অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের পররাষ্ট্র নীতি ও অর্থনীতি বিষয়ক চ্যালেঞ্জসমূহ


যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নানা বিষয়ের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে এখন নতুন প্রশাসনের মন্ত্রীসভা। প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে চারজনের নাম আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে যিনিই নিয়োগ পান, বিশেষজ্ঞরা কলছেন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তাঁকে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।

অপরদিকে আগামী মাসে দায়িত্ব গ্রহনের সময় ডনাল্ড ট্রাম্প এমন একটি অর্থনৈতিক অবস্থায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব পাবেন যেখানে থাকছে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ৪.৬ শতাংশ বেকারত্ব। এই অবস্থায় কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি ও অর্থনীতির পরিকল্পনা সেসব নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার পররাষ্ট্র বিষয়ক সংবাদদদাতা নাইক চিং ও অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদদাতা মিল আর্সেগার প্রতিবেদন থেকে নেয়া তথ্যে দেখা যায়,

যুদ্ধ বিধ্ধস্থ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে মানবিক সংকট আরো দীর্ঘ ও খারাপ হচ্ছে। এ অবস্থায় রাশিয়া ও চীনের নানা কর্মকান্ড যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নানা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

কথা বলেন সেনেটর বেন কার্ডিন, “আমি মনে করি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বৈশ্বিক অবস্থা নিয়ে ভাবতে হয়; বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করতে হয়; একই সঙ্গে আমেরিকার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখাটাও তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য; আর এগুলো আমি মনে করি বৈশ্বিক মূল্যবোধ; যার অন্তর্ভূক্ত হয় শুশাষন, দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব, মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করা। আরো মনে রাখতে হয় যে আমেরিকা হচ্ছে বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশ আর সেজন্যই বৈশ্বিক প্রেক্ষপটে আমাদের সংশ্লিষ্টতাও ষ্পর্শকাতর বিষয়”।

এসব ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের যিনি শীর্ষ কুটনীতিক হবেন তাঁকে অভ্যন্তরীন কিছু চাহিদাও মাথায় রাখতে হবে। যেমনটি মনে করেন জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চার্লস ষ্টিভেনসন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় সবসময়ই সবকিছুই করেন প্রেসিডেন্টের পরামর্শে। ফলে আইন অনুসারে বা ঐতিহ্য অনুসারে পররাস্ট্রমন্ত্রী যতোটা না স্বাধীন মানুষ তার চেয়ে বেশী তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি”।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। উত্তর কোরিয়ার উস্কানীমূলক কর্মকান্ড নিয়ে কি করা দরকার সে নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।

দা ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের কর্মকর্তা হ্যারী কাজিয়ানিস যেমনটি বললেন,

“ডিপিআরকে’র কিছু অতীত নিয়ে কাজ করতে হবে। দেখতে হবে আগের অবস্থা কি ছিল আর এখন তাদের অবস্থা কি। তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু কিভাবে করা যায় তা ভাবতে হবে। কারন যাদের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক রয়েছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটাতে হবে”।

ডনাল্ড ট্রাম্প প্রথম থেকেই বলে আসছেন তাঁর এ্যামেরিকা ফার্ষ্ট নীতির কথা। বিশ্লেষকরা বলছেন পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে তা আরো বিস্তৃত করা।

অনেকে বলছেন শুক্রবার ডনাল্ড ট্রাম্প ও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের মধ্যকার টেলিফোনালাপ তারই অংশ। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ‘এক চীন’ নীতি গ্রহণ করার পর থেকে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট ফোনে সরাসরি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বললেন।

এক ট্যুইটে ট্রাম্প জানিয়েছেন, কলটি ছা ইং ওয়ানই করেছিলেন।

নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কেমন হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন সেটি সময়ের ব্যাপার। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার সময়ের অর্থনৈতিক অবস্থা আর এখনকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভিন্ন। ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। এখন বেকারত্বের হার ৪.৬ শতাংশ। ২০০৭ সালের পর এটি সর্বনিম্ন। এখনকার অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। কিন্তু তার পরও রয়েছে বড় বড় অনেক চ্যালেঞ্জ।

বারাক ওবামার সময় ২০০৮ সালে হাজার হাজার বাড়ী ফরক্লোজ হয়। অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা তখন। প্রতি মাসে হাজার হাজার মানুষ বেকার হন। আর এখন ৯ বছরের সর্বনিম্ন বেকারত্বর হার। মানুষের আয় বেড়েছে। নির্মান খাতে গতি বেড়েছে। অবস্থা অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেন Associated General Contractors of America প্রধান অর্থনীতিবিদ কেন সাইমনসন, “শুধুমাত্র এই নভেম্বর মাসেই নির্মান খাতে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১৯ হাজার। গত ১২ মাসে এই খাতে চাকরীতে যুক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কর্মী”।

চাকরীর বাজার বেশ ভালো এখন। তবে প্রতিযোগিতা বেড়েছে নি:সন্দেহে। বললেন PNC Financial services এর অর্থনীতিবিদ গুস ফাউচার, “চাকুরী প্রার্থীদের প্রতিযোগিতার কারনে প্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্য হয়ে বেশী বেতনে বেশী দক্ষ লোক নিয়োগ করছে। আর এর মানে হচ্ছে মানুষের পকেটে বেশি অর্থ যাচ্ছে”।

হোয়াইট হাউজ বলছে সর্বশেষ কর্মসংস্থানের অবস্থা হচ্ছে নভেম্বর মাসে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একমাসে সবচেয়ে বেশী। আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের এক মুখপাত্র বললেন ২০০৮ সাল থেকে পন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ৩ লক্ষ লোক চাকরী হারায়। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন অটোমেশনের দিকে আরো মনোযোগ দেয়ার বিষয়ে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে অভিবাসীদের প্রয়োজনীতার কথা বলেন অনেকে।

সিমনসন বলেন, “আমরা যদি অর্থনীতির এই প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে চাই আমাদের আরো কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। আর তার জন্যে অভিবাসী আমাদের প্রয়োজন”।

ফাউচার মনে করেন চ্যালেঞ্জ থাকা স্বত্বেও ইন্টারেষ্ট রেট বাড়াতেই হবে, “আমরা দেখতে পাচ্ছি ইনফ্লেশন বাড়ছে। চাকরীর বাজার ভালো। মানুষের বেতন বাড়ছে। ফলে এখনই সুদের হার বাড়ানোর জন্যে সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের”।

বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন অর্থনীতির গতির চাকা সচল রেখে ডিসেম্বেরর শেষের দিকে ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ সুদের হার বাড়ানোর কথা ভাববেন।

XS
SM
MD
LG