অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের মূল্যায়ন করলেন ড: আব্দুল মোমেন


জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন
জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এবার জলবায়ু নিয়ে কানকুন সম্মেলনে বাংলাদেশ যোগ দিচ্ছে একটি বিশেষ লক্ষ্য সামনে রেখে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশে উপকূল এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ডুবে যাবে বিস্তির্ন অঞ্চল। এই অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এই বিপুল সংখ্যক মানুষের পুর্নবাসনের জন্যে যে বিশাল অর্থ ও অন্যান্য সাহায্য প্রয়োজন, এই সম্মেলনে বাংলাদেশ সে বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষন করবে, একথা বলছেন জাতিসংঘে বাঙলাদেশের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত ড: আব্দুল মোমেন।

কানকুন সম্মেলনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কোন ইস্যুগুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে?
এই প্রশ্নের জবাবে ড: আব্দুল মোমেন বলেন যে, গত বছর কোপেনহেগেন সম্মেলনে প্রধান বক্তব্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। আর এবার কানকুন সম্মেলনে তারা আশা করছেন যে কি ভাবে একটা বাস্তবসম্মত এ্যাকশন প্রগ্রাম তৈরি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে । যেমন এডাপটেশন মিটিগেশন টেকনোলজি ট্রান্সফার, কিংবা গ্রিন ফান্ড। এই ফান্ডের ওপর বেশ জোর দেওয়া হবে। এই ফান্ড কিভাবে সংগ্রহ করা যায়, তার ওপর সম্প্রতি ইউ এন সেক্রেটারি যে কমিটি বসিয়েছিলেন তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। আট ভাবে এই ফান্ড সংগ্রহ করার চিন্তা ভাবনা করেছেন তারা। প্রথম তিন বছরে ত্রিশ মিলিয়ন, এবং পরবর্তী সব বছরগুলোতে একশো বিলিয়ন করে ফান্ড সংগ্রহ করা হবে। বাংলাদেশ স্বাভাবিক ভাবেই এই ফান্ডের ওপর জোর দেবে। তারা ইতোমধ্যেই নিজেদের একটি বড় আকারের ফান্ড তৈরি করেছেন। তারা আশা করছেন এই ফান্ডগুলো এ্যাডাপটেশন মিটিগেশন এসবের জন্যে ফান্ডটা যেন পাওয়া যায়।
অর্থ অনুদানের অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি শিল্পন্নত দেশগুলো দেয় বটে কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে সব দেশকে তা দেওয়া হবে বলে বলা হয় তারা তা সব পায় না। এ বিষয়ে ড: মোমেন বলেন একথা ঠিক বড় বড় দেশগুলো বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু টাকাটা আর আসে না। আর তার একটি বড় কারণ যারা এটা দেবে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, এখনো প্রতিকুল পরিবেশের ঘা এদের ওপর খুব একটা আসছে না। তাই অর্থ দিতে এরা আগ্রহী নয়। এখানে কেউ আরো বেশি ট্যাক্স দিতে রাজি না। এ জন্যেই যেটা প্রয়োজন বিশ্বজুড়ে একটা বড় রকমের আন্দোলন করা। যাতে কনসটিটিউয়েন্সি তৈরি করা যায় যারা তাদের আইন প্রনেতাদের ওপর জোর করতে পারবে। এখনো অ্যামেরিকায় একটা বড় সংখ্যক লোক মনে করে না যে আবহাওয়ার কারনে মানুষের দুর্গতি হচ্ছে বা বিশ্বব্যাপি আবহাওয়া উষ্ণ হচ্ছে।

বিরুপ জলবায়ুর কারনে বহুদেশে উপকূল এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। এমনকি এ্যামেরিকার ভার্জিনিয়া রাজ্যেও একটা অংশে সমুদ্রের পানি ইতোমধ্যেই জোয়ারের সময় শহরের রাস্তায় ঢুকতে শুরু করেছে। অ্যামেরিকার জনগন এ বিষয়ে সচেতন নয়?
ড: মোমেন বলছেন, দিন দুয়েক আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস্ এর একটি খবর ছিল ভার্জিনিয়ার উপকূল অঞ্চলের কিছু লোক জোয়াড়ের সময় গাড়ি পার্কিং করার জন্যে হিসাব নিকাশ করে। কিনতু এর পরিমান খুব নগন্য। বাংলাদেশে ২০ থেকে ৪০ মিলিয়ন লোককে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই বিরাট সংখ্যক লোককে কিভাবে রিহ্যাবিলিটেইট করা হবে? এ জন্যে জাতি সংঘে তারা জোরগলায় বলছেন যে এ্যাডাপটেশন মিটিগেশন টেকনোলজি ট্রান্সফার গ্রিন ফান্ড এর সাথে আর একটি বড় এ্যাপরুভাল নিতে হবে – সেটা হল ক্লাইমেট মাইগ্রেন্ট। এদের পুর্নবাসনের দায় দায়ীত্ব সমগ্র বিশ্ব বাসীর নিতে হবে। এ জন্যে একটা বড় রকমের ফান্ড বাংলাদেশের দরকার।
এই ধরনের বাস্তুহারা মানুষদের কিভাবে পুর্নবাসন করা যেতে পারে তা নিয়ে কি কোন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে না?

এটা নিয়ে বাংলাদেশ কথা বলছে, কিন্তু বিশ্ব সভায় এটা এখনো বড় আকার ধারন করে নি। তবে ক্রমাগতভাবে বলতে থাকলে আগামীতে এটাও আলোচনায় অর্ন্তভুক্ত হবে। এখন বলা হচ্ছে এরা অভ্যন্তরীনভাবে স্থানচ্যূত মানুষ। অভ্যন্তরীন স্থানচ্যুত বলে এরা এদের দায় দায়ীত্ব সেই দেশের ওপর ছেড়ে দিতে চায়। ড: মোমেন বলছেন এরা স্থানচ্যুত হয়েছেন তোমাদের কারনে। এজন্যে এদেরকে পুর্নবাসনের জন্যে তোমাদেরও দায়ীত্ব নিতে হবে। অন্যান্য দেশে সহানুভূতির সংগে এদের পুনবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ, তাদের সংগে কিছু কিছু দ্বীপ রাষ্ট্র যারা অনেকেই পানির তলায় তলিয়ে যাবে। উষ্ণতার যে গতি শুরু হয়েছে, তা কমবে না। বাংলাদেশ বলছে যারা এর জন্যে দায়ী তাদের ওপর এর জন্যে দায়ীত্ব দিতে হবে। যেমন অ্যামেরিকাকে বলতে হবে, স্থানচ্যূত মানুষদের এত অংশ তারা তাদের দেশে গ্রহন করবে। যদিও এ নিয়ে আলোচনা খুব কম হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশ এটার প্রতি খুব জোর দিয়ে বক্তব্য পেশ করা অব্যাহত রাখবে।

সংশ্লিষ্ট

XS
SM
MD
LG