুদের নিয়েই উদ্বিগ্ন। কিন্তু সাধারণ ভাবেও আমাদের সংকট আছে। যা কেবল পরিবার ও সম্প্রদায়গুলোকে নয়, সরকার ও সমাজের ওপর প্রভাব ফেলছে। যা ‘double burden’ বা দ্বিগুন বোঝাকে দারুনভাবে বাড়িয়ে তুলছে।“

প্রতিবেদনের জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দেশেই প্রায় সমান সংখ্যক শিশু অতিরিক্ত ওজন এবং অপুষ্টিতে ভুগছে। ইন্দোনেশিয়াতে ১২ শতাংশ শিশু স্থুলতায় এবং ওই একই শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডে ক্রমবর্ধমান অপুষ্টির কারনে এরই মধ্যে সাত শতাংশ শিশু আক্রান্ত। ওদিকে ১১ শতাংশ শিশু স্থুলতায় ভুগছে।

স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি না হওয়া শিশুর সংখ্যা আনুপাতিক হারে লাওসে সবচেয়ে বেশী। যা ৪৪ শতাংশ। এছাড়া কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়াতেও স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া শিশুর উচ্চ হার লক্ষ্য করা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার এক কোটি ৭০ লাখ স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া শিশুর মধ্যে এক কোটি ২০ লাখ শিশু ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে বাস করে।

ডরোথি ফুট বলছিলেন, শিশুরা সথেষ্ট খাবার পায় না। যা তাদের উচ্চতা এবং অভ্যন্তরীন গঠনে প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে ঐ অঞ্চলের শিশুদের স্থুলতা সমস্যা আকাশচুম্বী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য সমস্যার প্রধান কারন জ্যাঙ্ক ফুড, উচ্চ ট্রান্স ফ্যাট বা চিনি যুক্ত পানীয় এবং নিন্ম পুষ্টি মান। প্রতিবেদনে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং অলস জীবনধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারনে গ্রামাঞ্চলে "অস্বাস্থ্যকর পণ্যের বৃহৎ বাজার গড়ে উঠে। যা গরীব ও মধবিত্ত পরিবারগুলোর কেনার সমর্থ রয়েছে। ফলে তারা স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করার পরিবর্তে ঐগুলোই গ্রহন করে। ডরোথি ফুট বলেন-

“ফলে আমরা বিশেষ করে দু’বছরের কম বয়সী শিশুদের মাঝে নিন্মমানের খাবার গ্রহনের প্রবনতা দেখতে পাই। যে কারনে উচ্চ পর্যায়ের অপুষ্টির ফলে স্থুলতা ও অতিরিক্ত ওজনের প্রবনতা বাড়ছে।“

ইউনিসেফে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারগুলোর উচিৎ জ্যাঙ্ক ফুড ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়ের বাজারজাতকরনের ওপর নিয়ন্ত্রন বাড়ানো এবং স্কুলে ঐ ধরনের খাবারের সহজলভ্যতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।

শিশুর অপুষ্টির বিষয়টি মায়ের সঙ্গেও সংযুক্ত। অনেক মা বুকের দুধ দেয়া বন্ধ করে দিয়ে সম্পূরক হিসাবে বাজারজাত শিশু খাদ্য দেন। যেখানে গুঁড়ার মিশ্রনের জন্য যে পানি ব্যবহার করা হয়, তা পরিস্কার নয়।

প্রতিবেদনে সরকারগুলোর প্রতি-নবজাতক ও শিশুদের খাবার খাওয়ানোর চর্চা উন্নত করা, অপুষ্ট শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া, কৃষিজাত পন্যের বৈচিত্র ও স্বাস্থ্যবিধির চর্চা বাড়ানো এবং মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানানো হয়। এবং ঐ প্রতিবেদনে সামগ্রিক দারিদ্র্যের মাত্রা কমিযে আনতে অব্যাহত পদক্ষেপ নিতে সরকারগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়।

XS
SM
MD
LG