অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

২১শে মার্চ প্রেসিডেন্ট ওবামার কিউবা সফর নিয়ে প্রতিক্রিয়া


সেলিম হোসেন

গত প্রায় ৯০ বছরের মধ্যে বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কিউবা সফর করছেন। যুক্তরাষ্ট্র - কিউবা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ২১শে মার্চ সেই ঐতিহাসিক দিন ঠিক করা হয়েছে, যেদিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ফার্ষ্ট লেডী মিশেল ওবামা দ্বীপ দেশটি সফর করছেন। অরু পান্ডে ও ক্যাথরিন জিপসনের তথ্য নিয়ে করা রিপোর্ট শুনুন সেলিম হোসেনের কাছে।

please wait

No media source currently available

0:00 0:05:05 0:00
সরাসরি লিংক

দ্বীপ দেশ কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এই সফরের জন্যে সমাজতান্ত্রিক জাতি রাষ্ট্রটিকে অপেক্ষা করতে হলো প্রায় এক শতাব্দী। কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণার ১৪ মাসের মধ্যে এবং মাত্র ছমাস আগে, গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারন অধিবেশনের ফাঁকে, কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাষ্ট্রো এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাক্ষাতের ফলাফল হিসাবে দুই নেতা আবারো মিলিত হচ্ছেন কিউবার মাটিতে।

হোয়াইট হাউজের উপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রডস বলেন, “আমরা এটিকে দেখছি সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরণের বিষয়টি এগিয়ে নেয়ার উপায় হিসাবে; যুক্তরাষ্ট্র কিউবার মধ্যে বানিজ্যিক অংশীদারিত্ব বাড়ানো; এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য নানা বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগীতা বৃদ্ধির উপায় হিসাবেও”।

কিউবায় ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা সার্বজনীন মূল্যবোধের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।

বেন রডস বললেন, কিউবায় মৌলিক অধিকারের কথা বলতে গিয়ে যারা নির্যাতন বা গ্রেফতারেরর শিকার হন তাদের সম্পর্কেও কথা বলবেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। তবে মানবাধিকার বিষয়ে এ্যাতো উদ্বেগ থাকার পরও এই মুহুর্তে কেনো এই সফর সে প্রোশ্নে বেন রডস বললেন: “কিউবায় না গেলে বা দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলে মানবাধিকার লংঘন সহ যেসব বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে তা সমাধানের পথে এগুনো সহজ হবে না; কউবার জনগনের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে না, যতোক্ষন ঐসব বিষয় নিয়ে সরাসরি আলোচনা না হয়”।

ব্ল্যাক চ্যানেল টু কিউবার যৌথ লেখক এবং গবেষক পিটার কর্নব্লু বললেন, কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিকরনের লক্ষ্যে যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে ওবামার এই ঐতিহাসিক সফরেরর উপযুক্ত সময় এটি।

“এসব যেনো কেউ পাল্টে ফেলতে না পারে; যেমন এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কো রুবিও অথবা টেড ক্রুজ কিংবা জেব বুশ যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হনও, তবো যেনো কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ এবং দেশটির সঙ্গে এই সম্পর্ক স্থায়ী থাকে”।

হোয়াইট হাউ কর্মকর্তারা জানান তারা আশা করছেন আগামী মাসে প্রেসিডেন্ট ওবামার কিউবা সফর, বানিজ্যিক বা সাংস্কৃতিক যেভাবেই হোক, কিউবার জনগনের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে, দারুন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এদিকে এই সফরকে ঘিরে হাভানা এবং ওয়াশিংটনে নানা মহল থেকে শুরু হয়েছে নানান রকম প্রতিক্রিয়া। শোনা যাক কিউবার জনৈক এই শ্রমিকের বক্তব্য: “পোপ আসার পর আমরা যা দেখেছি ওবামা এলেও তাই হবে। পোপ এসেছিলেন, তাতে কি হলো? ওবামা এলেও তাই হবে। আগে যা ছিল এখনো তেমনই আছে”।

গত বছর কিউবায় পোপের ঐতিহাসিক সফর প্রত্যক্ষ করেন কিউবানেরা। তারা চান ওবামা সফরে এলে তিনি যেনো কিউবানদের জীবন মানের সঠিক অবস্থাটা বুঝতে পারেন। তারা চান প্রেসিডেন্ট ওবামা যেনো দেখেন কিউবানরা কিভাবে বেঁচে থাকে? যেমনটি বললেন হাভানায় জনৈক নারী: “তাঁর উচিৎ হবে দরিদ্র এলাকা ঘুরে দেখা। তাকে আমাদের এই হত দরিদ্র এলাকায় নিয়ে আসুন তাহলে তিনি বুঝবেন কি বাজে অবস্থায় বেঁচে আছে কিউবায় মানুষজন”।

যুক্তরাস্ট্রের সঙ্গে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে কিউবা বলছে- দেশটিতে ধিরে ধিরে পরবর্তন আসছে। তবে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট ওবামার সফরকে দেখা হচ্ছে অর্থনৈতিক সুবিধার অংশ হিসাবে।

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্বিদ্যালয়ের কিউবা ডকুমেন্টেশন প্রকল্পের কর্মকর্তা পিটার কর্নব্লু: “আমি আশা করবো তিনি কিউবার মেকানিক, শিল্পি, প্রাইভেট সেক্টরের উদ্যাক্তাদের সঙ্গে মিলিত হবেন, যাতে সেখানে তারা বাজার ভিত্তিক অর্থনীতি চাঙ্গা করার প্রেরণা পান”।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার সফর কিউবায় মানুষের ওপর দারুন প্রভাব ফেলবে।

“সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র যতো বেশী কিউবানদের সহযোগিতা করতে পারবে, তা তাদের জীবন উন্নয়নে ততো বেশী কাজে লাগবে:”।

কিউবানদের এখনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত, গত বছর যুক্তরাস্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর নানা ধরনের গ্রেফতারেরর পরিমান দেশটিতে বেড়েছে।

প্রেসিডেন্ট ওবামার সফরের মধ্যে দিয়ে দেশটির মানবাধিকার নিয়ে আলোচনার একটি পথ খুলতে পারে। বলছিলেন এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মারসেলা গনজালাভেস মার্গারিন: “আসলে যে পরিবর্তনগুলো দরকার তা হচ্ছে মানুষের মত প্রকাশের এবং বিশেষ করে ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা"।

“আমি আশা করি এই সফরের মধ্যে দিয়ে দুদেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে”।

কিউবানরা আশা করছেন প্রেসিডেন্ট ওবামার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটবে যা তাদের জন্যে বয়ে আনবে সমৃদ্ধি।

XS
SM
MD
LG