অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নেব্রাস্কার ওমাহায় আফগানিস্তান বিষয়ক তথ্যের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা


১৯৭৯ সালে মধ্য এশিয়ার দেশ আফগানস্তান যে প্রায়শই গণমাধমের শিরোনাম হতো, সে বিষয়ে অধিকাংশ আমেরকানেরই ধারণা কম। তখন সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে সমাজতান্ত্রিক একটি সরকার ছিল, আর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তখন থেকেই। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের ওমাহাস্থ ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কার সঙ্গে একমাত্র শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ ছিল আফগানিস্তানের। সাংবাদিক ও পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞরা ওমাহায় গিয়ে আফগানিস্তান বিষয়ক তথ্য ও পরামর্শ নিতেন। এ নিয়ে গ্রেগ ফ্লাকাসের (Greg Flakus) প্রতিবেদন শুনাচ্ছেন সেলিম হোসেন ও শেগুফতা নাসরিন কুইন:

প্রশ্ন হচ্ছে, কয়েকটি ইন্সুরেন্স কোম্পানী, কিছু কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, কিছু খাদ্য প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান সম্বলিত মিসৌরী নদীর পাড়ের মধ্যম আকারের শহর নেব্রাস্কার ওমাহা’য় আফগনিস্তান বিষয়ক কি এমন বিশেষত্ব ছিল?

১৯৭২ সালে, ক্রিশ্চিয়ান জাং নামের এক তরূণ ভূগোলের শিক্ষক ওমাহায় ঐ বিশ্বিবদ্যালয়ে শুরু করেন, আফগানিস্তান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একমাত্র গবেষণা কেন্দ্র। ১৯৭৪ সালে ঐ গবেষণা কেন্দ্রে আর্থার পল নামের, আফগানিস্তান সরকারের ১৯৬০ এর দশকের অর্থণেতিক উপদেষ্টা কতৃক দেয়া বই ও নানা সরঞ্জামাদি দিয়ে একটি আর্কাাইভ গড়ে তোলা হয়। আর সেই থেকেই আফগানিস্তানের বাইরে আফগানিস্তান বিষয়ক তথ্যের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা হয়ে ওঠে সেটি।

একই বছর মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ক্রিশ্চিয়ান জাং মারা যান এবং আফগানিস্তানে শান্তি মিশনের সাবেক স্বেচ্ছাসেবক টম গৌটিয়েরে’কে Tom Gouttierre আফগানিস্তান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচলক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। আফগানিস্তানে মিষ্টার টম হিসাবে ব্যাপক পরিচিত সেই রোগা পাতলা কর্মঠ লোকটি পরবর্তী ৪১ বছর আফগানিস্তান সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেন।

টম ও তার স্ত্রী ম্যারিলু ১৯৬৫ সালে শান্তি কর্মী হিসাবে আফগানিস্তান যান শিক্ষকতা করতে। সেখানকার তরুণ শিক্ষার্থীরা তাকে বাস্কেটবল কোচ হিসাবে পেতে চান। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীদেরকে বাস্কেটবল শেখান। টমের তত্বাবধানে ঐ স্কুল আফগানিস্তানের বেশকিছু স্কুলকে বাস্কেটবলে পরাস্ত করায় তার আমন্ত্রন আসে দেশের জাতীয় দলের কোচ হবার; এবং ১৯৬৭ সালে তার স্ত্রীর শান্তি কর্মী হিসাবে দায়িত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাই করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার কয়েক বছর পর আবারো তিনি বাস্কেটবল কোচিং বিষয়ে ফেলোশিপ নিয়ে কাবুল বিশ্বিদ্যালয়ে যান। ততোদিনে তিনি দারি ভাষা শিখেছেন। সেখানে তিনি পরিচিত হন হামিদ কারজাই, খালেদ হোসেইনির মতো বিখ্যাত কিছু ব্যাক্তিদের সঙ্গে; যারা পরবর্তীতে বিশ্ববিখ্যাত হন।

১৯৭৪ সালে ওমাহায় ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কায় আফগানিস্তান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হবার পর টম তার আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা সেই দেশটির প্রতি তার ভালবাসা সবকিছু দিয়ে আমেরকানদেরকে আফগানিস্তান বিষয়ক তথ্য সরবরাহে সহায়তা করেন।

বিগত বছরগুলোতে তিনি এবং তার দল, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা এবং আফগানিস্তান থেকে আসা ভিসিটিং স্কলাররা কিছু কিছু প্রকল্প হাতে নেন যা আফগানিস্তানের মানুষদের জন্য উপকারে লাগে এবং আফগানিস্তান ও ওমাহার সম্পর্ক দৃঢ় হয়।

দারি ও পাশতু ভাষায় এই কেন্দ্র থেকে বহু পাঠ্যবই ছাপা হয়, যা সোভিয়েত দখলদারিত্বর সময় এবং পরে তালিবান শাষনামলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বহু শরনার্থী শিবিরে পঠিত হয়। তালিবান শাষণামলে ওমাহায় এই গবেষণা কেন্দ্রে বেশ কিছু আফগান শিক্ষক এনে তাদেরকে ৫ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেই শিক্ষক যাদের অনেকেই নারী, দেশে ফিরে অন্যান্যদেরকেও যেনো প্রশিক্ষন দিতে পারে সেটিও নিশ্চিত করা হয়। আফগানিস্তান গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল রাশিম ইয়াসির বললেন, বিষয়টি আফগানিস্তানে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপকভাবে সহায়তা

৭৫ বছর বয়সী টম গাওটার গেল জুলাইতে অবসর নেন। তিনি এবং তার স্ত্রী মারিলু ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের পাশেই বসবাস করছেন এবং এখনো, সময়ে সুযোগে বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করে চলেছেন।

গবেণষণা কেন্দ্রের নতুন পরিচালক ৩৭ বছর বয়সী শের জান আহমাদজাই তার প্রথম দিকের শিক্ষা জীবনে এই গবেষণা কেন্দ্রের ছাপানো বই পড়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের প্রশাসনে কাজ করেছেন। তিনি এই গবেষণা কেন্দ্রের একজন শক্ত অনুরাগী। তিনি ও তার সহকর্মীরা ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠিত এই কেন্দ্রোটিকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিতে চান তার লক্ষ্য পূরণে। যেটি ৪১ বছর ধরে চমৎকারভাবে চালিয়েছিলেন সাবেক শান্তি মিশনের কর্মী, যিনি এখনো বহু মধ্য বয়সী আফগানী বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের কাছে মিষ্টার টম নামে পরিচিত।

XS
SM
MD
LG