অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টাকালে কক্সবাজার উপকূল থেকে ১৩৬ রোহিঙ্গা শরণার্থী উদ্ধার


কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে উদ্ধার রোহিঙ্গা শরণার্থী। ছবি: ফাহিম রহমান
কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে উদ্ধার রোহিঙ্গা শরণার্থী। ছবি: ফাহিম রহমান

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার শরণার্থী শিবির থেকে ১৩৬ জনের একটি রোহিঙ্গা দলকে ট্রলারে করে সুমদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টাকালে উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে এসব রোহিঙ্গাদের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে উদ্ধার করে মহেশখালী থানার পুলিশ। উদ্ধার করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৪০ জন পুরুষ, ৭৩ জন নারী ও ২৩ জন শিশু রয়েছে।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা পুরুষদের মালয়েশিয়াতে নিয়ে ভালো জায়গায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার এবং মেয়েদের ভালো পাত্রে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে জড়ো করা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রত্যেকের কাছ থেকে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর খরচ হিসেবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন মানবপাচারের দালালচক্র। অবশ্য এ চক্রের কাউকে এ প্রতিবেদন লেখা (রাত ৮টা) পর্যন্ত ধরতে পারেনি পুলিশ।

১৩৬ জনের রোহিঙ্গা দলকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকার এই প্রতিবেদককে জানান, রাতের মধ্যে ১৩৬ জন রোহিঙ্গাকে সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে নৌযানে তুলে ১০ কিলোমিটার দূরের কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে আনা হবে। সেখান থেকে বাসে তুলে পাঠানো হবে ৪৫ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার ট্রানজিট ঘাটে। এরপর শরণার্থীদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে যে, মালয়েশিয়া পাচারের জন্য ১৩৬ জন রোহিঙ্গাকে সোনাদিয়া দ্বীপে জড়ো করা হচ্ছিল। পরবর্তীতে আরও কিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে এদেরও ট্রলারে তুলে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল দালালচক্র। কিন্তু তার আগেই পুলিশ রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করায় তারা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন।”

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন দালাল রয়েছে। যারা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাশের প্যারাবনে আত্মগোপন করেছে। তাদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো, আবদুল হাই বলেন, “রাত ১০টার দিকে সাগরে জোয়ার শুরু হলে উদ্ধার রোহিঙ্গাদের সাতটি ট্রলারে তুলে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ জেটিতে পাঠানো হবে। সেখান থেকে পাঠানো হবে উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে। উদ্ধার রোহিঙ্গাদের দুপুরের খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় জেলেরা বলেন, সোমবার সকাল ১০টার দিকে নির্জন সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম সৈকতে একটি ট্রলার থেকে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে নামানো হচ্ছিল। বালুচরে বিপুলসংখ্যক নারী–শিশুর জটলা দেখে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শেখ কামাল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিশ্চিত হন, সবাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। দালালচক্র মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দিয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয়শিবির থেকে শরণার্থীদের বের করে ট্রলারে সেখানে নিয়ে আসে।

এরপর ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনার কথা মহেশখালী থানার পুলিশকে অবগত করেন। দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে ১০৩ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে। পরে বিকেল ৫টা পযন্ত আরও কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে আরও ৩৩ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে।

উদ্ধার রোহিঙ্গার উদ্বৃতি দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. শেখ কামাল বলেন, “মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে দালালচক্র রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দালালচক্র জঙ্গলে আত্মগোপন করে। ১৩৬ জনকে উদ্ধার করা গেলেও কিছু রোহিঙ্গা অন্যত্র পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কয়েক বছর সমুদ্রপথে মানব পাচার বন্ধ থাকার পর এখন আবার তৎপর হয়েছে দালালচক্র। এই চক্রের প্রধান টার্গেট রোহিঙ্গা।

XS
SM
MD
LG