বিশ্বের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা লংঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাস্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চীন ইরান নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ করে বলেছেন সেসব স্থানে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে লংঘিত হচ্ছে।
আমাদের কুটনৈতিক সংবাদদাতা সিন্ডি সেইন তার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যুক্তরাস্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ ২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে চীনে ধর্মীয় স্বাধীনতা লংঘনের প্রমান সবচেয়ে মারাত্মক।
চীনে রাষ্ট্রীয় মদদে ধর্মীয় স্বাধীনতা লংঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন চীন সরকার যে মানুষের বিশ্বাসের ওপর সমাজতন্ত্রের আদর্শ চাপিয়ে দিচ্ছে তা মেনে নেয়া যায় না।
মাইক পম্পেও বলেন, “চীনা কমিউনিস্ট পার্টি CCP নেতৃত্ব মানার জন্যে জোর করছে ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পর্যন্ত সমাজতন্ত্রের আদর্শ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। উইঘোর সম্প্রদায়ের ওপর দমন নির্যাতন গ্রেফতার আব্যাহত রয়েছে। তিব্বতীয় এবং বৌদ্ধদেরর ওপর, ফালুন গং ও খ্রীষ্টানদের ওপরও চলছ নানা নির্যাতন”।
উইঘোর সম্প্রদায়ের ওপর চীনের কার্যক্রমের সমালোচনার বিরুদ্ধে চীন বলছে এটা তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়, এতে বাইরের কেউ হস্তক্ষেপ না করলেই ভালো।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ধর্মীয় অধিকার কর্মী ইমাম মালিক মুজাহিদ পররাষ্ট্র বিভাগের ধর্মীয় স্বাধিনতা বিষয়ক এই প্রতিবেদনটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, এর বেশিরভাগই সমর্থন করি। তবে ভারত এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশের আসল চিত্র এখানে উঠে আসেনি।মিনেসোটায় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে যখন চলছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সেই সমসয়ে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়; ধর্মীয় স্বাথধীনতা বিষয়ক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলো।
এই কারনে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন; যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে বর্ণবিদ্বেষ, বর্ণবৈষম্য ও ন্যায় বিচার প্রকতিষ্ঠার আন্দোলন, সেই সময় অন্য দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাস্ট্রের বক্তব্য মন্তব্য কতোটা যুক্তিসঙ্গত। এই প্রশ্নে মাইক পম্পেও বলছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন।
পম্পেও বলেন, “জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনার মতো দু:খজনক বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উদ্বিগ্ন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আমেরিকার আইন শৃংখলা রক্ষা বিহানী এবং বিচার বিভাগ উভয়ই দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়ে কাজ করছে”।
এই প্রশ্নে ইমাম মালিক মুজাহিদ বলেন, “আমি নিজে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সমর্থক। তবে যুবক্তরাষ্ট্র প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতারা রাজনীতির উধ্যে উঠে এর সমাধানের চেষ্টা করছেন, এটা আশার কথা”।
ধর্মীয় স্বাধীনতার রিপোর্টে বলা হয়েছে নাইজেরিয়ায় ইসলামিক ষ্টেট এবং বোকো হারাম সন্ত্রাসীরা মুসলিম এবং খ্রীষ্টান উভয় ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে চলেছে।
যুক্তরাস্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা দূত স্যা্ম ব্রাউনব্যাক ঐ রিপোর্টের ভিত্তিতে যেসব স্থানে ধর্মীয় স্বাধীনতা লংঘিত হচ্ছে তা বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেযার আহবান জানিয়ে বলেছেন, “নাইজেরিয়ায় যা ঘটছে তাতে আমি দারুনভাবে উদ্বিগ্ন। এসব বন্ধে সেখানকার সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ”।
ব্রাউনব্যাক বলেন মুসলিম অধ্যুষিত সৌদী আরবও মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা লংঘনের এটি আন্যতম দেশ যেখানে এখনো পর্যন্ত একটি একক চার্চ নেই।
রিপোর্টে বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয় বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী মুসলিম দেশ হলেও সেখানে ধর্ম নিরপেক্ষতা একটি আদর্শ। দেশটিতে ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান নামের একটি রেস্টুরেন্টে ২২ জনকে হত্যার অভিযোগে, যাদের বেশিরভাগই অমুসলিম ছিলেন; ২৭শে নভেম্বর একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল, অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুদন্ড দিযেছে।
তবে রিপোর্টে বলা হয়, দেশটিতে থাকা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানরা সরকারের সংখ্যালঘূ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ করেছে।
অক্টোবরে হিন্দু মন্দিরে হামলার ঘটনায় সহিংসতা হয়েছে, আগষ্টে কুমিল্লায় অম্রিত নন্দ নামের এক বৌদ্ধ হত্যার ঘটনা ঘটেছে, খ্রীস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নানা নির্যাতনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এসব নিরসনে সরকার ও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করে তা নিরসনের আহবান জানিয়েছেন।
২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৬৬৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছেন মানবিক কাজে ব্যয় করতে, বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশএ আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সহায়তায়। রিপোর্টে বাংলাদেশে আরো ধর্মীয় সহাবস্থান নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হয়।