অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ওরা ফেসবুকে দেয়ার জন্যই রাজনকে হত্যা করে


সিলেটের সুরমা তীরের বাড়াই গ্রামের রাজন এখন বিশ্ব মিডিয়ায়। ১৩ বছরের শিশু রাজন এক অভাবী পরিবারের সন্তান। বাবা মাইক্রোবাস চালক। অসুস্থ, কাজ করতে পারে না। তাই এই শিশুটির উপর বর্তায় সংসার চালানোর দায়িত্ব। পড়ালেখার ইতি টেনে তরকারি বিক্রি করে সংসার চালাতো। রোজকার মতো ৮ই জুলাই সে তরকারি বিক্রি করতে গিয়েছিল সিলেট শহরে। কিন্তু হঠাৎ করেই তার উপর নেমে এলো চরম বিপর্যয়। ওঁৎ পেতেছিল একদল নরপশু। চোর সাব্যস্ত করে জনসম্মুখে পিটুনি শুরু করে ওরা। কি তাদের উদ্দেশ্য? বার বার বলছে, সে চুরি করেনি। কে শোনে কার কথা। তার চিৎকারে কাঁপছে গোটা এলাকা। মানুষজন তাকিয়ে দেখছে। কেউ এগিয়ে আসছে না। এখানেই শেষ নয়, রাজনের জীবনপ্রদীপ চিরতরে নিভে না যাওয়া পর্যন্ত ওরা উল্লাস করতে থাকলো।
২৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড পশুরা তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করলো। এরপর মুহূর্তেই ছড়িয়ে গেল ইউটিউবে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায় মুহূর্তেই। ঘাতকরা স্বীকার করেছে, ফেসবুকে দেয়ার জন্যই এই নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায় তারা। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ভিডিও চিত্রটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাতে কি? প্রতিবাদ আর আহাজারি কি থেমে গেছে। প্রতিবাদ হচ্ছে তামাম দুনিয়ায়। বাংলাদেশের মানুষজনও রাস্তায় নেমে এসেছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ৫ জনকে ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। একজন পালিয়ে গিয়েছিল সৌদি আরবে। সেখানেও প্রবাসীদের সোচ্চার প্রতিবাদ। রাজন হত্যার অন্যতম আসামী কামরুলকে সৌদি পুলিশ পাকড়াও করেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল হক জানিয়েছেন, তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, মানুষজন প্রত্যক্ষ করলো এই বর্বরতা। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ একটাই- ভয় আর আতঙ্ক।
শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রাজনের বাবা আজিজুর রহমান। হাসপাতালে নিতে হয়েছে তাকে। অসুস্থ হবারই কথা। এই ভিডিও চিত্র দেখে নিরব নিথর হয়েছেন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। যারা সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। জাতীয় দলের অন্যতম ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে স্মরণীয় জয়। অন্যদিকে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। ঢাকা থেকে মতিউর রহমান চৌধুরীর রিপোর্ট:

XS
SM
MD
LG