অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে শক্তিশালি দ্বিপাক্ষিক ও বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বিদ্যমান


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রো মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং এই সফরের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা সহ নানা বিষয়ে অর্জন কি তা নিয়ে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে এখন শক্তিশালি দ্বিপাক্ষিক ও বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বিদ্যমান। আর সেই কারনে বৈশ্বিক নানা সংকটে দুই দেশের যৌথ ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।

সরাসরি লিংক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রো মোদীর সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফেরর ফলাফল কি তা বুঝতে হলে শুধুমাত্র এই সফরের ফলাফল নয, গত এক দশকে দু’দেশের সম্পর্ক কেমন ছিল তা দেখতে হবে, অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে একথা বললেন দক্ষিন ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল।

nisha
nisha

তিনি বলেন, দুটি দেশেরই আগের প্রশাসন অর্থাৎ যুক্তরাস্ট্রের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই সম্পর্কের ভীত রচনা করছিলেন; সিভিল নিউক্লিয়ার চুক্তির মধ্যে দিয়ে।

“তারই ফলস্বররূপ আজ আমরা দেখছি এই সম্পর্ক একটা আকার গ্রহণ করছে। বানিজ্য অর্থনীতি নিয়ে নানা পরিকল্পনা হচ্ছে। ৬টি পারমানবিক রিয়্যাক্টর তৈরি হচ্ছে ভারতে যার মধ্যে দিয়ে ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে যা সরবরাহ করা হবে ৬ কোটি মানুষের মধ্যে। এতে করে দুই দেশেই হাজার হাজার চাকুরী সৃষ্টি হবে”।

নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, ওবামা প্রশাসনের এশিয়া রিব্যালান্স পরিকল্পনায় ভারতের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব এখন একটি গুরুত্বপূর্ন অবস্থানে পৌঁছেছে।

“এটি এমন কৌশল যাতে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি অনেকটা নির্ভর করে, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির ওপর। আর দুই দেশের কৌশলগত পরিকল্পনা যা গত বছর শুরু হয় তাতে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক লক্ষ্য ও স্বার্থ”।

“আমার বিশ্বাস প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর প্রথম টার্মে যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন যে একুশ শতকের জন্যে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ন অংশীদারিত্বের সম্পর্ক। আমি বিশ্বাস করি এই সপ্তাহের কর্মসূচীসমূহ সেই লক্ষ্য পূরণ হতে যাওয়ার লক্ষন পরিস্কার হচ্ছে”।

অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান বক্তা যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত অরুণ কে সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রো মোদী তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিনেই বিভিন্ন থিংক ট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আর সে আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল এই মুহুর্তে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে গোটা বিশ্বের কি বেশি প্রয়োজন?

“সেসব বিষয় মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত, সেই লক্ষ্য পূরণে একসঙ্গে কি করতে পারে, সেটি এই সফরের একটি উদ্দশ্য ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র বৈঠক, কংগ্রেসে তাঁর দেয়া বক্তব্য; সবকিছুই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিশ্বের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্যে কি করা যায়, ছিল তা নিয়ে আলোচনা”।

রাষ্ট্রদূত সিং বলেন, সেসব লক্ষ্য পূরণে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, রয়েছে ইতিবাচক অনেক বিষয়ও। সেগুলো মাথায় রেখেই আমাদেরকে এগুতে হবে; সেভাবেই আমরা এগুচ্ছিও।

“অতীতের দুরত্বের সম্পর্ক থেকে একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি এখন আমরা। এমনকি বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকার পরও আমরা সেসব সমাধানে একত্রে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলছি”।

ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রিচার্ড আর ভার্মা বলেন, গনতান্ত্রিক দেশ হিসাবে চরমপন্থী জঙ্গীবাদীদের দমনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে; রয়েছে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব। সেই বিবেচনায় ভারতকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক নিরাপত্তা অংশীদার বলে মন্তব্য করেন।

“সোজা কথায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক নিরাপত্তা অংশীদার”।

নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি খাতের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মা বলেন,

“একটি হচ্ছে সাইবার হুমকী, পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য সমস্যা, রোগ, সম্পদের অভাব, এসব ছাড়াও রয়েছে বহু সমস্যা যার প্রায় সবই বলা যায় নিরাপত্তা সংকট। সেই সংকট কাটাতে হলে আমাদেরকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে; অর্থনীতি রাজনীতি সকল কিছু বিবেচনায় রেখে। আর তাই আমরা করছি”।

অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনা পর্বের আলোচক রাষ্ট্রদূত ও লেখক জি পার্থসারথীর কাছে, বাংলাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি, ব্লগার, লেখক, ধর্মীয় যাজক হত্যাসহ নানা বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী কি এ নিয়ে মন্তব্য করতে বললে তিনি বলেন এসব বাংলাদেশের মানুষদের নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে।

“যদি আমরা প্রতিবেশিদের সব অভ্যন্তরীন বিষয়ে মন্তব্য করতে শুরু করি, তবে তা ঠিক নয়। তাহলে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি বলে আর কি থাকলো? বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে; এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। আমরা আশা করবো বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং শান্তিতে বসবাস করবেন”।

তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশর দারুন বন্ধুত্ব রয়েছে। আশা করি তারা সংকট কাটিয়ে উঠবেন”।

হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের এশিয়ান ষ্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক ওয়াল্টার লোহম্যন ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক শরিয়া ডোভালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত পার্থসারথী, সংসদ সদস্য বিজয়ান্ত পান্ডা, ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক ভাইস এ্যাডমিরাল শেখর সিনহা, এ্যামেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের আবাসিক ফেলো সদানন্দ দুমে এবং কার্নেগি এনডোওমেন্ট ফা ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র এ্যাসোসিয়েট এশলী জে টেলিস।

XS
SM
MD
LG