অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫৬ জনকে গ্রেফতার করেছে থাইল্যান্ড পুলিশ


থাইল্যান্ড পুলিশ দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানব পাচারের ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন করেছে। তবে এই তদন্তের পর মানবাধিকার সংগঠনসমূহ আরো বৃহদাকারে এই তদন্ত করে মানব পাচারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না বের করার আহবান জানিয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে এ নিয়ে রন করবেনের রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।

সরাসরি লিংক

মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫৬ জনকে গ্রেফতার এবং ৬০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানব পাচার বিষয়ক তদন্ত সম্পন্ন করেছে থাই পুলিশ। দক্ষিন থাইল্যান্ডে এই তদন্ত কাজ শেষে এ তথ্য জানিয়েছে থাইল্যান্ড পুলিশ কতৃপক্ষ।

মঙ্গলবার পুলিশ কতৃপক্ষ বলেছে এই তদন্ত থাইল্যান্ডের ইতিহাসে মানব পাচারের সবচেয়ে ব্যাপক বিস্তৃত তদন্তের ঘটনা যাতে পুলিশ মানব পাচারের ১ লক্ষ লিখিত অভিযোগ এ্যাটর্নী জেনারেলের কার্যালয়ে দাখিল করেছে। এই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা অপরাপর সংগঠণসমূহ বলছে তারা এই তদন্তকে স্বাগত জানায়; তবে তাদের ধারণা গত কয়েক সপ্তাহে মানব পাচারের তদন্তের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যাতে মনে হচ্ছে আইন রক্ষাকারী বাহিনীর এই কাজে রাজনৈতিক সদিচ্ছা কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে এবং মানব পাচারে আরো সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের থাইল্যান্ড শাখার গবেষক সুনাই পাসুক বললেন গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থাকলেও মাত্র একজন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করায় ঐ তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে।

“প্রভাবশালীদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিানাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহের শীর্ষ ব্যাবসায়ীরা। ওই নামগুলো প্রায় এক দশক ধরে মানব পাচারকারীদের তালিকায় ছিল এবং পর্যায়ক্রমে তাদেরকে এখন বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। ফলে অগ্রগতি হচ্ছে। জেনারেল পদের একজন উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা ওই সন্দেহভাজনদের তালিকায় একজন, যার বিরুদ্ধে মানব পাচার এবং আরো কিছু ভয়ানক অপরাধের অভিযোগ তোলা হচ্ছে; এসবকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এটি বিশ্বাস করা অসম্ভব যে একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা একা তার নিজের খুশীমতো তা করেছে”।

সুনাই বলেন নিম্নপদস্থ সেনা কর্মকর্তা এবং অন্যান্যরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্যে এর আরো তদন্ত প্রয়োজন।

বিস্তৃত তদন্তের পর দক্ষিন থাইল্যান্ডের মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে যে শত শত কবর পাওয়া গেছে সেগুলো পাচারের শিকার হওয়ার রোহিঙ্গা মুসলমানদের কবর যারা দেশে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ভয়ে পালানার চেষ্টা করছিলেন।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান এবং বাংলাদেশীরাই সাধারণত বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে নৌকায় করে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়া পাড়ি জমানোর চেষ্টা করে থাকে। তবে সম্প্রতি মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধির কারণে পুরুষদের পাশাপাশি নারী এবং শিশুরাও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বিদেশে যাওয়া চেষ্টা কর।

মে মাসের শুরুর দিকে দক্ষিন থাইল্যান্ডে কবর আবিস্কারের পর এবং একই সময়ে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের শিকার হওয়া হাজার হাজার অসহায় অভিবাসি ও শরনার্থীর সন্ধান মেলার পর থাইল্যান্ডে পাচার বিরোধী পাকড়াও অভিযান চলে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী সমুদ্রে এখনো ১২ শয়ের মতো মানুষ ভাসমান অবস্থায় রয়েছে এবং পাচার হওয়া ৩ হাজারের মতো মানুষ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ঢুকেছে।

মানব পাচারে সংশ্লিষ্টতার কারনে গত বছর যুক্তরাস্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পারসনস TIP রিপোর্টে থাইল্যান্ডকে নিম্নতম অবস্থানে রাখায় দেশটি যুক্তরাস্ট্রের তরফে অর্থনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে।

থাইল্যান্ডের পুলিশ বলেছে তারা আশা করছেন মানব পাচার নিয়ে এই বিস্তৃত তদন্তের পর যুক্তরাস্ট্র থাইল্যান্ডের অবস্থান উঁচুতে ওঠানোর বিষয় এখন বিবেচনা করবে।

তবে মানবাধিকার গোষ্ঠির বিশ্বাস যুক্তরাস্ট্রের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অগ্রগতি সাধনের জন্যে থাইল্যান্ডকে মার্চ মাস পর্যন্ত বেধে দেয়া সময়সীমার চেয়ে ঐ তদন্ত এবং গ্রেফতার করার বিষয় অনেক দেরী হয়েছে গেছে। পরবর্তী TIP রিপোর্ট প্রকাশ হবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে।

XS
SM
MD
LG