অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার কথিত ইন্ধনদাতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন পুলিশের


আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক আটক মৌলভি জকোরিয়া। ছবি: ফাহিম রহমান
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক আটক মৌলভি জকোরিয়া। ছবি: ফাহিম রহমান

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহ (৪৮) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে এই হত্যা পরিকল্পনার কথিত ইন্ধনদাতা মৌলভি জকোরিয়াকে (৫৫)।

মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রবিবার (৬ মার্চ) বিকেলে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। সোমবার (৭ মার্চ) বিকেল পাঁচটা পযন্ত সেই আবেদনের শুনানি হয়নি।

পুলিশ জানায়, রবিবার সকালে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে মৌলভি জকোরিয়াকে গ্রেপ্তার করে রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। জকোরিয়া উখিয়ার কুতুপালং (ক্যাম্প-১ পশ্চিম) আশ্রয়শিবিরের ডি-ব্লকের বাসিন্দা।

রবিবার দুপুরেই মৌলভি জকোরিয়াকে উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এপিবিএন। বিকেলে উখিয়া থানা পুলিশ মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। এরপর আদালত জকোরিয়াকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় আদালতে জকোরিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।

মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন ভয়েস অফ আমেরিকার এই প্রতিবেদককে বলেন, “মৌলভি জকোরিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আজ সোমবার বিকেল ৫টা পযন্ত আবেদনের শুনানি হয়নি। কাল অথবা পরশু শুনানি হতে পারে। জকোরিয়াকে রবিবার রাতে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”

এপিবিএন পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার মৌলভি জকোরিয়া মুহিবুল্লাহ হত্যার পরিকল্পনাকারী ও ইন্ধনদাতাদের একজন। তিনি মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী “আরাকান স্যালভেশন আর্মির” (আরসা) সহযোগী সংগঠন ওলামা কাউন্সিল কুতুপালং শাখার প্রধান কমান্ডার।

গাজী সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, “গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মৌলভি জকোরিয়া বেশকিছু গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিয়েছেন। মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নাই দাবি করে তিনি (জকোরিয়া) পুলিশকে বলেছেন, আরসার কর্মকান্ড তার পছন্দে হয় না। তাকে ওই সংগঠনে ভেড়ানোর জন্য তার বাড়িতেও কয়েক দফা হামলা চালিয়েছিল আরসা। এরপর বাধ্য হয়ে তিনি আরসার সদস্য হন। পরবর্তীতে আরসার সহযোগী সংগঠন ওলামা কাউন্সিল প্রধান মৌলভি মোস্তাক আহমদ তাকে কুতুপালং ওলামা কাউন্সিল শাখার প্রধান কমান্ডারের দায়িত্ব দেন। কিন্তু মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের পর আরসার অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনিও আত্মগোপন করেছিলেন। মুহিবুল্লাহ সঙ্গে তার পুর্বপরিচয়ও ছিল।”

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ আলম ও নবী হোসেন ভয়েস অফ আমেরিকার এই প্রতিবেদকে জানান, রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ক্যাম্পসমূহে অন্তত ৩০০টি মাদরাসা-মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদেশি অনুদানে চলে এসব মাদরাসা–মক্তব। মাদরাসা-মক্তবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুহিবুল্লাহ সমর্থিক রোহিঙ্গা মৌলভির সঙ্গে আরসার সমর্থক ওলামা কাউন্সিলের বিরোধ লেগেছিল। সাধারণ রোহিঙ্গাদের সন্দেহ-মূলত এর জের ধরেই আরসা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে বন্দুকধারীদের গুলিতে খুন হন মুহিবুল্লাহ। তিনি “আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের” (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মুহিবুল্লাহর ছোটভাই হাবিবুল্লাহ।

বর্তমানে কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। ক্যাম্পসমূহে রোহিঙ্গা কর্তৃক পরিচালিত তিন শতাধিক মাদরাসা-মক্তরে মৌলভির সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তাদের অধিকাংশ মুহিবুল্লাহর সমর্থক।

XS
SM
MD
LG