অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শরনার্থী ও আশ্রয় প্রার্থীদের সহায়তার চেষ্টা ইউরোপের সঙ্গীতাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের


সেলিম হোসেন

ইউরোপের শরনার্থী সংকট সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের অন্যতম প্রধান একটি বিষয়। জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নানা ভাবে এই সংকট মোকাবেলার চেষ্টা চলছে। শরনার্থী ও আশ্রয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে সহায়তার চেষ্টা করছে ইউরোপের সঙ্গীতাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও। এ নিয়ে প্যারিস থেকে লিসা ব্রায়ান্টের পাঠানো রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন ও সাবরিনা চৌধুরী।

সরাসরি লিংক

শরনার্থীদের নিয়ে উদ্বেগে, সীমান্ত দেয়াল উঁচু করা কিংবা সীমান্ত দরজা বন্ধ করা হয়েছে ইউরোপের বহু দেশে। নানা ধরনের কষ্টে থাকা হাজার হা্জার শরনার্থীর মানবেতর জীবন, দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সঙ্গীত জগতের মানুষদের। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের হাজার হাজার শরনার্থী ও আশ্রয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে সহায়তার চেষ্টা করছেন শিল্পরা। দাতব্য কনসার্র্টের আয়োজন, এ্যালবাম বের করাসহ নানাভাবে তারা শরনার্থীদের জন্যে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

শরনার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে গীতান জিগা এবং তার ব্যান্ড দল তাদের পরবর্তী কনসার্টের জন্য উত্তর প্যারিস ছোট্ট একটি ষ্টুডিও রিহার্সল করছেন। তাদের সাম্প্রতিক এক এ্যালবামের গান প্র্যাকটিস করছেন। এর ইংরেজী অনুবাদ হচ্ছে: মর্নিং ডিউ বা সকালের শিশির। আশ্রয় প্রার্থীদের অভিযানের কথা উঠে এসেছ এই ঐ্যালবামের গানে। এর প্রধান একটি গান শরনার্থীদের নিয়ে।

এ্যালবামটি মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। জিগা জানান তিনি যেসব শহরে কনসার্ট করেছেন সেসব স্থানে ভাল সাড়া পেয়েছেন। বিক্রয়লব্ধ অর্থের ২০ শতাংশ Secours Catholique নামের একটি ফরাসী দাতব্য সংগঠনে দেয়া হবে।

“জিগা বলেন চাট্রেস নামের একটি শহরে তাদের কনসার্টে কয়েক হাজার দর্শক হয়। তাদের প্রায় সবাই একটি করে সিডি কেনেন”।

এতে করে জিগা দারুনভাবে অনুপ্রানিত হয়েছেন। শহরের বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শরনার্থীদের অবস্থান। কর্তৃপক্ষ যতোদিন না ঐ শিবিরগুলো ভেঙ্গ সদেয় ততোদিন তারা সেখানে থাকেন।

তবে সম্প্রতি জার্মানীতে এক নতুন বছরেরর অনুষ্ঠানে অভিবাসি পুরুষদের বিরুদ্ধে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় শরনার্থীরা খানিকটা বিরূপ অবস্থার মুখোমুখী হচ্ছেন।

রাশিয়ার Pussy Riot নামের একটি সংগঠন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যাতে শরনার্থীদেরকে প্রবেশাধিকার দেয়ার দাবী জানানো হয়েছে।

বৃটেনে প্রকাশ হওয়া Help is Coming” নামের আরেকটি ভিডিওতে বৃটিশ অভিনেতা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ শরনার্থীদের সহায়তায় বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ওই ভিডিওতে শরনার্থীদের মানবেতর জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে।

এই ভিডিও এ্যালবাম বিক্রির অর্থ সেভ দা চিল্ড্রেন ফান্ডে দেয়া হচ্ছে।

এই দাতব্য সংগঠনটির কর্মকর্তা নিকোল ইটানো জানালেন এই এ্যালবাম বিক্রি করে কয়েক হাজার ডলার আয় হলোও তা এখনো উৎপাদন খরেচের অর্থ।

