অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আফগানিস্তানে এই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে যাচ্ছে


আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য শনিবার ভোটাররা সারা দেশের ভোটকেন্দ্রসমূহে জড়ো হন। সবকিছু ঠিক থাকলে আফগানিস্তানের ইতিহাসে এটিই হবে প্রথমবার একজন নির্বাচিত নেতা কতৃক অপর নির্বাচিত নেতার কাছে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। কাবুল থেকে শ্যারোন বেন’ এর রিপোর্ট; শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন:


ঐতিহ্যবাহী নীল বুরকা অথবা পশ্চিমা স্যুট পরে নানা শ্রেনী-পেশা ও সম্প্রদায়ের শত শত আফগান নাগরিক শনিবার দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দিতে যান।

তালিবান হুমকীর তোয়াক্কা না করে নানা অনশ্চিয়তার মধ্যে ভোটাররা কড়া নিরাপত্তা পার হয়ে এবং সেনা সদস্য কতৃক দেহ তল্লাসী করিয়ে ভোটকেন্দ্রে যান।

ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর ব্যালট পেপার পূরণের জন্য নারী এবং পুরুষদের জন্য ছিল আলাদা রুম। আশা যেনো বহু বছরের যুদ্ধের পর তাদের ভোটের মাধ্যমে দেশে শান্তি আসে এবং চাকুরীর সংস্থান হয়।

নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, দেশব্যপী উপর্যুপরি তালিবান হুমকী ও জঙ্গী হামলা, যাতে একজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন, তা উপেক্ষা করে শনিবার ১ কোটি ২০ মিলিয়ন মানুষ ভোট দিয়েছেন।

ভোট দিয়ে বের হয়ে কেন্দ্রের বাইরে একটি চেয়ারে বসেছিলেন, বয়সের ভারে কুজো হয়ে যাওয়া আফগান নারী ৯৪ বছর বয়সী হাজি বিবি। তিনি বললেন,

“তিনি বললেন তিনি আশা করছেন তার সামনের জীবনে ভালো কিছু আসবে এবং কামনা করছেন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তরুন ও বয়স্ক শান্তিপূর্ন ও নিরাপদে ভোট দেবেন”।

তালিবান দাবী করছে ভোট চলাকালে তারা ২৪৬টি আক্রমন চালিয়েছে। তারা প্রায়ই বাড়িয়ে বলে।

আফগানিস্তানের উপ-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জেনারেল আইয়ুব স্লানাগি বলেন বিকালের দিকে ফানিয়াব প্রদেশে একজন আত্মঘাতি বোমারু ভোটকেনেদ্র প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিরি আরো বলেন পূর্ব লগার প্রদেশে বোমা হামলায় দুইজন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। এর আগে ফূর্ব শহর জালালাবাদে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি। তবে মধ্য উরুজগান প্রদেশে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।

দেশের সর্বত্রই ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। স্থানীয় গনমাধ্যমের খবর অনুসারে সাবেক তালিবান অধ্যুষিত কান্দাহারে ভোটার উপস্থিতি ছিল অীবশ্বাশ্যরকম বেশী। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান তিন প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফ ঘানি, তালিবান প্রভাবিত সাউদার্ন প্রদেশে বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ করেন।

স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশনের প্রধান আহমাদ ইউসুফ নুরীস্তানীবলেন সারাদেশে শনিবারের ভোটার উপস্থিতি অবিশ্বস্যরকমভাবে বেশী। তিনি বলেন, নতুন নিরাপত্তা উদ্বেগের কারনে ৬,৪০০ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২০০ ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সবমিলে ৯০০টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করা হল।

ঘানি’র নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন জালমাই রাসৌল; দক্ষিনে যার রয়েছে শক্তিশালি প্রভাব; এবং আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ, যিনি সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে বেশ ভালো সমর্থন পেয়েছেন।

২১ বছর বয়সী ভোটার ইদ্রিস বলেন সকল আফগানির জন্য এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।

“দশ বছর ধরে আফগানিস্তানে আমরা সংকটে পড়ে আছি; এই সংকট কাবুলসহ দেশের অন্যান্য শহরেও; এখন আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করছি ভালো একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার এবং চাচ্ছি এই দেশটার সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে”।

প্রার্থীদের নিয়োগকৃত পর্যবেক্ষক নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং স্থানীয় স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরেই নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষন করছেন।

