এক সপ্তাহ হয়ে গেল বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনো ভয়-আতঙ্ক কাটেনি।
আন্দোলনের সময় ছিল এক ধরনের আতঙ্ক। রাজপথে কখন হেলমেট বাহিনী এসে হামলা চালায়। পুলিশ শুরুতে ফ্রেন্ডলি থাকলেও পরে মারমুখী হয়ে উঠে। এখন আতঙ্ক অন্যখানে। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা যে সব স্ট্যাটাস বা পোস্ট নিজস্ব ফেসবুক পেইজে দিয়েছিল তা নিয়েই মূলত আতঙ্ক। পুলিশের তরফে অভিযান চলছে।
ইতিমধ্যেই ১৩শ’রও বেশি একাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা সব স্ট্যাটাস ও পোস্ট মুছে দিচ্ছে। কারণ কখন পুলিশ এসে হানা দেয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। দুই সহপাঠীর মৃত্যুতে রাজপথে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ঢাকা-পরে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ফেসবুকই ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। কিছু গুজবও ছড়িয়ে পড়ে তখন।
পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন গুজব রটনাকারীদের ধরতেই অভিযান শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী তাদের নিজস্ব স্কুল বা কলেজে নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদেরকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর একটি কলেজের ছাত্র বললেন, কথা বলার স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় ফেসবুক থেকে সবই সরিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শুধু কি ছাত্র? সমাজের সর্বস্তরেই আতঙ্ক কাজ করছে। ফেসবুক বন্ধ করার বিষয়টি সরকারের টেবিলে। এ সম্পর্কে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা কার্যকর হওয়ায় অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে এই আইনে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ২১ জন সাংবাদিক আন্দোলন চলাকালে হেলমেট বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হন। সাংবাদিকরা এ নিয়ে ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শনিবার বলেছেন, যারা এ সবের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হবে। ২২ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল। তারা রাজপথে এক ধরনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিল। সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট, পরিস্থিতি আগে যা ছিল তা ফিরে এসেছে। শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের গাড়িতে বাসের ধাক্কার খবর নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্দোলন চলাকালে হঠাৎ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করেছিল। শনিবার আরো তিন দিন বাড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এক সপ্তাহে পুলিশ ১ লাখ ১৩ হাজার ৪২৩টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। জরিমানা করা হয়েছে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৩ টাকা। ৪০ হাজার ৬৩০ জন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে মতিউর রহমান চৌধুরী