অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে নানা প্রশ্ন


ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

এই উপমহাদেশে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, সৃষ্টি হয় বিতর্কের। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে নাগরিক অধিকার হরণ ও বিরুদ্ধ স্বরের দমনে নানাবিধ দমনপীড়নের অভিযোগ বারে বারেই উঠেছে। অতি সম্প্রতি সেই বিতর্কই যেন উস্কে দিয়েছে একটি মন্তব্য।

মন্তব্যটি কিন্তু যে কারও নয়। খোদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য। কী বলেছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়? বলেছেন, প্রশাসন মিথ্যে কথা বললে তা ফাঁস করে দেওয়া বিদ্বজ্জন বা বুদ্ধিজীবীদের কর্তব্য। মিথ্যে তথ্য বা ভুয়ো খবর থেকে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে ক্ষমতাসীন সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলা খুব জরুরি। গত ২৮ আগস্ট প্রয়াত বিচারপতি এম সি চাগলার স্মরণে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে ভাষণ দিতে গিয়ে বিচারপতি এ সব কথা বলেন।

গোটা ভাষণের কোথাও বিচারপতি কিন্তু ভারতবর্ষের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি, কিন্তু তাঁর বেশ কিছু মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল।

যেমন, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের এই বিচারপতি বলছেন, গণতন্ত্র ও সত্য হাত ধরাধরি করে চলে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে সত্যকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। সকলকে মনে রাখতে হবে, প্রশাসনকে প্রশ্নের মুখে ফেলে সত্যকে তুলে ধরা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার এবং কর্তব্য।

বিচারপতি চন্দ্রচূড় অবশ্য ওখানেই থামেননি। বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্র যেটা বলেছে সেটাকেই সত্য বলে বিশ্বাস করবেন না। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য স্বেচ্ছাচারী সরকার ক্রমাগত মিথ্যের উপর ভরসা করে, এটা প্রমাণিত।’’

এই প্রসঙ্গেই বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র ভয়েস অব আমেরিকা-কে বলেন, ‘‘নাগরিকের অধিকার রক্ষায় বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতো এ রকম বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ইদানীং কালে নেই। বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ার, বিচারপতি ভগবতীর পরে এ রকম কণ্ঠস্বর আর আসেনি।’’

সাম্প্রতিক অতীতে কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ সারা দেশেই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যেমন, ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় দেশের মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, কবিসহ প্রায় ১৬ জনকে জেলবন্দি করা রাখা হয়েছে। বার বার আদালতে আর্জি জানানো সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে কবি ভারাভারা রাও ছাড়া আর কাউকেই জামিনে ছাড়া হয়নি। এর মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মযাজক স্ট্যান স্বামী অসুস্থ হয়ে জেল হেফাজতেই মারা গিয়েছেন। এই মৃত্যুতেও দেশ জুড়ে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়। স্ট্যান স্বামী আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় আমৃত্যু কাজ করেছেন।

শুধু এই ঘটনাই নয়, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে শাহিনবাগ আন্দোলন, কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষকদের লাগাতার আন্দোলন তোলার জন্য নানা দমনমূলক পদক্ষেপ, দেশের নানা প্রান্তে বিরুদ্ধ স্বর দমাতে নির্বিচারে বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইনের (ইউএপিএ) প্রয়োগ বারে বারেই গণতন্ত্র রক্ষায় ভারত সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরই পাশাপাশি, রাষ্ট্রদ্রোহিতা (সিডিশন) আইন ও নানা নিবর্তনমূলক আইন তোলার দাবিতে প্রতিবাদ আন্দোলনও চলছে।

ওই ওয়েবিনারেই বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেছেন, আমরা এমন এক জগতে বাস করছি যেখানে সত্য সার্বিক নয়। ‘আমার সত্য’ আর ‘তোমার সত্য’-র মধ্যে লড়াই চলছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই সমাজবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ভয়েস অব আমেরিকাকে বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতি এ কথা বলছেন, এটা তাৎপর্যপূর্ণ। কথাগুলো শুনতেও ভাল লাগছে। তিনি মোদী জমানায় এ সব বলছেন। তিনি হঠাৎ কেন এ কথা বললেন? তিনি কি মনে করছেন, যে সরকার এখন ক্ষমতাসীন সেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা যায় না? এ থেকে এটাও স্পষ্ট যে এই জমানার বেশ কিছু কাজকর্ম ও সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচারপতিদের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।’’

মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্রের মন্তব্য: ‘‘নাগরিকের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে বিচারপতি চন্দ্রচূড় এক ধ্রুপদী উদাহরণ। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নেও তাঁর মতো বিচারপতিরা অতন্দ্র প্রহরী।’’

XS
SM
MD
LG