অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রিও অলিম্পিকের খরচ ৪৫০০ থেকে ৬০০০ কোটি ডলার


অলিম্পিকে এবার খরচ হয়েছে চার হাজার পাঁচ’শো থেকে ছয় হাজার কোটি ডলার। যা বহুদিন পরেও শহরবাসীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। এবারের অলিম্পিকে ১০ হাজারেরও বেশী খেলোয়াড় অংশ নিয়েছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যেও ভিন দেশে জন্মগ্রহণকারী অভিবাসী আমেরিকান রয়েছেন। ভয়েস অফ আমেরিকার পার্ক ব্রুয়ার ও জেফ সুইকর্ড এর প্রতিবেদন থেকে জানাচ্ছেন তাওহীদুল ইসলাম।

please wait

No media source currently available

0:00 0:03:08 0:00

অলিম্পিকে নানা দেশের ১০ হাজারেরও বেশী খেলোয়াড় অংশ নিয়েছেন। তবে অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৫০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যেও কিন্তু ভিন দেশে জন্মগ্রহণকারী অভিবাসী আমেরিকান রয়েছেন।

আমাদের স্পোর্টস ডেস্কের সাংবাদিক পার্ক ব্রুয়ার রয়েছেন রিওতে। পার্ক জানিয়েছেন, এবার আমেরিকার একজন ফ্রিস্টাইল মল্লযোদ্ধা এদেশে এসেছেন বুলগেরিয়া থেকে। তেরভেল ডলাগনেভের বাবা-মা তার যখন মাত্র তিন বছর বয়স, সেইসময় বুলগেরিয়ার সোফিয়া শহর থেকে পালিয়ে যান। সেখানে তখন কম্যুনিজম ভেঙ্গে পড়ছিল, তবে কম্যুনিস্ট শাসন ছাড়া বিকল্পও কেউ জানতো না কি হতে পারে। সেই অনিশ্চয়তার মধ্যে তার পরিবার দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়।

সোফিয়া থেকে অস্ট্রিয়ার শরণার্থী শিবিরের আশ্রয় নেয়া ডলাগনেভ তার শিশু বয়সের স্মৃতি ভুলতে পারেনি। তিনি বলেন-

“সেখানে সব পরিবার ঘাসে ভরা একফালি মাঠে একসঙ্গে মিলে আলাপ আলোচনা করতো, আর ছোট ছেলেমেয়েরা সেখানে যে বিল্ডিং ছিল তার চারপাশে দৌড়ে বেড়াতো। ঐ বাড়ীর সব দরজা খোলা থাকতো, সবাই সবার ঘরে যেতে পারতো। সে যেন বিশাল এক পরিবার।“

ডলাগনেভের বাবা আমেরিকার অভিবাসনের কাগজপত্র পাওয়ার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। টেক্সাসের সীমান্ত এলাকায় কাজ শুরু করেন। ছেলেকে ইংরেজী শিখিয়েছেন এবং ডলাগনেভ হাইস্কুলে গিয়ে খেলায় অংশ নিতে শুরু করে। নেব্রাস্কার বিশ্ববিদ্যালয়ের মল্লযুদ্ধ দলে ভর্তি হন এবং ৮ বছর ধরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। ২০১২ সালে লণ্ডন অলিম্পিকের পর এবার রিওতে ৫ম স্থানে ছিলেন।

আচ্ছা অলিম্পিকে এবার খরচ কেমন হলো? বলা হচ্ছে, চার হাজার পাঁচ’শো থেকে ছয় হাজার কোটি ডলার। তবে লণ্ডন অলিম্পিকের চাইতে অনেক কম।

আমাদের সংবাদদাতা জেফ সুইকর্ড যেমন জানাচ্ছেন, রিও’র খরচ বহুদিন পরেও শহরবাসীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। যেমন ড্যানিয়েল কাম্পোস বেশ কষ্টের আয়ে তার বাড়ী তৈরী করেন। ২০১২ সালে পুলিশ গিয়ে চড়াও হয়ে বলে, এ বাড়ী ভাঙ্গতে হবে। কারণ সেখানে অলিম্পিক পার্ক থেকে খেলোয়াড়দের ভেন্যুতে যাওয়ার পথ তৈরী করা হবে। অনেক মহল্লা পরিচ্ছন্ন করার জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হয়।

রবার্ট মুগা একটি এনজিওর গবেষণা পরিচালক তিনি বলেন, “এদেরকে প্রকৃতপক্ষে রাতারাতি এবং অনেক ক্ষেত্রে জোর করে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ভয় দেখিয়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। অলিম্পিকের এক ভয়ংকর স্মৃতি।’

৭৪ বছর বয়স্ক এনিডা সুসা বলেন, নগর কর্মকর্তারা তাকে ঘর থেকে জোর করে সরিযে এক আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চায়। তিনি বলেন-

“যখন চলে যেতে বলা হলো, আমি তো দারুণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রতিবেশীদের বাড়ীঘর নিতে দেখে দুঃখ হয়েছিল। তারপর শোকে দুঃখে আমি অসুস্থ হয়ে যাই।“

নগর কর্মকর্তারা তার অবস্থা দেখে বলেন, “আপনার কোথাও যাওয়ার দরকার নেই”। কিন্তু তার ঘরবাড়ীর ক্ষয়ক্ষতি কেউ পূরণ করেনি। যা বর্ণালী উচ্ছল অলিম্পিকের আর এক অন্ধকার রূপ, যা হয়তো বা প্রতিটি অলিম্পিকেরই এক দুঃখজনক অংশ।

XS
SM
MD
LG