অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"ই-খানঅ আইয়া মনডাত শান্তি পাইয়ার": নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাংবাদিক কর্মশালা, প্রতিবেদন ৫


‘কিলা বাইচ্চাডারে বাঁচাইমু দিশবিশ পাইতাছিলাম না। ই-খানঅ আইয়া মনডাত শান্তি পাইয়ার!’ এভাবেই শিশুসন্তানের সুচিকিত্সা নিশ্চিত করতে পেরে এক মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে তিনি এক সন্তান জন্ম দিয়েছেন। জন্মের পর থেকেই বাচ্চাটি জন্ডিসে ভুগছিল। এরপর থেকেই মূলতঃ চিকিত্সকদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে সুস্থ রয়েছে তাঁর সন্তান।

গত ২৮ মে দুপুরে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি এবং আরও পাঁচ নারী সন্তানদের চিকিত্সা নিচ্ছিলেন হাসপাতালে স্থাপিত নবজাতকের বিশেষায়িত সেবা ইউনিটে। বাংলাদেশে এটাই একমাত্র শিশুমৃত্যু রোধে স্থাপিত বিশেষ ইউনিট বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিত্সকেরা। আর এখান থেকেই সুফল পাচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মা ও শিশুরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ইউএসএইডের সহায়তায় ‘নবজাতকের বিশেষায়িত সেবা ইউনিট’ চালু করা হয় ২০১৩ সালের ১ মার্চ থেকে। শিশুর জন্মের পর যেসব রোগ দেখা দেয়, তা প্রতিরোধে এখানে চিকিত্সা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। ইউনিটটি চালু হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সর্বমোট ১ হাজার ৯৫ জন শিশু এখানে চিকিত্সা গ্রহণ করেছে। এখানে সাধারণতঃ ১ থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুদের চিকিত্সা করা হয়।

বিশেষ সেবা ইউনিটের সেবিকা সানজিদা শারমিন ও মুক্তা আক্তার জানান, অনেক শিশু জন্মের পরপরই নানাবিধ অসুখে ভুগতে থাকে। জন্ডিস, ওজন কম হওয়া, শ্বাসকষ্ট কিংবা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শিশুর জন্মের কারণে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সে-সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিত্সার আওতায় শিশুদের আনা সম্ভব হলে সে ঝুঁকি একেবারেই দূর হয়ে যায়। আর জৈন্তাপুরে এই বিশেষ ইউনিট চালু হওয়ার পর থেকে এ-ধরনের ঝুঁকি অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।

গত ২৮ মে সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, তখন ওই ইউনিটে পাঁচ জন শিশু চিকিত্সাধীন ছিল। এছাড়া ওইদিন হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে আরও ৭২০ জন চিকিত্সাসেবা গ্রহণ করেছে। এদের কারো কম ওজন, কারো জন্ডিস এবং কেউবা নির্ধারিত সমযের আগে জন্মগ্রহণজনিত সমস্যায় ভুগছিল। হাসপাতালে চিকিত্সাধীন শিশুর দুইজন অভিভাবক জানান, এখানে শিশুর ভর্তির পর তারা এখন আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ রয়েছে। ধীরে ধীরে তাদের বাচ্চাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

বিশেষায়িত ইউনিট সূত্র জানিয়েছে, এক সঙ্গে ১৪ জন শিশু এখানে চিকিত্সা নিতে পারে। জন্মকালীন সময়ে শিশুদের যেসব রোগের উপসর্গ দেখা দেয়, তা দূর করতেই মূলতঃ বিশেষায়িত ইউনিট চালু করা হয়েছে। সাধারণতঃ সাত দিন পর্যন্ত শিশুদের এখানে রেখে চিকিত্সা করা হয়। তবে অবস্থার উন্নতি না-হলে শিশুদের আরও বেশিদিনের জন্য এখানে রাখা হয়।

নবজাতকের বিশেষায়িত সেবা ইউনিটের উপজেলা সমন্বয়কারী রিক্তা দাশ বলেন, ‘প্রসবকালীন সময়ে সিলেটে সাধারণ শিশুমৃত্যুর হার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। এ অবস্থায় জৈন্তাপুরের মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ-ধরনের চিকিত্সা ইউনিট স্থাপন করাটা এ অঞ্চলের জন্মগ্রহণকারী শিশুদের জন্য খুবই সহায়ক। সাধারণ মানুষও এর সুফল ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছেন। এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ উপজেলায় প্রসবকালীন সময়ে শিশুমৃত্যুর হার কমে আসছে।’

সুমনকুমার দাশ

সিলেট প্রতিনিধি, প্রথম আলো

XS
SM
MD
LG