অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে গর্ভবতী মা ও নবজাতকের মৃত্যুরোধে গণসচেতনতার বিকল্প নেইঃ নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাংবাদিক কর্মশালা, প্রতিবেদন ৭


বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে গর্ভবতী মা ও নবজাতকের মৃত্যুর হার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় একটু বেশী। এই বেশী মাত্রার মৃত্যু হারকে কমিয়ে আনতে হলে আর কোন মাকে বিনা চিকিত্সায় মরতে না দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ওই অঞ্চলে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তোলা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। সম্প্রতি গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে ইউএসএইডের অর্থায়নে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এমন অভিমত ব্যাক্ত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ভয়েস অফ আমেরিকার ব্রডকাস্টার সরকার কবিরউদ্দিন কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন ইউএসএইড, এনজিও হেল্থ সার্ভিস ডেলিভারী প্রজেক্ট এবং এনএইচএসডিপি বাংলাদেশের চিফ অব পার্টি ড. হালিদা এইচ আখতার, পপুলেশন কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. উবায়দুর রব, হেল্থ এন্ড ন্যুট্রিশন, মামণি এবং সেভ দ্যা চিলড্রেনের ডিরেক্টর ড. ইশতিয়াক মান্নান।

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার মাতৃমৃত্যু ঘটে থাকে, এরমধ্যে প্রায় ৫২ভাগ মারা যায় রক্তপাত ও খিচুনীজ্বনিত রোগে। আর ৫০ভাগ নবজাতক প্রথম ৩দিন এবং ২৪ ভাগ একদিনের মধ্যে মারা যায়। অথচ সামান্য সচেতনতা বাড়িয়ে গর্ভবতী মায়েদের চিকিত্সার ব্যবস্থা করলে ৮০ থেকে ৯০ভাগ প্রিভেন্টেবল ডেথ অর্থাত্ এদের মৃত্যু প্রতিরোধ করে তাদেরকে বাঁচানো সম্ভব বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

কর্মশালায় আরো বলা হয় বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটের চার জেলা অর্থাত্ সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় এই মৃত্যুর হার তুলনামুলকভাবে অনেকটা বেশী। তবে আশার কথা হলো যে সিলেটে এই হার কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর মাতৃমৃত্যুর হার ৪.৫ শতাংশ হারে কমানোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী সিলেটে তা ৫.৫ শতাংশ হারে কমেছে। কিন্তু তারপরও সিলেটে আরো বেশী সচেতনতা তৈরী করে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সংশ্লিষ্ট সকলের ভুমিকা রাখা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। তারা জানান ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার শুন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কাজ করে যাচ্ছে।

কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী গণমাধ্যম কর্মীদের সিলেট নগরী থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দুরবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় গর্ভবর্তী মাদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সাইট ‘মামনীতে’ নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশে উপজেলা পর্যায়ে মামনীর মতন প্রকল্প আর দ্বিতীয়টি নেই। সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় জন্মের পরপর ইনকুবেটর যন্ত্রের সাহায্যে তারা নবজাতকদের মৃত্যুর প্রতিরোধ করে থাকেন। তারা জানান, শুন্য থেকে ২৮দিন বয়সের শিশুরা তাদের চিকিত্সা কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারে। তাদের এখানে প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী স্টেজের লাইফ সাপোর্টের ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানানো হয়।

সেখানে সেবা গ্রহনকারী মাদের সঙ্গে কথা বলে, কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী স্থানীয় সাংবাদিকরা এই মর্মে একটা স্পষ্ট ধারনা পান যে, গর্ভবতী মায়েদের সঠিকভাবে চিকিত্সা সেবা দেয়া হলে মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মামনীর মতন প্রকল্প গড়ে তোলা সম্ভব না হলেও ব্যাপকহারে গণসচেতনা বাড়ানো গেলে বলা যায় এই মৃত্যু প্রতিরোধ করা মোটেও কঠিন কাজ নয়।

কামকামুর রাজ্জাক রুনু

স্টাফ রিপোর্টার, আরটিভি

XS
SM
MD
LG