হোয়াইট হাউস এর শীর্ষ উপদেষ্টা ও প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প, বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে আফ্রিকায়, নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে আফ্রিকা মহাদেশে চার দিনের সফরে যান।
আজ আপনাদেরকে সে সম্পর্কেই বিস্তারিত শোনাব।
ইথিওপিয়ায় তিন দিন কাটানোর পর, হোয়াইট হাউস এর শীর্ষ উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্প আইভোরি কোস্ট যান। আফ্রিকা মহাদেশে নারীর অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে সেখানে চার দিনের সফরে সেটিই সব শেষ যাত্রা বিরতি ছিল। বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কয়েক দশক ধরে পূর্বেকার আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা যে নীতিমালা গ্রহণ করেন, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প এর এই সফর সেই ইঙ্গিতই বহন করে যে ট্রাম্প প্রশাসন ওই নীতিমালা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী। কিন্তু এমন সময় ইভাঙ্কা ট্রাম্প ওই সফর করলেন যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার “America First” নীতির অধীনে বৈদেশীক সাহায্য দেওয়ার নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন।
আমাদের হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা প্যাটসি উইডাকুসওয়ারা তার রিপোর্টে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
আফ্রিকা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র অঞ্চল যেখানে পুরুষদের চাইতে মহিলারাই বেশী উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন।
আদ্দিস আবাবায় হোয়াইট হাউস উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্প নারী মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন এবং একটি টেক্সটাইল কারখানায় তিনি সুতো বোনার কাজ করেন, ইথিওপিয়ান কফি পান করেন এবং নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য হোয়াইট হাউস এর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
হোয়াইট হাউস উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্প, বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি নারীদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করাটা অত্যন্ত ভাল উন্নয়ন নীতি এবং ব্যবসা ক্ষেত্রেও তা ভাল। এছাড়াও এটা আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে। কারণ নারীর ক্ষমতায়ন হলে শান্তি ও স্থিশীলতা বৃদ্ধি পায়। আমরা বার বার এটা দেখেছি।.”
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে কর্ম ক্ষেত্রে এবং ব্যবসায়ে মহিলাদের জন্য সুয়োগ সৃষ্টি করা। এমন ভাবে তা করা হবে যাতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রসারিত হয়, ব্যবসায় অর্থায়ন, এবং যে সব নিয়ম কানুন বা আইন মহিলাদের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে তা পরিবর্তন করে।
বিশ্বে পুরুষরা যা আয় করেন তাঁর মাত্র ৬৩ শতাংশ উপার্জন করেন মহিলারা। বিশ্বে অর্ধেকের বেশী দেশে, পুরুষরা যে ভাবে ব্যবসা চালান, মহিলারা এখন পর্যন্ত সেই একই ভাবে তা করতে পারেন না। মেয়েদের পক্ষে ঋণ পাওয়া, চুক্তি সাক্ষর করা এবং ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা কঠিন। আরেকটি বড় বাধা হচ্ছে শিক্ষা প্রাপ্তি।
ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট সাহলে ওয়ার্ক জিওদে বলেন, “আমাদের প্রথমেই যেটা করা প্রয়োজন তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া। শিক্ষিত মেয়েরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাশ করে বেরোতে পারে কারণ তারা বহু বাধার সম্মুখিন হয়। ."
ফেব্রুয়ারী মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প “Women’s Global Development and Prosperity” শীর্ষক একটি প্রস্তাবে সাক্ষর করেন যেটির উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইভাঙ্কা ট্রাম্প। ওই প্রস্তাবে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৫ কোটি নারী যাতে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়, তার জন্য প্রাথমিক ভাবে ৫ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল ।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর “America First” নীতির অধীনে বারবার বৈদেশিক সাহায্য কমিয়ে ফেলার জন্য চাপ দিয়েছেন। তার পরিবর্তে তিনি চেয়েছেন সামরিক ব্যয় বাড়াতে।
কিন্তু বর্তমানের এই উদ্যোগ এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গত চার দশক ধরে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টরা বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে নীতিমালা গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প প্রশাসন সেই একই ধারা মেনে চলছে।
Center for Strategic and International Studies, CSIS এর ড্যানিয়েল রান্ড বলেন, “এটা নতুন কিছু নয়, কিন্তু এতে ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেয়। আপনি যদি ওবামা প্রশাসনের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন নীতি সমর্থন করেন তাহলে আপনার ট্রাম্প প্রশাসনকেও একটা সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের এই পদক্ষেপকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।”
ইথিওপিয়ায় জাতিসংঘের আফ্রিকা বিষয়ক অর্থনৈতিক কমিশনে নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত আলোচনার হোতা ছিলেন ইভাঙ্কা ট্রাম্প । সেখানে তিনি "OPIC 2X Africa,"র কথা ঘোষণা করেন। যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বা তাতে নেতৃত্ব দেন মহিলারা বা তাদের সাহায্য করার জন্য কাজ করেন তাদেরকে Overseas Private Investment Corporation OPIC থেকে ৩৫ কোটি ডলার অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে।