অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অর্ধেক ভাড়ার সুরাহা হয়নি: বাংলাদেশে আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা


নিরাপদ  সড়ক ও গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবিতে আন্দোলনরত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
নিরাপদ  সড়ক ও গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবিতে আন্দোলনরত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

নিরাপদ সড়ক ও গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবিতে আন্দোলনে অনড় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে শনিবারও ঢাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। নিজেদের দাবি বাস্তবায়নে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তারা চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। রোববার এবং সোমবারও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা অনড় অবস্থানে থাকলেও অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবির বিষয়ে শনিবারও কোনো সুরাহা হয়নি। এদিন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, বিদ্যমান অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিয়ে তারা পরিবহন পরিচালনা করতে পারবেন না। শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি বা প্রণোদনা দিতে হবে।

নিরাপদ সড়ক ও অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই গত বুধবার নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী ট্রাক চাপায় মারা যান। তার মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরো জোরদার হয়। তাদের অন্যান্য দাবির সঙ্গে নাঈমকে চাপা দেয়া গাড়ি চালকের শাস্তির দাবি যুক্ত হয়। কলেজছাত্র নাঈমের মৃত্যুর পরের দিন ঢাকা উত্তর সিটির আরেকটি বর্জ্যবাহী ট্রাক চাপায় একজন গণমাধ্যম কর্মীর মৃত্যু হয়।

পরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই দুটি ঘটনায় ট্রাকের প্রকৃত চালক গাড়িতে ছিলেন না। নাঈমকে চাপা দেয়া ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মী নন। অন্যদিকে গণমাধ্যমকর্মী আহসান কবির খানকে চাপা দেয়া উত্তর সিটির ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন হানিফ নামের একজন মেকানিক। হানিফকে শুক্রবার চাঁদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তারের পর হানিফ জানিয়েছেন, তিনি সিটি করপোরেশনের চালক নন। গাড়ির জ্বালানি তেল চুরি করার সুযোগ থাকায় তিনি গাড়ি চালাতেন।

ওদিকে শনিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর আসাদগেট ও ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। এক পর্যায়ে তারা ৯ দফা দাবি পেশ করে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেধে দিয়ে সড়ক থেকে সরে যায়। দাবি আদায় করতে রোববার এবং সোমবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় তারা।

জ্বালানি তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করে। এরপর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মুখে শুক্রবার সরকারি মালিকানাধীন বিআরটিসি বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০ ভাগ ভাড়া কম নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই ঘোষণা দিয়ে জানান, ১লা ডিসেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিন সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পাবে।

সরকার এই ঘোষণা দিলেও বেসরকারি বাস মালিকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাড়া কম নিতে নারাজ। শনিবার মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে পরিবহন মালিকরা উল্টো ভর্তুকি দাবি করে বলেছেন, টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য যেন ভর্তুকি নির্ধারণ করা হয়।

বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ২৫শে নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় দিনের বৈঠক হয়। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল-কলেজে যায়। এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সরকার বিআরটিসি বাস বাড়ানো বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বাস সরবরাহের বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছেন মালিক সমিতির নেতারা। বৈঠকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মোশাররফ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

XS
SM
MD
LG