“Help is Coming” এর মতো এ্যালবামে ওদের অসহায় অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তহবিলও সংগ্রহ করা সহজ হচ্ছে”।

শরনার্থীদের নিয়ে সংগীত মানুষ পছন্দ করে। ৩০ বছর আগে Live Aid নামের কনসার্ট মানুষ পছন্দ করেছিল। সেখানে ১০কোটি ডলারেরও বেশী অর্থ সংগৃহীত হয়েছিল যা ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষ নিরসনে দেয়া হয়েছিল, যদিও তা নিয়ে বিতর্ক হয় প্রচুর”।

এ নিয়ে ইংল্যান্ডের সাসেক্স বিশ্বিবদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক লুসি রবিনসন বলেন,

“বিতর্কের একটি বিষয় হচ্ছে ৮০র দশক তেমন বুভুক্ষ সময় ছিল না। দাতব্য সংস্থান সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তারা ভাল জানেন যে Live Aid তখন ত্রুটিমুক্ত ছিল না। অনেক বিতর্ক রয়েছে Live Aid থেকে সেই আয় নিয়ে; আসলে সেই অর্থ কোথায় যায়, তা নিয়ে”।

“মজার বিষয় হচ্ছে আগের বিষয় যাই থাকুক না কেনো জরুরী সাহয্যের জন্যে আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দাতব্য কাজে সঙ্গীতের এই যে নতুন উদ্যাগ তা কাজে লাগছে এবং একটা স্বতস্ফুর্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে”।

Reach Out নামের শরনার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে করা একটি অনলাইন ভিত্তিক এ্যালবাম যা শুধুমাত্র ডাউনলোড করেই শোনা যায়, বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বৃটিশ চ্যারিটি Refugee Actionকে এ থেকে আয়কৃত অর্থ দান করা হবে। সমুদ্র ডুবে মারা যাওয়া সিরিয়ান শিশু আইলান কুর্দির লাশের ছবি দেখার পর ওয়েলশ এর সাংবাদিক ডেভিড ওয়েনস এই প্রকল্পটি হাতে নেন।

“ছয় বছর বয়সী একটি কন্যা আছে আমার। আইলানের ছবি দেখলেই আমার মেয়ের মুখ ভেসে ওঠে। আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে আমরা এমন একটি আধুনিক সময়ে বসবাস করছি অথচ এমন দুর্ঘটনা ঘটে চলছে এবং এসব রোধে কিছু একটা করা প্রয়োজন”।

শরনার্থীদের জন্যে যারা কাজ করছেন তাদের সবাই যে খুব বিখ্যাত তা নয়। রবিনসন বলেন তহবিল সংগ্রহে নিয়োজিত অনেকেই জিগার মতো ছোট ছোট শহরের স্থানীয় ব্যান্ড।

গীতান জিগা দেখেছেন আশ্রয়প্রার্থী শরনার্থীদের কষ্ট। কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে তিনি শরনার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে একটি দলও গড়ে তুলেছেণ। জিগা নিজেও একজন অভিবাসি। ১৩ বছর বয়সে ক্যামেরুন থেকে ফ্রান্সে আসেন তিনি। ৮ বছর আগে ফরাসী নাগরিক হন।তিনি জানান ক্যাথলিক ধর্ম বিশ্বাস এবং পারিবারিক মুল্যবোধ থেকে তিনি শিখেছেন অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর চেয়ে ভালৌ আর কজিছু নেই।

“জিগা বলছিলেন নানা রকম ফসল নিয়ে মা শহরে বিক্রি করতেন, মাঝে মধ্যে শহর থেকে ফেরার সময় এক একজন অনাথ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ী ফিরতেন। আমরা অনাথদের সঙ্গেই বড় হয়েছি। এটি চমৎকার একটি শিক্ষা যা আমি কখনোই ভুলবো না”।

শরনার্থীদের প্রতি ইউরোপীয়ানদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে জিগা তার সাম্প্রতিক এ্যালবামের গানগুলো লেখেন। “I’m a refugee; I’m welcome here - and nowhere. এই গানে শরনার্থীদের দু:খ কষ্টের বর্ণনা রয়েছে।

XS
SM
MD
LG