অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া


সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান চালনোর ব্যাপারে কংগ্রেসের অনুমোদন নেবার সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

দামেস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে, ইরানের সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান আলা এদ্দিন বোরোজুরদি বলেছেন, তেহরান রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের প্রতি তীব্র নিন্দা জানায়। তবে, তিনি অভিযোগ করেছেন, বিদ্রোহীরা, সরকারী সেনাদের বিরুদ্ধে হাতে তৈরি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরীয় বিদ্রোহীদের মধ্যে সুন্নি মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন দিচ্ছে, যা ‘আগুন নিয়ে খেলা’র শামিল।

রোববার কায়রোতে সিরিয়ার সংকট বিষয়ে আলোচনার জন্যে, আরব লীগের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা, বেশ কয়েকটি আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন।
সউদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাউদ-আল-ফায়সাল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, সিরিয়ার সংঘাতের এখনই ইতি টানতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, সিরিয়ার জনগণকে এই রক্তপাতের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে আরব লীগ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যা করা দরকার তা করতে হবে।

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাবিল ফাহমি বলেছেন, তাঁর দেশ শক্তি প্রয়োগের বিরুদ্ধে। তবে, তিনি এ নিয়ে জেনেভায় একটি শান্তি সম্মেলনের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক আদালতেই এই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিচার হওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেছেন, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের একটি আইনগত এবং নৈতিক দিক আছে। আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। মিশর এই বিষয়ে সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিপক্ষে।

শনিবার, সারা পৃথিবী জুড়ে প্রতিবাদকারীরা সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। ফ্রান্স, জার্মানী, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান, তুরস্কসহ হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধ-বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

এদিকে, সিরিয়ার মিত্র, রাশিয়ার প্রেসিডেণ্ট ভ্লাদিমির পুতিন, প্রেসিডেণ্ট বাশার-আল-আসদের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “সিরিয়ার সরকারী বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে, কয়েকটি এলাকায় তারা বিদ্রোহীদের ঘিরে ফেলেছে। এই অবস্থায় যারা সারাক্ষন সামরিক সাহায্য চাইছে, তাদের সাহায্য করে জয়লাভের সুযোগ করে দেয়ার কোন মানে নেই। এর পেছনে কোন যুক্তি নেই। বিশেষ করে যেদিন জাতিসংঘের পরিদর্শকরা এসে পৌঁছোল। আমার আর কোন সন্দেহ নেই, এটি আসলে, সিরিয়ার সংঘাতে যারা অন্য দেশকে টেনে আনতে চায় তাদের একটা কৌশল। তারা ক্ষমতাশালী আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের সাহায্য চায়, প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের”।

রয়টার্স জানিয়েছে, ফান্সের অভ্যন্তরীন মন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস রোববার বলেছেন, ফ্রান্স একা সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সমর্থনের জন্যে অপেক্ষা করবে।

এদিকে, পাকিস্তান আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়া সিরিয়ায় ওবামা প্রশাসনের হামলা চালানো রুখে দেবে। প্রধানমন্তীর জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যদি সেখানে রাসায়নিক অস্ত্র আইন লংঘন করা হয়ে থাকে, তাহলে, কোন একটি দেশ নয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে”।

অ্যাম্নেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে সিরিয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে পাঠানোর জন্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আবেদন জানিয়েছে। তাঁরা আরো বলেছে, সিরিয়ার সরকারের ওপর যেন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের যেন সিরিয়া পাঠানো হয় যাতে তাঁরা সিরিয়ায় মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে।
XS
SM
MD
LG