অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পাকিস্তান সার্ক সম্মেলন মুলতুবি করলো


পাকিস্তান গতকাল শুক্রবার ঘোষণা করে, দক্ষিণ এশিয় দেশ সমুহের শীর্ষ নেতাদের যে বৈঠক সার্ক সম্মেলন হবার কথা ছিল নভেম্বরে, সেটি তারা এখন মুলতুবি করে দিচ্ছে এবং আঞ্চলিক পারস্পরিক সহযোগিতার এ প্রক্রিয়াকে বিপথগামী করার জন্যে তারা ঘোর দুশমন দেশ ভারতকেই দায়ী ঠাওরেছে।
ইসলামাবাদ ও নতুন দিল্লির মধ্যে সীমান্ত কেন্দ্রিক কূটনৈতিক টানাপড়েন যখন তুঙ্গে ঠেক সেরকম একটা পর্যায়ে এ সার্ক সম্মেলন মুলতুবি হয়ে গেলো। সেপ্টেম্বরে বিখন্ডিত কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত ভারতের একটি সেনা ঘাঁটির ওপর প্রাণঘাতী যে হামলা হয়,তার পেছেনে পাকিস্তানেরই হাত ছিলও বলে ভারতের তরফের অভিযোগ নিয়ে ঐ টানাপড়েন দেখা দেয়।
ভারত তার সিদ্ধান্তের কথাটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলো- এই বলে যে,সীমান্ত পারের পাকিস্তানী সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণেই তারা আঞ্চলিক ঐ সার্ক সম্মেলনে যোগ দেবেনা- পাকিস্তান অবশ্য ঐ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সটান।
ঐ যে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন হবার কথা ছিলও পাকিস্তানে, ভারত যে তাতে যোগ দেবেনা বললো, পাকিস্তান তাতে ভারতকে ভর্ৎসনা করে বিবৃতি দিলো। ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে জারি করা বয়ানে -বললো- আঞ্চলিক সহযোগিতার বহুপাক্ষিক মঞ্চে দ্বিপাক্ষিক সমস্যার কালো ছায়া ফেলে সদস্য একটি দেশ সার্ক সনদের মূল লক্ষাদর্শকেই লঙ্ঘিত করলো।

জাতিসংঘ ইতিমধ্যে, গতকাল শুক্রবার প্রতিবেশী-পারমানবিক অস্ত্র সজ্জিত দেশ দু’টির মধ্যেকার বর্ধমান এ উত্তেজনায় তারা যারপরনাই চিন্তান্বিত বলে জানিয়েছে।
মহাসচিব বান কি মূন পরম সংযত আচরণের জন্যে দু’ পক্ষকেই আহ্বান করেছেন-পরিস্থিতির মোড় বদলের জন্যে অনূর্ধ্ব জানিয়েছেন- নিউ ইয়র্কে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে একথা। কাশ্মিরসহ সকল বকেয়া বিষয়াদির শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্যে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন ভারত ও পাকিস্তান সরকারের প্রতি- বলেছেন, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায়,শান্তিপূর্ণ সংলাপের মধ্যে দিয়ে নিষ্পত্তি করতে হবে সমস্যার এবং দরকার পড়লে – দু’ পক্ষই রাজি হলে, তাঁর সহযোগিতার হাতও তিনি প্রসারিত করতে রাজি আছেন।
ভারত ইতিমধ্যে,কূটনৈতিক দিক দিয়ে পাকিস্তানকে এক ঘরে করার প্রয়াস চালাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে-তার ঐ কথিত ইসলামিক গ্রুপ গুলোর প্রতি মদত যোগানোর কারণে- ভারতের অভিযোগ যে প্রতিবেশী দেশগুলোয় সন্ত্রাসী হামলার পেছেনে হাত রয়েছে তাদেরই। সার্ক বৈঠকে যোগদানে বিরত: থাকা ভারতের ঐ একঘরে করার প্রয়াসেরই অংশ বলে মনে হচ্ছে।দারিদ্র কবলিত অঞ্চলটির নানান সমস্যা মোকাবেলায় সার্ক যে কার্যকর কোনো সংস্থা হয়ে কাজ করেবে,সার্কের সবচেয়ে বড়ো দু’ই সদস্য রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার পরস্পর বৈরি সম্পর্ক তার পথে অন্তরায় হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ শোনা যায়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে-অঞ্চলের দারিদ্র বিমোচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজেরই যে আহ্বান, শীর্ষ সম্মেলন ভণ্ডুল করতে ভারতের এহেন পদক্ষেপ তার পরিপন্থীই বলে মনে করছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেপ্টেম্বরের আঠারো তারিখে সংঘটিত ঐ হামলার জন্যে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিরাই দায়ী – নতুন দিল্লির এ অভিযোগে নিয়ে তার কোনও ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ- পক্ষান্তরে ,হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত অঞ্চলটিতে ভারতীয় আরক্ষা বাহিনীর কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিক থেকে নজর অন্য দিকে ফিরিয়ে দেওয়ারই চেষ্টা এটি, এ অভিযোগ ইসলামাবাদের।

please wait
Embed

No media source currently available

0:00 0:04:42 0:00



বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি আরও চরম আকার ধারণ করে। ভারতের সামরিক বাহিনী জানায়- তার সেনারা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানবর্তী কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে এবং ওখাানে তারা সন্ত্রাসীদের ওপর আঘাত হানে কাকভোরের এক অভিযানে।
কাল বিলম্ব না করেই ইসলামাবাদ ভারতের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছে- ভারতের বক্তব্য,মিথ্যে-বানোয়াট দায়িত্বজ্ঞান বিবর্জিত।বলে– ভারতের ঐ সীমন্ত পেরিয়ে চালানো অভিযানে দু’ পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়েছে- জখম হয়েছে অপর ন’জন।

পাকিস্তান বলছে- শনিবার ভোরে কাশ্মীর সীমান্তে আবার গুলিবিনিময় হয়েছে – চলেছে কয়েক ঘণ্টা যাবত- এবং পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বলছে, শুরুটা হয়েছে ঐ ভারতেরই দিক থেকে।কোনও হতাহতের কোনও খবর অবশ্য শোনা যায়নি।কাশ্মীরকে নিয়ে আবার না সংঘাত বেধে ওঠে –দুশ্চিন্তা এখন তাই নিয়েই।অঞ্চলটির গোটাটার দাবিদার ভারত – পাকিস্তান দু’দেশই।সাতচল্লিশের স্বাধীনতার পর ভারত, পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে মোটা তিনবার- এবং দু’ বারই সে যুদ্ধ হয় ঐ কাশ্মীরকে নিয়েই।

XS
SM
MD
LG