মর্জিনা আখতার, বয়স ২১। সোমবার দুপুরে তার প্রথম সন্তানের জন্ম হয় চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকার “সূর্যের হাসি ক্লিনিকে”।
সুস্থ সবল সন্তান জন্ম দিতে পেরে মর্জিনার চোখে মুখে ধরা দিচ্ছে অনাবিল প্রশান্তি। দু’বছর আগে মো. শাহীনের সঙ্গে বিয়ে হয়। শাহীন দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমজীবি। মর্জিনার অনেক আবদারই তার পূরণ করার সাধ্য ছিল না। কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে তার যত্ন-আত্তির কোনো কমতি ছিল না।
“আমি খুব সুখী, আমাদের অনটনের সংসারেও আমার স্বামী বিয়ের প্রথম দিন থেকেই নিজের সাধ্যমতো আমার প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন।” ক্লিনিকের বেডে নবজাতককে কোলে নিয়ে এভাবেই মর্জিনা তার সরল অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
“দেখা গেলো, আমি যখন গর্ভবতী হলাম তখন আমার প্রতি তার (স্বামীর) যত্ন-আত্তি আরও বেড়ে গেলো”- বলছিলেন মর্জিনা। “আমাদের পরিবারের সচেতনতার কারণেই এ সময়ে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা এবং পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকেরা বলেছেন, আমার স্বাভাবিক ডেলিভারির সম্ভাবনা বেশি।
মর্জিনার কাছ থেকে জানা গেছে, তার ২০বছর বয়স হওয়ার আগেই সে গর্ভধারণ না করে সে ব্যাপারে সে এবং তার স্বামী উভয়েই সতর্ক ছিল।
“আমি আমার স্বামীকে বলেছিলাম আমার ২০ বছর হওয়ার আগে আমি গর্ভধারণ করবো না। আমার স্বামীও তা মেনে নেন।”
এ সময়ে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। মর্জিনার মা নাসিমা বেগম ক্লিনিকে তার দেখাশুনা করছিলেন। তিনি বলেন, তার মেয়েকে ১৮ বছর বয়সের পর বিয়ে দিয়েছেন। “আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে, ১৮ বছরের আগে কোনো ভাবেই আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো না।”
যদিও তার মা নাসিমা ততটা শিক্ষিত নন, কিন্তু প্রজননকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ে তাদেরকে অনেক সচেতন মনে হয়েছে। মর্জিনা জানায়, সে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এরপর অভাবের সংসারে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে নি। বাসা বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তার মা নাসিমার স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়নি। এরপরও তারা টেলিভিশনের বিভিন্ন প্রচারনা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ পেয়ে এ বিষয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন।
সূর্যের হাসি ক্লিনিকের সেবিকা মনিকা বড়–য়া জানালেন, মর্জিনা এবং তার বাচ্চা ভালো আছে। তারা বুধবারের মধ্যেই বাড়ি ফিরে যেতে পারবে।
ক্লিনিক পরিদর্শনের সময়ে ইউএসআইডি ডিএফআইডি হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্টের চিফ অব পার্টি ডা. হালিদা এইচ আখতার বলেন, গত ১০ বছরে দেশে মাতৃমৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ কমেছে সচেতনতা বৃদ্দির কারণে।
ইউএসএআইডি বাংলাদেশে হেলথ সিস্টেমস ষ্ট্রেংদেনিং প্রজেক্টর টিম লিডার ডা. উম্মে মীনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রজননকালীন সচেতনতা দিন দিন বাড়ছে। ইউএসএআইডির প্রজেক্টগুলো এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
রিপোর্ট তৈরি করেছেন ঃ
নিজাম হায়দার সিদ্দিকী, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক পূর্বকোন।
অরুন বিকাশ দে, স্টাফ রিপোর্টার, দি ডেইলি স্টার।
মো. রাশেদুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আজাদী।
এফএম মিজানুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার, দি ডেইলি ঢাকা ট্রিবিউন।