সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা তীব্রতর হয়ে উঠছে। তবে বাংলাদেশের রাজধানী শহরের নৃশংস সন্ত্রাসী আক্রমণ সে দেশকে এবং আন্তর্জাতিক মহলকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী এই পরিস্থিতি নিয়ে রোকেয়া হায়দার কথা বলেছেন হেরিটেজ ফাউণ্ডেশনের সিনিয়ার রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিসের সঙ্গে। আসুন শোনা যাক।
রমজান মাসের শেষের দিক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন ইসলামী জঙ্গীবাদী হামলা বৃদ্ধি দেখেছি, তারই মধ্যে গত সপ্তাহে বাংলাদেশে বর্বোরোচিত সন্ত্রাসী হামলা এবং আজ একটি ঈদগাহে হামলা সমাজে আতংকের সৃষ্টি করছে। এই জঙ্গীবাদ বৃদ্ধির কারণ কি? হেরিটেজ ফাউণ্ডেশনের গবেষক লিসা কার্টিস বলেন,‘আমি মনে করি সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেট একটা চাপের মধ্যে রয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র এবং স্থানীয় বাহিনীর যৌথ অভিযানে ইসলামিক স্টেট পরাস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে যে সব বিদেশী তাদের সঙ্গে জঙ্গীবাদী লড়াইএ যোগ দিয়েছে তাদের নিজের নিজের দেশের সঙ্গে একটা যোগাযোগ রয়েছে। সিরিয়াতে একটি বাংলাদেশী চক্র কাজ করছে, তারা ইসলামিক স্টেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে হয়তো তৎপর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশীদের এই ধরণের একটি চক্র সিঙ্গাপুরেও ধরা পড়ে যারা বাংলাদেশে গিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাবার পরিকল্পনা করছিল। স্পষ্টতঃই ইসলামিক স্টেটের বাংলাদেশের দিকে নজর রয়েছে’।
ইসলামিক স্টেটের বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি দেবার কারণ কি? এ সম্পর্কে লিসা কার্টিস মনে করেন,‘তারা সেখানে কিছু সুযোগ দেখতে পেয়েছে। সে দেশের রাজনৈতিক বিভেদ, দূর্নীতি, দূর্বল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, তারা এই ধরণের পরিস্থিতিরই সুযোগ নিতে চায়। এবং বস্তুতঃ তারা গত সপ্তাহে সেটাই করেছে। ভয়ংকর আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা আশা করবো ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে উঠবে এবং এই পরিস্থিতি একযোগে মোকাবেলা করবে।’
বর্তমানে আল কায়দা ও ইসলামিক স্টেটের মধ্যে বিভিন্ন দেশে তাদের প্রাধান্য প্রভাব বিস্তারের একটা প্রতিযোগিতা চলছে। ভারত বাংলাদেশে সেই একই অবস্থা। লিসা কিভাবে তা বিশ্লেষণ করেন, ‘ভারতীয় উপমহাদেশে আলকায়দা এবং ইসলামিক স্টেটের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা চলছে, বিশেষ করে বাংলাদেশে। সাম্প্রতিককালে ইসলামিক স্টেট তাদের দাবিক ম্যাগাজিনে বাংলাদেশ সম্পর্কে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। আর ২০১৪ সালে আল কায়দার নেতা জওয়াহিরি যে সব দেশের ওপর আল কায়দা নজর দেবে তার মধ্যে ভারত ও বার্মার সঙ্গে বিশেষভাবে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে, তারা ওইসব দেশে স্থানীয় গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবে। ইসলামিক স্টেট যেমন জে এম বির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ওদিকে আল কায়দা আনসারউল্লা বাংলা টিমের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তুলেছে। তারা কয়েকজন ব্লগার হত্যার জন্য দায়ী। এইভাবে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে।’
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কাটিযে ওঠার জন্য কি করা উচিত! হেরিটেজ ফাউণ্ডেশনের গবেষক লিসা কার্টিস বলেন,‘সরকারকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলের ওপর দোযারোপ বন্ধ করতে হবে। জিহাদিরা এই পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। সরকারকে সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।কিভাবে জিহাদীরা দেশে প্রবেশ করছে, বিস্তার লাভ করছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ যারা বিশ্বব্যাপী ইসলামিক স্টেটের তৎপরতা অনুসন্ধান করছে, তাদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমেই সেটা করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যৌথ সহযোগিতায় তরুন সমাজকে যেভাবে ইসলামিক চিন্তাধারায় মগজ ধোলাই করা হচ্ছে তা রোধ করা সম্ভব।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা প্রসঙ্গে লিসা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্র-সরঞ্জাম, প্রযুক্তি রয়েছে। গোপন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারে। যেমন মুম্বাই হামলার পর, সেই হমলার নেপথ্যে কারা ছিল, সেটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতায় অনুসন্ধান কাজ চালায়। এখন বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হুমকীর মুখে বাংলাদেশেরও উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অতীতের যে কোন টানাপোড়েন সরিয়ে রেখে, বর্তমানে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ যে সন্ত্রাসী হুমকীর সম্মুখীন, তাদের বৃহত্তর স্বার্থে তিনটি দেশের মধ্যে সহযোগিতায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করা উচিত।