অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার কথিত ইন্ধনদাতাকে গ্রেপ্তারের দাবি কক্সবাজারের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের


আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক আটক মৌলভি জকোরিয়া। ছবি: ফাহিম রহমান
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক আটক মৌলভি জকোরিয়া। ছবি: ফাহিম রহমান

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার অভিযুক্ত মৌলভী জকোরিয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। তাদের দাবি, গ্রেপ্তার জকোরিয়া মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার একজন ইন্ধনদাতা এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ওলামা শাখার প্রধান কমান্ডার। তিনি উখিয়ার কুতুপালং (ক্যাম্প-১ পশ্চিম) আশ্রয়শিবিরের ডি-ব্লকের বাসিন্দা।

রবিবার (৬ মার্চ) সকালে ওই আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে জকোরিয়াকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন। দুপুরে তাকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৪ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌলভী জকোরিয়া ২০১৫ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে উখিয়ায় আশ্রয় নেন এবং কয়েক মাস পর মিয়ানমারে ফিরে যান। ২০১৭ সালে ২৫ অগাস্টের পর রোহিঙ্গা ঢলের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ পালিয়ে এসে উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে বসবাস শুরু করেন। ২০১৯ সালে আরসার ওলামা শাখার ফতোয়া বিভাগের দায়িত্ব পান তিনি। ২০২০ সাল থেকে আরসার কুতুপালং ক্যাম্প এলাকার ওলামা শাখার প্রধান কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।

কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) হামিদ হোসেন ভয়েস অফ আমেরিকার এই প্রতিবেদকে জানান, উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা বসতি করছেন। রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য আশ্রয়শিবিরগুলোতে মাদরাসা-মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ৩০০টি। বিদেশি অনুদানে চলে এসব মাদরাসা। আরসা ওলামা পরিষদ শাখার নেতৃত্বে অধিকাংশ মাদরাসা–মক্তব পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এই সাহায্যের টাকা নিয়ে চলে লুটপাট। এ নিয়ে মুহিবুল্লাহ সমর্থক গোষ্ঠী, সাধারণ রোহিঙ্গা ও রোহিঙ্গা মৌলভীদের মধ্যে বিরোধ লেগেছিল।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের ভাষ্য, এর জের ধরে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে বন্দুকধারীদের গুলিতে খুন হন মুহিবুল্লাহ (৪৮)। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মুহিবুল্লাহর ছোটভাই হাবিবুল্লাহ। ঘটনার পর হাবিবুল্লাহ বলেছিলেন, আরসা কমান্ডার আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ১৯ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মুহিবুল্লাহকে পরপর চারটি গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক ফোনে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “মুহিবুল্লাহ হত্যার পর ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০০ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত চারজনসহ ওই মামলার ১২ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজন দোষ স্বীকার করে কক্সবাজার বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। সর্বশেষ আরসার ওলামা শাখার কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করা হলো।”

নাঈমুল হক আরও বলেন, “গত ১৬ জানুয়ারি ভোর রাতে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের নৌকার মাঠ এলাকার একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, মাদক ও নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয় আরসা নেতা শাহ আলীকে (৫৫)। তিনি আরসা প্রধান আতাউল্লাহর ভাই। ক্যাম্পের আস্তানায় লুকিয়ে এতদিন রোহিঙ্গাদের ১০-১২টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতেন এই শাহ আলী। টানা ৬ দিনের পুলিশি রিমান্ড শেষে শাহ আলীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”

গ্রেপ্তার ১২ জনের সবাই কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দি আছেন জানিয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্ত এগিয়ে চলেছে। মুহিবুল্লাহ খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী ক্যাম্প ছেড়ে মিয়ানমারে পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে পারলে মুহিবুল্লাহ হত্যার নেপথ্য পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করা যেত।”

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি কার্যালয় ও বাসভবন হোয়াইট হাউসে ১৭ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের একজন হয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ওই সাক্ষাতের সময় মুহিবুল্লাহ বলেছিলেন, “আমরা (রোহিঙ্গারা) দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চায় রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী।”

এই সাক্ষাতের কিছুদিন পর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ২৫ অগাস্ট উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের ফুটবল খেলার মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গারকে জড়ো করে “গণহত্যা” দিবসের মহাসমাবেশ করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। ওই মহাসমাবেশে মুহিবউল্লাহ রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব ও নিরাপত্তা প্রদান, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটা ফেরতসহ সাতদফা দাবি মেনে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন।

XS
SM
MD
LG