আশা করা হচ্ছে নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল বের হবে ২৪শে এপ্রিল। তবে চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৪ই মে।

এদিকে আফগান নারীরা, নানাভাবে যাদের অধিকার ও স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, তারা নতুন সরকারের অধীনে তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে, কেমন হবে এই নিয়ে রয়েছেন দ্বিধা দ্বন্দ্বে। ভয়েস অব আমেরিকার জ্লাটিকা হোক তার প্রতিবেদনে বলেছেন রাজধানী কাবুলের এক বিউটি পারলারে বসে তিনি শুনছিলেন আফগান নারীদের কথোপকথন যার বিষয়বস্তু ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিউটি পারলারের মালিক বালকিস আজিজি বলেন যিনিই নির্বাচিত হোন না কেনো; ভবিষ্যৎ কি হবে তা পরিস্কার নয়।

“আশা করি ভালো হবে। এটি আমাদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। কি ঘটবে? কেউ জানে না প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কি রয়েছে। কে নির্বাচিত হচ্ছেন তা নিয়ে মানুষ চিন্তিত”।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবান শাষনামলে আফগানিস্তানে নারীদেরকে পর্দার অন্তরালে রাখা হয়। কোনো পুরুষ আত্মীয় সঙ্গে না থাকলে তারা ঘর থেকে বের হতে পারতেন না। জনসম্মুখে আসতে হলে তাদেরকে সম্পূর্নভাবে আবৃত হয়ে বের হতে হতো। ঘরের বাইরে তাদের প্রায় সকলেরই কাজ করা নিষিদ্ধ ছিল। তারপরে অবস্থার কিছুটা উন্নয়ন ঘটে; তবে তাদের ভয় যে এই কয় বছরে নারীদের যে অর্জন, নতুন নেতৃত্ব তাতে আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কিনা। সালমা হাদারী নামের এই নারী মনে করেন তেমনটি ঘটবে না:

“পরবর্তী প্রেসিডেন্টের উন্নত চিন্তা চেতনা থাকবে। ভালো মন থাকবে। তিনি নারীদেরকে সম্মান করবেন। তাদেরকে কাজ করতে দেবেন। যাতে নারীদের উন্নয়ন ঘটে। তিনি আধুনিক চিন্তা করবেন।তিনি একজন ভালো মানুষ হবেন;দেশের কল্যান করবেন”।

আফগানিস্তান এ্যানালিষ্ট নেটওয়ার্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর কেট ক্লার্ক বলেন:
“তালিবান শাষনামলে স্বাস্থ্য খাত ছাড়া নারীরা কাজ করতে পারতেন না। ফলে এিট এখন আইনসিদ্ধ যে তারা কাজ করতে পারবেন, মেয়েরা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবে। নারীরা সংসদে আছেন,তাদের জন্য কোটা রয়েছে। তবে আফগানিস্তার এখনো তীব্রভাবে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। এখনো বহু নারী রয়েছেন যারা বাইরে যেতে পারেন না”।

এই নির্বাচন বানচাল করতে চাচ্ছে তালিবান। এবং কাবুলে সাম্প্রতিক হামলা পরিস্কারভাবে ভোটারদেরকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য করা হয়েছে। তবে অজিজির মতে ভোট দেয়া তাদের দায়িত্ব।

“সকলের দায়িত্বহচ্ছে ভোট দেয়া। প্রাথীদেরকে আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে, কিন্তু দেখা যাক কি হয়। আমরা আমাদের ভোট প্রয়োগ করবো এবং দেখবো কি হয়”।

নির্বাচনে নারী ভোটারদের তল্লাসী এবং নিরাপত্তায় সহায়তা করতে আফগান পুলিশ নারী অফিসারদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। নারীপুলিশ সিদ্দিকা বলেন তিনি কারো ভয়ে ভীত নন।

“আমার বোনদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, দেশের প্রতিরক্ষার জন্য আসুন আমাদের আফগান ভাইদের পাশাপাশি আমরাও পুলিশে যোগ দেই”।

আফগানিস্তানের শহরাঞ্চলে নারীরা ভোট দিতে প্রজ্ঞিাবদ্ধ। তবে বিশ্লেষকদের ধারনা দক্ষিন ও পূর্ব আফগানিস্তানের গ্রামাঞ্চলে তালিবান শক্তিশালী বলে সেখানে নারী এবং পুরুষ ভোটার উপস্থিতি দুর্বল হতে পারে।
XS
SM
MD
LG