বাংলাদেশের অব্যহত রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অভ্যন্তরীণ সংকট উল্লেখ করে যুক্তরাস্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাস্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেছেন নিজেদেরকেই এর সমাধান করতে হবে। ওয়াশিংটন ডিসির ফরেন প্রেস সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে নিশা দেশাই এ মন্তব্য করেন।
দক্ষিন এশিয়ায় যুক্তরাস্ট্রের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে নিশা দেশাই বিশওয়াল বলেন বাংলাদেশের সহিংস পরিস্থিতিতে যুক্তরাস্ট্র উদ্বিগ্ন, “আমরা উদ্বিগ্ন। সহিংসতা সকল দলেই পরিহার করা উচিৎ”।
নিশা দেশাই বলেন হোয়াইট হাউজের উদ্যোগে জঙ্গীবাদ বিরোধী সম্মেলনে বিশ্বের বহু দেশের নেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশ নেন এবং তার সঙ্গে যুক্তরাস্ট্রের পররাস্ট্রমন্ত্রী জন কেরীর বৈঠক হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অব্যহত সহিংসতা সম্পর্কে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। জন কেরী তাকে বলেছেন বাংলাদেশের সংকট নিরসণে যুক্তরাস্ট্রের কাছে যে কোনো সহযোগিতা চাইলে তা দেয়া হবে।
“জন কেরী তাক বলেছেন যে রাজনৈতিক দলের জন্যে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। একই সাথে সরকার যেনো বিরোধী রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্নভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দেয় তাও নিশ্চিত করতে হবে। সকলের সমন্বয়ে রাজনৈতিক পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। গনমাধ্যমের মৌলিক স্বাধীনতা ও নাগরিক সমাজের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে”।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাকে যুক্তরাস্ট্র রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রনোদিত মনে করে কি না এমন প্রশ্নে বিশওয়াল বলেন – “অভিযোগগুলো কি তা ভালোভাবে না জেনে মন্তব্য করতে চাই না। তবে সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। অভিযোগ দাখিলের আইনগত পদ্ধতি আছে। আমরা মনে করি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বাংলাদেশে অর্থপূর্ণ বিরোধী রাজনৈতিক দলের জন্যে মত প্রকাশের সুযোগ থাকা দরকার”।
বাংলাদেশের সহিংসতা নিরসণে যুক্তরাস্ট্র কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি না এমন প্রশ্নে তিনি আবারো বলেন, বাংলাদেশের সহিংস পরিস্থিতিতে আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন।
“আমরা মনে করি এসব বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং নিজেদেরকেই তা মিটিয়ে ফেলতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের সহিংসতা পরিহার করে দেশে সমন্বিত রাজনৈতিক পদ্ধতি গড়ে তোলা প্রয়োজন। একই সাথে সরকারের উচিৎ শান্তিপূর্নভাবে যেনো বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ মত প্রকাশ করতে পারে সে সুযোগ দেয়া”।
তিনি বলেন আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। বাংলাদেশের সরকার, বিরোধী দল, শুশীল সমাজ সকলেল সঙ্গে যুক্তরাস্ট্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
গনমা্ধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে নিশা দেশাই বিশওয়াল বলেন বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিক সমাজ শুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিৎ। উচিৎ সিভিল সোসাইটির মতামতকে সম্মান দেখানো। তিনি আশা করেন বাংলাদেশেও তাই হবে।
নিউইয়র্র্ক থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নিশা দেশাইকে প্রশ্ন করেন বাংলাদেশী সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারি। তিনি জানতে চান বাংলাদেশের সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র চায় সরকার ও বিরোধী দলের সংলাপ অথচ সরকার বিদেশী হস্তক্ষেপ গ্রহণ করবেনা বলে জানিয়েছে, এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কি। উত্তরে নিশা বলেন – বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে তা নিজেরাই সমাধান করবে এই আশা করেন তিনি।
সভায় ইসলামিক ষ্টেটমহ জঙ্গীবাদী গোষ্ঠির তৎপরতা বন্ধে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সরকোরসমূহের সহযোগিতা আশা করেন তিনি।
“সারা বিশ্বে ইসলামিক স্টেটের কর্মকান্ডে আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে মধ্য ও দক্ষিন এশিয়া থেকে তারা যে বিদেশী যোদ্ধা নিয়োগের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তরুণদেরকে অর্থের লোভ দেখিয়ে তারা তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব আশংকার বিষয়। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকারসমূহ যুক্তরাস্ট্রের সহযোগিতা করে আইএস ও জঙ্গীবাদ দমনে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস”।
ওবামা মোদী বৈঠকে আইএস দমনে যুক্তরাস্ট্র ভারত যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছিল কি না এ প্রশ্নে নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন আইএস ও জঙ্গীবাদ নিয়ে দু নেতার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
“কিভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়েও কথা হয় দু’নেতার মধ্যে। তবে আইএস দমনে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোয়ালিশনে যোগ দেবে কিনা বা পৃথকভাবে তারা করবে সেটা ভারতের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে আমরা তাদের সহযোগিতার মূল্যায়ন করি তাদেরকে স্বাগত জানাই"।
ভারতে প্রেসিডেন্ট ওবামার সাম্প্রতিক সফরকে সফল উল্লেখ করে নিশা বিশওয়াল বলেন দক্ষিন এশিয়ার উন্নয়ন সহযোগি হিসাবে যুক্তরাস্ট্র যে গুরুত্বপূর্ন তা এই সফরের মধ্য দিয়ে প্রমান হয়েছে। তিনি বলেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাস্ট্র দক্ষিন ও মধ্য এশিয়ার উন্নয়ন সহযোগি হিসাবে কাজ করবে।