ছয়টি মুসলিম প্রধান দেশের যাত্রী এবং শরনার্থীদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সে আদেশের বিষয়ে ওয়াশিংটন রাজ্যের এক আপীল আদালতে সোমবার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। জ্লাটিকা হোকের তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করছেন শেগুফতা নাসরিন কুইন ও সেলিম হোসেন।
সিয়াটলের 9th Circuit Court of Appeals এর তিনজন বিচারক মার্চ মাসে জারি করা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিভিন্ন দিক নিয়ে আইনজীবিদের বক্তব্য শোনেন। তারা সেসব বক্তব্য থেকে সিদ্ধান্ত নেবেন ঐ আদেশে সংবিধান লংঘন করার মতো কিছু রয়েছে কি না। ইতিমধ্যেই ইরান লিবিয়া সোমালিয়া সুদান সিরিয়া ও ইয়েমেনের যাত্রীদের ভিসার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হাওয়াই রাজ্য কর্তৃপক্ষ।
বিচারকেরা সরকারী আইনজীবিদেরকে বলেন ঐ আদেশ যে মুসলমানদেরকে টার্গেট করে করা হয়নি তা কিভাবে প্রমান করবেন। এর বিচারক মাইকেল হকিংসের বক্তব্য।
“প্রেসিডেন্ট কি কখনো তাঁর প্রচারণার সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি অস্বীকার করেছেন? তিনি কি কখনো বলেছেন ‘আমি আগে বলেছিলাম আমি ইসলামে বিশ্বাসি সকলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবো?’ আমি ভুল করেছিলাম। আমি আমার আইনজীবির সঙ্গে কথা বলেছি। আমি এখন বিষয়টি ভেবে দেখছি। তা কি শুধুমাত্রই নিরাপত্তাজনিত কারনে?”
প্রশাসনের পক্ষের একজন আইনজ্ঞ বলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধুমাত্র ৯০ দিনের জন্য তা করতে চেয়েছিলেন; শুধুমাত্র এই লক্ষ্যে যে ওইসব দেশের ভিসার আবেদনকারীদেরকে যেনো ভালো করে যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়। ভারপ্রাপ্ত সলিসিটর জেনারেল জেফরি ওয়াল যেমনটি বলছিলেন।
“তিনি বলেন নি যে ‘আমি বুঝতে পেরেছি যে তারা ক্ষতিকারক, কারন তারা সকলেই বিপদজনক; অথবা তারা সকলেই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী বা এরকম কিছু’। বরং তিনি বলেছেন ‘আমরা তাদের সরকারের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাচ্ছি কিনা সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকার কারনে আমরা যেনো তাদেরকে তাদের ভিসা প্রক্রিয়ার সময় ভালো করে পরীক্ষা করতে পারি সেজন্য তাদের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছি”।
বিরোধীপক্ষের আইনজীবিরা বলেন এই শংশোধিত যাত্রী নিষেধাজ্ঞা জানুয়ারী মাসে মুসলমান প্রধান দেশের যাত্রী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিষয়ে মূল যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল তার চেয়ে ভালো কিছু নয়। ওয়াশিংটন রাজ্যের সলিসিটর জেনারেল নোয়াহ পার্সেল যেমনটি বলেন।
“প্রেসিডেন্ট নিজেই যখন বলেন, ‘আমি প্রথম নির্বাহী আদেশে যেতে চাই; তার অর্থ হচ্ছে এটা বোঝাতে চাই যে এই বিষয়টি নতুন বা শংশোধিত হয় কি করে। প্রেসিডেন্ট বলেন আমি সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি- এ ধরনের কথাবার্তা বা মন্তব্যে সমস্যা বাড়ছে।”
হাওয়াই এর এ্যাটর্নী জেনারেল ডগ চিন বলেছেন ওই নির্বাহী আদেশ অসাংবিধানিক বলে তাঁর রাজ্য এর বিরুদ্ধে মামলা করছে।
ডগ চিন বলেন, “আমরা যা বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে রাজনৈতিকভাবে সঠিক তা নয়; অথবা তিনি যে রাজনৈতিকভাবে সঠিক হওয়া অস্বীকার করছেন তাও নয়, বিষয়টি হচ্ছে তিনি সংবিধানের বিষয়ে আসলেই সঠিক নন”।
সোমবারের শুনানী শেষে ঐ প্যানেল কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন নি। প্রশাসন যদি ঐ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে করা চ্যালেঞ্জ না ঠেকাতে পারে, ধারণা করা হচ্ছে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে যাবে।
প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহনের পরই ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে সাত মুসলিম-প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ঐ সময় ওই আদেশের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। নির্বাহী আদেশ জারির পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন এ আদেশ প্রয়োজন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে।
২৭শে জানুয়ারীর ওই আদেশের পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর চিত্র ছিল একেবারেই অন্যরকম। আমার মনে আছে ছুটির দিন ছিল ঘরে বসে টিভি দেখছিলাম। রোকেয়া হায়দার ফোন করে বললেন বিভিন্ন বিমানবন্দরে ট্রাভেল ব্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। তৎক্ষনাৎ আমি সহকর্মী তাওহিদুল ইসলামকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ভার্জিনিয়ার ডালাস এয়ারপোর্ট।
দুপুর তিনটায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিমান সম্ভবত এমিরাটস আসার সময় ছিল তখন। হাজার হাজার প্রতিবাদকারী-ধর্ম বর্ন জাতি নির্বিশেষে এয়ারপোর্টের এ্যারাইভ্যাল লাউঞ্জে সমবেত হন। কেউ লীগ্যাল সার্ভিস দেয়ার জন্যে কেউ আবার মনোবল বাড়ানোর জন্যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশিরাও ছিলেন প্রতিবাদ কারীদের মধ্যে। কথা হয়- আব্দুল মান্নান সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং ভার্জিনিয়ার খাদিজা আহমেদের সঙ্গে।
ওই সময় কংগ্রশনাল এশিয়ান প্যাসিফিক ককাস ক্যাপিটল হিলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ওই ট্রাভেল ব্যান বাতিলের দাবীতে। সেখানে ককাসের চেয়ারম্যান ক্যালিফোর্নিয়া কংগ্রেসওম্যান জুডি চু-নিউইয়র্কের কংগ্রেস ওম্যান গ্রেস মেং, ওয়াশিংটনের কংগ্রেসওম্যান প্রমীলা জয়পাল বক্তব্য রাখেন। কথা বলেন কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্সের নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ। তারা বলেন ওই আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও মূল্যবোধের পরিপন্থী।
পরে সিয়াটলের একজন বিচারক ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের আদেশ দেন। ট্রাম্প প্রশাসন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সান-ফ্রান্সিসকো ভিত্তিক তিন বিচারকের প্যানেল তা খারিজ করেন।
ছয় মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দ্বিতীয় দফায় যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় হাওয়াই রাজ্যে। প্রথম দফায় ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে জারি করা মুসলিম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও মামলা করেছিল এই রাজ্য। তবে আগেই অন্য রাজ্যে নির্বাহী আদেশটি স্থগিত যায়।
নতুন ও শংশোধিত নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে হাওয়াই ও ওয়াশিংটন ছাড়াও চ্যালেঞ্জ করেছে অরেগন ও ম্যাসাচুসেটস রাজ্য।