জাতিসংঘের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কমিশন বলেছে, আগামী কয়েক দশকে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোয় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। ওই অঞ্চলের বিভিন্ন সরকার যদি এখন থেকেই দূর্যোগ মোকাবেলার ব্যবস্থা না করেন তা হলে সংকট বেড়ে যাবে।
এ সম্পর্কে ব্যাংকক থেকে Ron Corbenর রিপোর্ট থেকে বিস্তারিত শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে মানুষের প্রানহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে চলেছে। দেশে দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ও নগরায়নের কারণে এই সংকটও বাড়ছে।
পৃথিবীর এই অঞ্চল অর্থাৎ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটে বেশী। গত এক দশকে এক হাজার ৬শোরও বেশী প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটেছে যাতে আনুমানিক ৫ লক্ষ মানুষ প্রান হারিয়েছে এবং ৫ হাজার ২শো কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল বিষয়ে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন, ইউনেস্ক্যাপ (UNESCAP) মঙ্গলবার এক বিশেষ রিপোর্টে বলেছে, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলোর যদি দূর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলা খাতে বিনিয়োগ করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে, তা হলে এই সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
Disaster without Border শীর্ষক এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, দ্রুত প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, এবং নগর শহরের বিস্তারের ফলেই ঝুঁকি বাড়ছে।
জাতিসংঘের আণ্ডার সেক্রেটারী শামশাদ আখতার হলেন ইউনেস্ক্যাপের নির্বাহী সচীব। তিনি বলেন, আরও বেশী, আরও ব্যাপকনএবং আরও শক্তিশালী দূর্যোগ গভীর উদ্বগের কারণ। চলতি সপ্তাহে হিলালয় অঞ্চলে ভূমিকম্প সে কথাই তুলে ধরেছে। যাতে শত শত মানুষ প্রান হারিয়েছে। তিনি বলেন,
‘হুমকী বেড়ে চলেছে, এবং বিভিন্ন সীমান্তে তা ঘটছে, কারণ বিপর্যয় কোন সীমানা মানে না। সদ্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তান এবং আফগানিস্তান ছাড়িয়ে চীনের সীমান্ত এলাকায় পর্য্যন্ত যা ঘটে গেল, ফল্ট লাইন বরাবর ভূকম্পন, ঘূর্ণীঝড় সেইসঙ্গে খরা ও বন্যাও হচ্ছে। যা আমরা এইসবের কেন্দ্রস্থলে থেকে অনুভব করতে পারি।’
জাতিসংঘ রিপোর্টে পূর্বাভাষ দেওয়া হয় যে, ২০৩০ সাল নাগাদ ওই অঞ্চলে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগে গড়ে ১৬ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হবে। বর্তমানে যা কিনা ৫ হাজার লোটি ডলারের মত।
শহরগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধি সেইসঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট, পানি সরবরাহ, এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব দরিদ্র্য জনগনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়।
রিপোর্টে বলা হয়, এশিয়া প্রশান্ত মহাসগর অঞ্চলের প্রায় ৭৪ হাজার কোটি বাসিন্দা বিরাট ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে। প্রায়ই তারা ঘুর্ণীঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ও ভূমিধ্বসের সম্মুখীন।
জাতিসংঘ ওই অঞ্চলের সরকার সমুহের প্রতি তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশ করে, দূর্যোগ লাঘবের চেষ্টায় এবং ভবিষ্যতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের জন্য, বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।
ফিজির প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মন্ত্রী বাটিকোটো সেরুইরাতু বলেন, তার সরকার ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে ঘূর্ণীঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে এই খাতে অধিক ব্যয় করছেন। তিনি বলেন,
‘আমরা দূর্যোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য অর্থ ব্যয় করছি এবং অবশ্যই আমাকে বলা হয়েছে যে আগামী বছরও ব্যয় বরাদ্দ থাকবে এবং সম্ভবতঃ তা দ্বিগুন বা তিনগুন বাড়ানো হবে।আমাদের এই রাজনৈতিক ইচ্ছা ও প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন। আমি যেমন বলেছি যে দূর্যোগের ঝুঁকি খাতে এ হচ্ছে এক বিনিয়োগ। এটা কোন অর্থ ব্যয় করা নয়, এবং আমাদের এই বিনিয়োগ করতেই হবে’।
জাতিসংঘ রিপোর্টে বিভিন্ন সরকারের প্রতি তাদের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে উন্নত তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে।